ফেনীর সোনাগাজীতে ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেয়া নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপজেলা ছাত্রদলের দুই গ্রুপ। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পৌরসভার জিরো পয়েন্ট থেকে তাকিয়া রোড এলাকায় ঘণ্টাব্যাপি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী। পরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, ছাত্রদল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে সোনাগাজী সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে মিরাজ ও রায়হান নামে দুই ছাত্রদল কর্মী আহত হয়। এই ঘটনায় কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওসমান গনি জিহাদ উপজেলা ছাত্রদল নেতা পিয়াসের অনুসারী ওমরকে দায়ী করেন। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার জিরো পয়েন্টে পৌর, কলেজ ও উপজেলা ছাত্রদলের ব্যানারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভুঞা হামলাকারী ওমরকে ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করে তাকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য ছাত্রদলের কয়েক নেতাকে দায়ী করে ফের হামলার চেষ্টা হলে ধরে এনে জিরো পয়েন্টে পিটানোর ঘোষণা দেন। রাতে আহত ছাত্রদল কর্মী রায়হান বাদী হয়ে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এরপরই দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় মামলার প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নুর ও উপজেলা ছাত্রদল নেতা পিয়াসের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম বাজারে দিকে যেতে থাকে। মিছিলটি তাকিয়া রোডের মাথায় পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্র ইট-পাটকেল নিয়ে একে-অপরকে হামলা করে। পরে সেনাসদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলায় আহত উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহীন, কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব জিহাদ ভূঁইয়া, উপজেলা ছাত্রদল নেতা দাউদুল ইসলাম, এনায়েত উল্যাহ, আজিজুল হক, কামরুল ইসলাম, আবু ইউছুফ, রাইসুল ইসলামসহ কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা মিরাজ ও রায়হানের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদল নেতাদের উপর হামলা করেছে। এতে ছাত্রদলের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নুর বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে মঙ্গলবার তারা প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমরা প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য সচিব ওসমান গনি জিহাদ বলেন, তারা দুই দিন আগে আমাদের দুই কর্মীকে পিটিয়ে আহত করার পর আজকে ফের মিছিল নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের আটকের বিষয়ে পুলিশ তৎপর।
ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র মারামারির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।