লাইফস্টাইল ডেস্ক : শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীব থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে আমরা সহজে সংক্রমিত হয়ে পড়ি।
সেক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে ভেষজ জাতীয় উপাদান। এসব থেকে যে ইমিউনোমোডুলেটর পাওয়া যায় তা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শরীরকে উপযোগী করে তোলে।
এমনই একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো তেজপাতা। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
তেজপাতার ভেষজ গুণ শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। পায়েস, পোলাও, বিরিয়ানি থেকে শুক্তো কিংবা ডাল, ফোড়নে একটি তেজপাতা দিলেই রান্নার স্বাদ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এত গুণের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেজপাতার কদর রয়েছে।
জাদুকরী তেজপাতায় রয়েছে কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ই, সি ও ফলিক অ্যাসিডসহ উপকারী নানা উপাদান। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, হার্টের সমস্যা রুখতে, ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করতেও ভীষণ উপকারী।
তেজপাতায় জৈব যৌগের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
তেজপাতা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য এটি খুবই কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ১ থেকে ৩ গ্রাম তেজপাতা খেলে রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে।
গবেষণায় দেখা যায়, তেজপাতা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যানসারের কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী, তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর।
ত্বকে নানা ধরনের ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ হয়। একটি করে তেজপাতা চার কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে খেতে পারেন। দিনে চার-পাঁচ বার এই পানি খেলে সুফল পাবেন।
তেজপাতার প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর। তেজপাতায় রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান, যা প্রদাহ দূর করে। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল উপকারী। ফোঁড়ার সমস্যা হলে তেজপাতা বেটে তার উপরে প্রলেপ দিন। ব্যথাও কমবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যাবে।
তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন এবং গলা খুশখুশ ও কাশি সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমত্কারভাবে সাহায্য করবে।
চার-পাঁচটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানিতে যেন খুব বেশি গরম না হয়।
শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অনেক দিন ধরে। কিডনিতে পাথর থাকলে তেজপাতা ফোটানো পানি খান। কিডনিতে পাথর দূর করতে বেশ কার্যকর। প্রস্রাবের রং হলুদ আকার ধারণ করলে গরম পানিতে তেজপাতা দুই ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপরে ছেঁকে নিয়ে দু-তিন ঘণ্টা অন্তর পানিটি পান করুন। সমস্যা কমবে।
ব্রণের সমস্যায় চন্দন আর তেজপাতা একসঙ্গে বেটে মুখে লাগাতে পারেন। দাগ, ছোপ থেকে রেহাই পাবেন। ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও সতেজ। এছাড়া, গায়ের দুর্গন্ধ কমাতেও তেজপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তেজপাতার নির্যাস ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা দূর হতে পারে। খুসকি আর চুলের রুক্ষতা কমাতেও জবাব নেই এই পাতার।
চুলে শ্যাম্পু করার পর তেজপাতার পানি ব্যবহার করুন। কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে পানি চুলায় গরম করতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের খুশকি দূর হয়। একইসঙ্গে চুল পড়াও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। দাঁতকে সাদা ও সুস্থ রাখতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। কফি, চা, তামাক, অ্যালকোহল- এসবের কারণে যদি দাঁত হলুদ হয়ে যায়, তাহলে শুকনো তেজপাতা ও শুকনো কমলার খোসা গুঁড়ো করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করবেন। এতে দাঁত সাদা ও ঝকঝকে হয়।
তেজপাতা পুড়িয়েও পাওয়া যায় বেশ কিছু উপকার। ছাইদানিতে বেশ কয়েকটি তেজপাতা রেখে দশ মিনিট ধরে পোড়াতে হবে। তেজপাতার মধ্যে থাকা তৈল-জাতীয় উপদানগুলো পোড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়ায়। এই পোড়া গন্ধ মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।