লাইফস্টাইল ডেস্ক : হার্টের এনজিওগ্রাম হয় জানি। কিন্তু ব্রেইনের এনজিওগ্রামের সঙ্গে খুব কম মানুষই পরিচিত। এই এনজিওগ্রাম ডিএসএ বা ডিজিটাল সাবট্রাকশন এনজিওগ্রাম নামে পরিচিত।
ব্রেইনের এনজিওগ্রাম কি : মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গে রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত চলাচল করে। এই রক্তনালিতে দেখা দেয় নানা অসুখ। হার্টের রক্তনালিতে ব্লক হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। ব্রেইনের রক্তনালির রোগ বৈচিত্র্যময়। কখনও রক্তনালি বন্ধ হয়, আবার কখন ফেটে যায়। কখনও রক্তনালি নিজের মধ্যে অস্বাভাবিক কানেকশন তৈরি করে। ব্রেইনের রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে যে স্ট্রোক হয়, তাকে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক। ফেটে গেলে যে সমস্যা হয়, তাকে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক। দুটোই মারাত্মক। ব্রেইনের এসব রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে প্রয়োজন পড়ে ব্রেইনের এনজিওগ্রামের।
যেভাবে করা হয় : হার্টের এনজিওগ্রাম যেভাবে করা হয়, ব্রেইনের এনজিওগ্রাম একইভাবে করা হয়; শুধু পদ্ধতিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। ব্রেইনের এনজিওগ্রাম করার জন্য প্রয়োজন পড়ে ক্যাথল্যাবের। যেমনটা প্রয়োজন হয় হার্টের এনজিওগ্রামের জন্য। এনজিওগ্রাম করার আগে রোগী পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার পড়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনও সমস্যা না থাকলে রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর কুচকিতে ক্যানুলার মতো সিথ পড়িয়ে দেওয়া হয়। এটিই মূল অংশ। এ কাজে রোগী কিছুটা ব্যথা পেতে পারেন। তবে তা হাতে ক্যানোলা পড়ানোর মতোই। এর পর নিউরোইন্টারভেনশনিস্ট ওয়ার-ক্যাথেটারের মাধ্যমে ব্রেইনে ডাই দিয়ে ছবি তোলেন। খুব বেশি সময় লাগে না। মিনিট তিরিশেক সময় লাগে।
যে কারণে করা হয় : মস্তিষ্কের এনজিওগ্রাম করা হয় দুটো উদ্দেশ্যে- ১. রোগ নির্ণয় ও ২. মস্তিষ্কের রক্তনালীর চিকিৎসায়
রোগ নির্ণয় : মস্তিষ্কের রক্তনালিতে বেশ কিছু রোগ হয়। যেমন- স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ। রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে দেখা দেয় ইস্কেমিক স্ট্রোক। আমাদের ঘাড়ে থেকে ৪ টি রক্তনালি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। এদের কোনোটির গোড়ায় ব্লক হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। হার্টের রক্তনালির মতো স্ট্যান্ট লাগানো লাগতে পারে। রক্তনালির ব্লক ধরতে প্রয়োজন ডিএসএ-র। মস্তিষ্কের রক্তনালি ফোস্কার মতো ফুলে যেতে পারে, যাকে বলে এনিউরিজম। এনিউরিজম ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ধরনের রক্তক্ষরণকে বলে সাব এরাকনয়েড হেমোরেজ।
এ ক্ষেত্রে এনিউরিজম আছে কিনা, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে প্রয়োজন হয় ডিএসএ। রক্তনালীর জটলা পাকিয়ে যেতে পারে। একে বলে আর্টেরিও ভেনাস ফিস্টুলা বা এভিএম। জটলা পাকানো রক্তনালি ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এভিএম নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন ডিএসএ পরীক্ষা। মস্তিষ্কের মূল রক্তনালিগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। মূল রক্তনালির কাজ করার জন্য নতুন নতুন ছোট ছোট চিকন রক্তনালি তৈরি হতে পারে। একে বলে ময়াময়া রোগ। এটি নিশ্চিত হতে প্রয়োজন পড়ে ডিএসএ’র। অনেকের আবার আঘাতের কারণে দুটো রক্তনালিতে অস্বাভাবিক কানেকশন বা সংযোগ হতে পারে। একে বলে ক্যারোটিড ক্যাভারনাস ফিস্টুলা বা সিসিএফ। এটি নির্ণয় করতে প্রয়োজন ডিএসএ’র। চিকিৎসা দেশেই সম্ভব।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস, ঢাকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।