লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমরা ক্যারিয়ার নিয়ে খুব সচেতন। বিশেষ করে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে নিজেকে ক্যারিয়ারে নিজেকে এগিয়ে রাখাটা যুবদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ক্যারিয়ার গঠন করার সময় ও তারপর নিজেকে টিকিয়ে আর এগিয়ে রাখার জন্য কী করতে হবে তা আমরা জানি? আসুন এক নজরে দেখে নিই।
নিজেকে যাচাই করতে শিখুন/ সেলফ অ্যাসেসমেন্ট:
আপনাকে যে যাই বলুক না কেন, আপনি যদি নিজেকে সময় দেন এবং সঠিকভাবে সেলফ অ্যাসেসমেন্ট করতে পারেন, তবেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মধ্যে কী কী বিষয় আছে বা কিসের ঘাটতি আছে। নিজেকে যাচাই – এর কিছু নিয়ম আছে-
১. কোনও কাজ করার সময় নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই কাজটি আমি কতটুকু জানি?
২. আমাকে এই কাজটি কীভাবে করতে হবে?
৩. কাজটি করার পর যাচাই করতে হবে কোথায় কোথায় ভুল করলাম এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন করতে হবে। যেমন কোথাও ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি সেই পদের জন্য যোগ্য কিনা, সেই কোম্পানির জব ডেসক্রিপশন অনুযায়ী নিজের মধ্যে যাচাই করে দেখুন যে কোন কোন বিষয়গুলোর আপনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল রয়েছে? অর্থাৎ সেলফ অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে আপনাকে ঠিক করতে হবে যে, নিজের মধ্যে কোন কোন অভ্যাস অর্জন করতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো বর্জন করতে হবে।
আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক/দক্ষতা শিখুনইন্টারপার্সোনাল স্কিলস হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে চিন্তাভাবনা, ধারণা, অনুভূতি এবং আবেগের সরাসরি বিনিময় প্রক্রিয়া। ঘরে বাইরে, স্কুল কলেজ, অফিস অথবা সামাজিক মাধ্যমে যার ইন্টারপার্সোনাল স্কিল যত ভালো সে তত সফল। ইন্টারপার্সোনাল স্কিলকে পিপলস স্কিলও বলা হয়।
অনেক সময় দেখবেন আপনি আপনার এক বন্ধুর কাছে একটি বই চেয়েছেন কিন্তু সে আপনাকে দেয় নি। অথচ অন্য আরেক বন্ধুকে বইটি দিয়েছে। এখানেই হচ্ছে তার সঙ্গে আপনার ইন্টারপার্সোনাল স্কিলের তারতম্য। সেলফ অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারপার্সোনাল স্কিল উন্নতি করতে পারেন। ইন্টারপার্সোনাল স্কিল ইন্টারভিউ প্রসেসে আপনাকে সহায়তা করতে পারে এবং আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ইন্টারপার্সোনাল স্কিল যেমন অ্যাকটিভ লিসেনিং, রেসপনসিবিলিটি, ডিপেনড্যাবিলিটি, ফ্লেক্সিবিলিটি, এম্প্যাথি। অন্যভাবে বলা যায় যে, ইন্টারপার্সোনাল স্কিল কমিউনিকেশন স্কিলের মধ্যেই পড়ে।
নেতৃত্বের গুণ অর্জন করুন
একটু মনে করে দেখুন তো আপনার স্কুল-কলেজ বা অফিস আদালতে এরকম হয়েছে কিনা যে কোনও বিষয়ে যখন কারোর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, তখন কোনও এক ব্যক্তি হুট করে সবার সামনে এসে খুব সাবলীলভাবে কথা বলছে এবং আপনার পুরো বিষয়টির দায়িত্ব নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছে। আপনি আবার ওই ব্যক্তিকে দেখবেন পিকনিক কমিটির অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করছে, কখনও দেখবেন কারোর দুঃসময়ে তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে, মোটিভেট করছে। এটাই হচ্ছে লিডারশিপ কোয়ালিটি/নেতৃত্বের গুণ।
পরিকল্পনা করতে শিখুন
