লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্মার্টফোনেই ক্যানসার, যক্ষ্মার মতো জটিল রোগগুলির বাড়া-কমার ওপর নজর রাখতে সক্ষম! কেমোথেরাপি বা ওষুধে ক্যানসার কতটা কী সারছে, বা আদৌ সারছে কি না, বা কতটা দ্রুত বাড়ছে, সব সময় আমার-আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনই এবার তা জানিয়ে দেবে! সেই মোবাইল ফোন অ্যাপও বাজারে আসছে শিগগিরই।
ডাক্তার যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন যক্ষার সংক্রমণ রুখতে, যক্ষার জীবাণু তাকেই রুখে দিচ্ছে কি না বা শরীরে ক্যানসার কোষগুলির বাড়-বৃদ্ধি রোখার জন্য যে কেমোথেরাপি করা হচ্ছে বা ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন রোগী নিয়মিত, নিজেকে দ্রুত বদলে নিয়ে (মিউটেশন বা অভিযোজন) ক্যানসার কোষগুলিই সেই কেমোথেরাপি বা ওষুধের ‘বিষ’কে নির্বিষ করে দিচ্ছে কি না, এবার সেই নজরদারিটা চালাবে আমার-আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনই। আমাদের প্রত্যেকের শরীরে যে আলাদা আলাদা জিন-সজ্জা (জিন সিকোয়েন্সিং) বা ডিএনএ’র গঠন (ডিএনএ সিকোয়েন্সিং) রয়েছে, তার চেহারা আর সেই চেহারায় কখন, কেমন ‘রং-বদল’ হচ্ছে, তার ওপর ‘চোখ’ রেখেই এবার স্মার্টফোন জানিয়ে দেবে, ওষুধে কাজ হচ্ছে কি না ক্যানসার বা যক্ষা রোগীদের।
রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়া গবেষণা পত্রটি দু’দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-কমিউনিকেশন্স’-এ। ওই গবেষণা পত্রটিই সন্ধান দিয়েছে এই আশ্চর্য প্রযুক্তির। ওই যন্ত্রটি বানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্টকহলম বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ওই গবেষক দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এক ভারতীয় মহিলার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শোভা তুলে।
এই প্রযুক্তির সুবিধাটা কোথায়?
এক প্রশ্নের জবাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা শোভা তুলে ই-মেলে লিখেছেন, ‘ক্যানসার বা যক্ষ্মার মতো রোগগুলিকে যে বিশেষ কোনো একটি ওষুধ বা কেমোথেরাপি করে রোখা যাচ্ছে না, তার অন্যতম প্রধান কারণ, রোগীর দেহের জিন-সজ্জা বা ডিএনএ অণুর গঠনই নির্দিষ্ট সময় অন্তর দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আর সেই বদলে যাওয়াটা নির্ভর করছে কার ওপর, জানেন? ওষুধের ‘বিষ’কে কী ভাবে ক্যানসার কোষগুলি নির্বিষ করে দিচ্ছে বা তাকে অকেজো করে দিচ্ছে যক্ষার জীবাণু, তার ওপর নির্ভর করেই রং বদলে যাচ্ছে জিন-সজ্জার বা বদলে যাচ্ছে ডিএনএ অণুর গঠন।
তাই জিন-সজ্জার ওপর নজরদারিটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি ক্যানসার, যক্ষার মতো রোগগুলির বাড়া-কমার হিসেব রাখার জন্য। এতদিন সেই কাজটা ডাক্তাররা করতেন বহু দূরের কোনও ল্যাবরেটরিতে ‘স্যাম্পল’ পাঠিয়ে। জিন-সিকোয়েন্স পরীক্ষা করার ল্যাবরেটরি খুব সুলভ নয়। সেখানে পরীক্ষা করানোর অনেক হ্যাপা, খরচও প্রচুর। অত খরচের জন্য সব ক্যানসার বা যক্ষা রোগীর পক্ষে নিয়মিতভাবে তা পরীক্ষা করানো সম্ভবও হয় না। কিন্তু এ বার সেটা খুব সহজেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে করা যাবে। ’
হার্ভার্ড থেকে শোভা লিখেছেন, ‘ওই স্মার্টফোনগুলির থ্রিডি-প্রিন্টেড বাইরের দিকটায় থাকবে দু’টি লেসার, একটি সাদা এলইডি, একটি জোরালো লেন্স আর একটি ফিল্টার। ওই অনুষঙ্গগুলিই স্মার্টফোনের ক্যামেরাটাকে একটা মলিকিউলার মাইক্রোস্কোপে বদলে দেবে। তার মানে, যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোনও পদার্থের অণুগুলিকে দেখা যায়। ’
শোভার জবাব, ‘ডাক্তাররা রোগীর দেহ থেকে যে স্যাম্পল নেবেন, তাতে একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে দেবেন। তার মধ্যে ফ্লুরোসেন্ট আলোর মতো জ্বলতে থাকা কিছু প্রোটিন অণুও ঢুকিয়ে দেয়া হবে। জিন-সজ্জা কী ভাবে রং বদলাচ্ছে, তা ওই ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলির অবস্থান দেখেই বোঝা যাবে। এবার স্মার্টফোনের যে ক্যামেরাটিকে মলিকিউলার মাইক্রোস্কোপ বানানো হয়েছে সদ্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে, সেই ক্যামেরা দিয়েই জিন-সজ্জার ওই রং-বদলে’র ছবি তুলে তা বিশ্লেষণ করা যাবে ঘরে বসেই। তার জন্য আর দূর-দূরান্তে ছুটতে হবে না। ’
নতুন যন্ত্রগুলির জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বাড়তি খরচ হতে পারে কতটা?
আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘খুব বেশি হলে ৫০০ মার্কিন ডলার বা ৩৪/৩৫ হাজার টাকা দাম পড়বে ওই যন্ত্রগুলির। তবে বাজারে নতুন অ্যাপ এসে গেলে সেই খরচ আরও অনেকটাই কমে যাবে।’ সূত্র: আনন্দবাজার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।