আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দী লোকদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে শনিবার তেল আবিবে কয়েক হাজার ইসরাইলি বিক্ষোভ করেছে। তারা সঙ্কট নিরসনে ইসরাইলি সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনাও করেন। বিক্ষোভে বন্দীদের স্বজন ও বন্ধুরাও ছিলেন।
নিউ ওজ শহর থেকে অপহৃত এক ব্যক্তির সন্তান নোয়াম পেরি বিক্ষোভে বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, আমাকে জয় সম্পর্কে বলবেন না, গাজাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার কথা বলবেন না। একেবারেই বলবেন না। স্রেফ কাজ করুন, তাদেরকে এখনই বাড়িতে ফিরিয়ে আনুন।’
আরেক বিক্ষোভকারী জ্যাক লেভি বলেন, ‘তারা আমাদের বলছে, কাদের দিকে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে।… অথচ তারাই আমাদের দায়িত্বশীল, তারা আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে হামাস ও অন্যরা ২৪০ জনের বেশি লোককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসে। এ সময় প্রায় ১২ শ’ লোক নিহত হয়। এর পর থেকে ইসরাইল অব্যাহতভাবে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে। গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
হামাস বন্দীদের মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দাবি করছে। ইসরাইল কোনোটিই মানতে নারাজ।
এদিকে যুদ্ধবিরতির জন্য সারা বিশ্বে দাবি জোরদার হচ্ছে।
শনিবার আরব ও ইহুদিদের ইসরাইলি বাম ধারার কর্মীরা আলাদা বিক্ষোভ করে তেল আবিবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারা যুদ্ধবিরতি প্রতিবাদ ও আহ্বানের বিরুদ্ধে দমন অভিযান সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
শীর্ষ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রতিবাদকারী দলগুলোকে সাময়িক স্থগিত
যুক্তরাষ্ট্রের একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় শুক্রবার ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দুটি ছাত্র সংগঠনকে হুমকিমূলক বক্তব্য ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান জেরাল্ড রোসবার্গ বলেছেন, ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন ফিলিস্তিন’ ও ‘ইহুদি ভয়েস ফর পিস’ পুরো সেমিস্টারজুড়ে স্থগিত থাকবে।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, দু’টি গ্রুপ বারবার ক্যাম্পাসে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি লঙ্ঘন করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি অনুমোদনবিহীন ইভেন্টে হুমকিমূলক বক্তৃতা ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়।
রোসবার্গ বলেন, দুটি গ্রুপ যদি ক্যাম্পাসের নিয়ম মেনে চলার ইচ্ছা প্রদর্শন করে তখনই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, যাতে করে সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কার্যক্রমগুলো বিঘ্ন ছাড়াই পরিচালিত হতে পারে তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
মার্কিন মিডিয়া জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুটি গ্রুপ আয়োজিত এক বিক্ষোভে অংশ নিতে কলম্বিয়ার শত শত শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। তারা ওয়াশিংটনকে ফিলিস্তিনির ওপর ইসরাইলি হামলার যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেয়ার জোরালো আহ্বান জানায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হামাসকে ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলি অভিযানে ১১,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
কয়েকটি মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরাইলের হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য স্কুলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিক্ষোভকারিরা বিশ্ববিদ্যালয় বর্জন ও ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন করারও দাবি জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে তরুণ আমেরিকানদের এই বিষয় পক্ষ নিতে দেখা গেছে এবং ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন রিপাবলিকানসহ গোষ্ঠীগুলো অনেক মার্কিন ক্যাম্পাসকে ইহুদি-বিদ্বেষের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার অভিযোগ করেছে।
হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে, ছাত্র, অধ্যাপক ও প্রশাসকদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এবং ইহুদি-বিদ্বেষ, ইসলামফোবিয়া এবং বাকস্বাধীনতার হুমকির অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা, এএফপি ও অন্যান্য
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।