মো. আব্দুল ওহাব : মসজিদ আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ। এখানে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, রাজা-বাদশাহ, আলেম-গাইরে আলেম সবারই আল্লাহর ইবাদত করার সমান অধিকার। যারা আগে উপস্থিত হবেন তারা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবেন। তারা প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে বেশি সওয়াব লুফে নেওয়ারও চেষ্টা করবেন—এটাই স্বাভাবিক।
কেননা প্রথম কাতারের মর্যাদা অন্যান্য কাতারের চেয়ে অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যদি মানুষ জানতে পারত- আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ে কী ফজিলত রয়েছে, আর লটারি ছাড়া সেটি পাওয়া সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফজিলত রয়েছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগে আসত। (বুখারি: ৫৯০)
কেউ যদি প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ফজিলত অর্জন করতে চায়, তার উচিত আগে আগে মসজিদে চলে আসা। কারণ নামাজের জন্য অপেক্ষা করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত।
যেমন হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার নামাজের স্থানে থাকে তার অজু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতাগণ এই বলে দোয়া করেন যে, হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন; হে আল্লাহ, আপনি তার ওপর রহম করুন। আর তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তির নামাজই তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, সে নামাজে রত আছে বলে পরিগণিত হবে। (বুখারি, হাদিস: ৬৫৯)
তবে মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকলে আগে মসজিদে চলে আসা উচিত। পরে এসে সুবিধামতো জায়গায় বসার জন্য মুসল্লির ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে আগানো মসজিদের আদব ও ইসলামি শিষ্টাচারের পরিপন্থি কাজ।
একবার আল্লাহর রাসুল (স.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক লোক সবার ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে আসছিল। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, বসো! তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে। (আবু দাউদ: ১১১৮)
এছাড়াও ফেকাহবিদ আলেমরা বলেন, মসজিদে শুধু ইমামের স্থান নির্ধারিত। এছাড়া মুয়াজ্জিন বা অন্য কারও স্থান নির্ধারিত নয়।
আমাদের সমাজে এই কাজটি বেশি দেখা যায়। আমরা দেখে থাকব যে এলাকার মসজিদে এলাকার কোনো বড় রাজনৈতিক নেতা কিংবা কোনো দানবীর মসজিদে নামাজের জন্য উপস্থিত হলে তার জন্য সামনে কাতারে জায়নামাজ বিছানো হয় এবং সে সবার ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে যায়।
আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে পরেন তিনি শিক্ষক, ভিসি, প্রোক্টর, প্রোভোস্ট কিংবা হাউস টিউটর মসজিদে আসলেও একই চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু এটা কোনো ইসলামিক শিষ্টাচার নয় বরং ইসলামের পরিপন্থী কাজ। মানুষের ঘাড়ের ওপর দিয়ে আসার কারণে মানুষের অন্তরে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। এ কারণেই রাসুল (স.) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন।
তাই আমাদের উচিত মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ফজিলত ও নামাজের জন্য অপেক্ষা করার ফজিলত অর্জন করার জন্য আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া। আর মসজিদ যেহেতু আল্লাহর ঘর, এখানে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সবাই সমান। সবাই আল্লাহর গোলাম।
এখানে কারো জন্য মসল্লা বিছিয়ে জায়গা দখল করা, অন্য কেউ সেখানে বসতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া মারাত্মক অন্যায়। মসজিদে যে যত আগে আসতে পারবে, সে তত সামনে বসার অধিকার রাখবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।