আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হয়েও এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমন্ত্রণ পেয়েছে ফিলিস্তিন। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফর করবেন।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হলেও পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃত নয়। ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তাদের ভোটাধিকারও নেই।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা কী
ফিলিস্তিন বর্তমানে ভ্যাটিকানের মতই জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।
২০১২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় এবং জাতিসংঘে তাদের অবস্থানকে ‘পর্যবেক্ষক সত্তা’ থেকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে উন্নীত করে। এর পক্ষে ভোট পড়ে ১৩৮টি, বিপক্ষে ৯টি এবং ভোটদানে বিরত থাকে ৪১টি দেশ।
এ বছর কী হচ্ছে?
পর্যবেক্ষক মর্যাদাপ্রাপ্তির পর থেকেই স্থায়ী সদস্য পদের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছিল জাতিসংঘে ফিলিস্তিন মিশন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সেই তৎপরতার গতি আরও বৃদ্ধি পায়।
জাতিসংঘ সনদ অনুসারে, কোনো দেশ যদি এই বিশ্ব সংস্থার সদস্য হতে চায়, সেক্ষেত্রে প্রথমে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ফোরাম নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ পেতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে সেই সুপারিশ যুক্ত হলে দেশটিকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি সাধারণ পরিষদ বিবেচনা করতে পারে।
গত এপ্রিলে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য করে নেওয়ার প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে আটকে যায় ভিটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে। ঠিক পরের মাসেই সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনের আবেদনের পক্ষে জোরালো সমর্থন দেয় এবং ফিলিস্তিনের সদস্য পদের প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।
সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে ফিলিস্তিনিদের কিছু বাড়তি অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হল সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে জাতিসংঘের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসার অধিকার পাচ্ছে দেশটি।
কিন্তু সাধারণ পরিষদের সেই প্রস্তাবে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সাড়া না দেওয়ায় ফিলিস্তিন এখনও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হয়েই আছে।
নতুন সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ কিভাবে গ্রহণ করে?
জাতিসংঘে যোগদানে ইচ্ছুক দেশগুলো সাধারণত জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে একটি আবেদন করে। তিনি বিষয়টি মূল্যায়ন এবং ভোটাভুটির জন্য নিরাপত্তা পরিষদে পাঠন।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের একটি কমিটি প্রথমে দেখে, আবেদনকারী দেশ পূর্ণ সদস্য হওয়ার সব শর্ত পূরণ করছে কি না। সেরকম হলে ওই কমিটি বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির জন্য তুলতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে নয়টি দেশ পক্ষে ভোট দিলে এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীনের মধ্যে কোনো দেশ ভিটো না দিলে প্রস্তাবটি পাস হয়।
নিরাপত্তা পরিষদ কোনো দেশের পূর্ণ সদস্য পদের আবেদনে সমর্থন দিলে বিষয়টি সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে যায়। আর সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেলেই চলে।
সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন না পেলে কোনো দেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে পারে না।
নিরাপত্তা পরিষদের ভিটো ক্ষমতাধীরা পাঁচ দেশের একটিও যদি আপত্তি তোলে, তাহলে সেই প্রস্তাব আর এগোবে না।
২০১১ সালে ফিলিস্তিনের আবেদনের ফল কী হয়েছিল?
ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছিল ২০১১ সালেই। নিরাপত্তা পরিষদের মূল্যায়ন কমিটি সে সময় কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। ওই প্রস্তাব আর নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটিতেও যায়নি।
কূটনীতিকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাসের জন্য ন্যূনতম যে নয়টি ভোটের প্রয়োজন, ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে তার ঘাটতি ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার প্রস্তাবে তারা ভিটো দেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।