প্রবাদ আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। ঠিক তাই কোনও কাজ করার আগে তার সঠিক প্যানিং করা প্রয়োজন, সেটা আপনার এডুকেশনের পরিকল্পনাই হোক বা ক্যারিয়ারের। অনেক সময়ে আমাদের ভুল পরিকল্পনার জন্য আমাদের অর্থ, সময় এমনকি জীবনও নষ্ট হয়। তাই সঠিক পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে আমাদের জীবনের সফলতা। সাংগঠনিক সাফল্যে পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কিত যথেষ্ট অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কাজে মনকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্রেনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ইমোশনাল হয়ে কখনও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। অফিস যাওয়ার পূর্বে দিনের পরিকল্পনা যদি করা যায়, তাহলে প্রায়োরিটি বেসিসে কাজগুলো করতে সুবিধা হয়। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে পিসির নোটপ্যাড অথবা স্টিকি নোটে লিখে রাখতে পারেন। পরিকল্পনা করে কাজ করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন এভাবে কাজ করলে কাজের স্ট্রেস কমে, সময়ের অপচয় কম হয়, কাজের রেজাল্ট ভালো আসে। এছাড়াও পরিকল্পনা আপনাকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলতে পারে। পরিকল্পনা আপনাকে মননশীলতা বিকাশে সহায়তা করে এবং সর্বোপরি আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করুন
অর্গানাইজেশনাল স্কিলস আমাদের সাহায্য করে কর্মক্ষেত্রে ভুলগুলো দূর করে কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। কর্মক্ষেত্রে যে যত বেশি অর্গানাইজডভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত তার কাজ তত সুন্দর ও সফল হয়। ডিসঅর্গানাইজড মানুষকে ঘরে-বাইরে কোনও মানুষই পছন্দ করে না। যারা দক্ষ, উৎপাদনশীল এবং কাজ গুছিয়ে ডেডলাইনের মধ্যে শেষ করতে পারে তারাই সফল হয় কর্মক্ষেত্রে। করছে। অর্গানাইজেশনাল স্কিলস অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্কিল, যা আপনাকে কর্মক্ষেত্রে গুরুতর ভুলগুলো এভয়েড করতে সহায়তা করবে, সময় বাঁচাবে, ডেডলাইনের মধ্যে কাজ সম্পাদন করতে সহায়তা করবে, মাল্টিটাস্কিং অ্যাবিলিটি গ্রো করবে। একটা সহজ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আপনার অফিসের স্টেপলার মেশিন, রেগুলার ফাইলগুলো এবং আরও প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যদি গুছানো না থাকে, কাজ করার সময় আপনি কিন্তু সেইগুলো খুঁজতে গিয়ে কাজে দেরি করে ফেলবেন। এক পর্যায়ে মেজাজ খারাপ হবে, যার ইমপ্যাক্ট আপনার পারফরম্যান্সের ওপর পড়বে, অফিস কলিগদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে এবং অফিস এনভায়রনমেন্ট নষ্ট হবে। তাই অর্গানাইজেশনাল স্কিল ছাত্রজীবন থেকেই ডেভেলপ করা উচিত এবং নিজের ঘরের কাজ দিয়ে তা শুরু করা যেতে পারে। অফিসের কাজগুলোকে সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিন। তাছাড়া কাজের যদি ডেইলি, মান্থলি এবং ইয়ারলি ওয়ার্ক ক্যালেন্ডার তৈরি করেন, দেখবেন আপনার কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।
কর্মক্ষেত্রে বসদের পার্সোনাল নেগেটিভিকে ইগনোর করুন
কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র ও জুনিয়র সহকর্মীরা মিলেই প্রোজেক্টের বা সংঘটনের উন্নয়নে কাজ করে, একজন সিনিয়র সহকর্মীর যে অভিজ্ঞতা বা কর্ম দক্ষতা থাকে তা অনেক ক্ষেত্রে একজন জুনিয়র সহকর্মীর নাও থাকতে পারে। আবার একজন জুনিয়র সহকর্মীর যে আপডেটেট নলেজ বেসড দক্ষতা থাকে, এগুলোর কোনোটাকে ইগনোর না করে রির্ভাস মেন্টরশিপের মাধ্যমে কর্মক্ষেকে আরও বেগবান করতে হবে। এখানে যদি কোনও সিনিয়র দ্বারা আপনি পার্সোনাল চাপ অনুভব করেন, তবে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে কোনোভাবেই কমিউনিকেশন গ্যাপ করা যাবে না, অফিসের দরকারি কমিউনিকেশন তাদের ইমেল কিংবা মেসেজ দিয়ে আপডেট করে রাখুন। কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু বস আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করতে পারে। তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। তাদের সাথে বির্তকে না জড়িয়ে তাদের কথা শুনুন। তার ভালো বিষয়গুলো আমলে নিন, বাকিগুলো এড়িয়ে চলুন।
ইউসুফ আলি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।