আবির হোসেন সজল : উত্তরের বিস্তীর্ণ জনপদে মঙ্গা একটি পরিচিত শব্দ। লালমনিরহাটে তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদীর ভাঙনে প্রতিবছরই এ অঞ্চলের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়। মঙ্গা কবলিত এলাকা হওয়ায় নেই কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে সবচেয়ে বিপাকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মশক্তি ইট ভাটার কাজে নিয়োজিত নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দু-মুঠো আহারের যোগান মিলে ইট ভাটায় কাজের মাধ্যমে।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইট ভাটায় কাজ করছেন ৩ হাজার শ্রমিক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম। এসব ইটভাটা বন্ধ হলে ৩ হাজার শ্রমিক দিশেহারা হয়ে পড়বে দুমুঠো আহারের খোঁজে। ইটভাটা বন্ধ হলে তাদের জীবিকা নির্বাহের বিকল্প কোন পথ নেই বলে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা।
এএলবি ভাটার শ্রমিক জসীম উদ্দিন বলেন, ইট ভাটায় কাজ করে পরিবার নিয়ে দু-মুঠো ডাল ভাত খেয়ে থাকি, হামরা মঙ্গা এলাকার মানুষ। নাই কোন শিল্পকারখানা যে কাজ কাম করি খামো। অভাবের তাড়নায় বাপ-মা পড়ালেখা শিখাবার পায় নাই। ইটভাটায় কাজ করিয়া যে টাকা পাই পরিবার বউ বাচ্চা নিয়া সংসার চালাই। তাও ছয় মাস কাজ থাকে ছয় মাস বন্ধ। তার মধ্যে যদি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যায় অনাহারে মরা ছাড়া হামার আর কিছু করার নাই। যদি সরকার ভাটা বন্ধ করতে চায় তবে হামার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে যেন এমন সিদ্ধান্ত না নেয়।
গত ৫ আগষ্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পরে অন্তবর্তীকালিন সরকারের পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট তৈরি করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।
ইটভাটার মালিকেরা মনে করেন, এমন সিদ্ধান্তে ইট ভাটা বন্ধ হলে এর প্রভাব পরবে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজসহ জেলায় চলমান থাকা হাজার কোটি টাকার সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কাজগুলোতে। এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন বঞ্চিত হবে এই জেলার উন্নয়ন কাজের সুফলভোগকারী লাখো জনগন। প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হবে ইটভাটা মালিকরা। এতে বেকার হয়ে পড়বে এ পেশায় নিয়োজিত ৩ হাজার শ্রমিক।
এ বিষয়ে ইট ভাটা মালিক রিবুল ভুঁইয়া বলেন,আসলে আমরা যখন ভাটা নির্মান করি তার আশে পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে কোন স্কুল প্রতিষ্ঠান ছিল না। এখন বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন অনেক স্কুল তৈরি হয়েছে। এমনটি করলে ভালো হতো যেখানে ভাটা রয়েছে সেখানে কোন স্কুল প্রতিষ্ঠা না করা। এটি ভাটা ব্যবসায়ীদেে সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা ভাটা মালিকরা বছর শেষে ৫ লক্ষ টাকা ভ্যাট,ট্রেক্স দেই। আমাদের এখানে অনেক মানুষ কর্ম করে খায়। আমরা তো এখানে একা একা ভাটা করতে পারিনি। আমরা ভাটা নির্মাণ করার সময় সরকার থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখানে অবস্থান করার সার্টিফিকেট দিয়েছেন পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান করার পরে আমরা কি রকম ইনভেস্ট করব এটার জরিপ নিয়েছেন। তবে কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভাটা বন্ধের।এমনটি যদি করা হয় তাহলে আমাদের দিশেহারা হয়ে পড়া ছাড়া আর কিছুই নেই।প্রতিটা ভাটা মালিকদের ব্যাংক থেকে কোটি টাকার উপরে লোন নেওয়া রয়েছে।যদি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয় এসব লোন পরিশোধ করার কোন উপায় থাকবে না।
ভাটা মালিক আতোয়ার রহমান মাঝি বলেন,সরকার যে ইটভাটা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এতগুলো টাকা আমরা ইনভেস্ট করেছি, এতগুলো লোক আমাদের এখানে কর্মসংস্থান করে খায় আমরা আসলে নিঃস্ব হয়ে যাব। এখন সরকার বলছেন ব্লক তৈরির কথা। কিন্তু ব্লক করলে আমরা বালু কোথায় পাবো আমাদের এই সীমান্তবর্তী জেলায় বালু মহাল নেই। আমাদের এই দুরবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের মাঠে মড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন,প্রতি বছরের মত চলতি বছরও ভাটা মালিক থেকে আগাম টাকা করে নিয়ে পরিবারের জন্য খরচ করেছি।এখন ভাটা বন্ধ থাকলে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় আমাদের থাকবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।