জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার লাউতলা খালের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা নির্মাণাধীন ১০ তলা একটি ভবনসহ ৩টি স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শুক্রবার দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি খাল পরিষ্কার করে সংস্থাটির কর্মীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন বিডি ক্লিনের দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
অভিযান শুরুর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বছিলায় অবস্থিত পশ্চিমাঞ্চল পুলিশ লাইন মাঠে (বছিলা ট্রেনিং একাডেমি) ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীদের শপথবাক্য পাঠ করান। সেখানে তিনি বলেন, খালে যারা ময়লা ফেলেন, তাদের মস্তিষ্কে ময়লা আছে। তাদের মনে ময়লা আছে। তারা সুনাগরিক নন। খালে ময়লা ফেলে নিজেদের সুনাগরিক দাবি করা যায় না।
সকাল ১০টার দিকে রামচন্দ্রপুর খাল পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবীদের উৎসাহ দিতে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম হাতে গ্লাভস পরে নিজে খালের ময়লা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েন। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মৃত খালকে জীবিত করতে চাই। এখন কোনো দখলদারকে নোটিশ দেওয়া হবে না। খালের ১০০ ফুটের মধ্যে যা যা পড়বে, সব ভেঙে ফেলা হবে। অবৈধ স্থাপনা ভাঙা না হলে দেখাদেখি আরেকজন খাল দখল করবেন।
বেলা ১১টার দিকে লাউতলা খালের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে ডিএনসিসি। প্রথমে খালের মোহনার জায়গা দখল করে বানানো একটি আধাপাকা ও একটি পাকা স্থাপনা ভাঙা হয়। এরপর শুরু হয় খালের পাড়ে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন ভাঙার কাজ। মেয়রের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান।
ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনটির ৭০ ভাগই খালের জায়গার ওপর বানানো হয়েছে। এ কারণে নির্মাণাধীন ভবনটির অবৈধ অংশ ডিএনসিসি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে।’
প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম জানান, ছয়টি বিশেষ বুলডোজার ও এক্সকেভেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অবৈধ ভবন ভাঙা হয়। আর খালের সীমানায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবন ভাঙার কাজ চলমান থাকবে।
উচ্ছেদ অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ১০টায় খাল পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়। বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে পুরো তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রামচন্দ্রপুর খালের ময়লা পরিষ্কার করা সম্পন্ন হয়। বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীরা সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা কাজ করার পর নামাজ ও দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি নেন। বিরতি শেষে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে পুনরায় কাজ শুরু করে তারা বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে লক্ষ্য অনুযায়ী পুরো খাল পরিষ্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ডিএনসিসির মেয়র স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে পরিষ্কার অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ময়লা ও দখলমুক্ত করে রাজধানীর খালগুলোকে আগের রূপে ফেরানো হবে। পরিবেশকে আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি। তাই এখন পরিবেশ প্রতিশোধ নিচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, রাস্তাঘাট ডুবে যায়। কারণ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে না। ময়লা ফেলে খালগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। খাল পুনরুদ্ধারে আমরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে মিরপুর প্যারিস খাল, সূতিভোলা খালে অভিযান চালিয়েছি। গত ২ বছর আগে এ মোহাম্মদপুরেই লাউতলা খালে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে গাছ লাগিয়ে দিয়েছি। পাশেই বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে একটি মাঠ নির্মাণ করে দিয়েছি। আজ রামচন্দ্রপুর খালে অভিযান শুরু করেছি। এটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও প্রায় ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল। খালের সীমানার ভেতরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে খাল দখলমুক্ত করে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছি। কিন্তু মানুষ খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করছেন না। সবাই বলেন জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কিছু করে না। এলাকাবাসীকে বলতে চাই, আপনারা যদি খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করেন তাহলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। শুধু সিটি করপোরেশন না, আপনাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা খালের ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছি। এখন খালের পাড়ে বাসিন্দাদের দায়িত্ব হবে ময়লা না ফেলা।’
অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন-ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর রোকসানা আলম, শাহিন আক্তার সাথী প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।