জুমবাংলা ডেস্ক : কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় কলার আড়তগুলোতে বিষাক্ত কার্বাইডজাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে কাঁচা কলা পাকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। কলায় বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
জানা গেছে, কার্বাইড এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরনের যৌগ, যা বাতাসে বা জলীয় দ্রব্যের সংস্পর্শে এলেই এসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি প্রয়োগ করার সময় এসিটিলিন ইথানল নামক পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এ কার্বাইড কাঁচা কলার ওপর প্রয়োগ করলে কলাকে কাঁচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। এটি কলার ওপর প্রয়োগ করলে কলা ১২ ঘণ্টার মধ্যে সবুজ রং বদলে হলুদ রং ধারণ করে। কলাকে তাড়াতাড়ি বিক্রয় উপযোগী করতেই অসাধু ব্যবসায়ীরা কলাতে রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। ফলে বিষাক্ত এসব রাসায়নিক মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রাসায়নিকের প্রভাবে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, কলার আড়তদাররা রাসায়নিক ব্যবহার করে কাঁচা কলাকে অল্প সময়ে পাকিয়ে বিক্রয় উপযোগী করে তোলেন। রাসায়নিক ব্যবহৃত এসব কলা আমরা কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। এসব কলা আমাদের পরিবারের সদস্যরা খাচ্ছে। এতে আমার পরিবারসহ উপজেলার মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মাইনুদ্দিন বলেন, শুনছি বাজারের কলা ওষুধ দিয়ে পাকায়। এসব কলা খেলে অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। এখন সবকিছুতেই ভেজাল। যারা এ ধরনের ভেজাল কাজ করছে তারাও কোনো না কোনোভাবে ভেজালের শিকার হচ্ছেন। নিজেদের নৈতিকতার উন্নয়ন না হলে এসব সমস্যার সমাধান দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
কথা হয় কলার আড়তের মালিক জাহাঙ্গীর আলম মিয়াজির সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কলার ব্যবসা করছি। এসব কলা কাঁচা অবস্থায় মেহেরপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান থেকে কিনে আনি। আমি কলা পাকাতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করি না। তবে কাঁচা কলা বিক্রয় উপযোগী করতে কলা জাগ দেই। জাগ দিলে কলা ৩-৪ দিনের মধ্যেই পেকে বিক্রয় উপযোগী হয়ে ওঠে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন জানান, কার্বাইড মানব দেহের জন্য একটি ক্ষতিকর পদার্থ। কার্বাইডযুক্ত কলা বা অন্য কোনো ফল খেলে দীর্ঘ মেয়াদী নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা এবং লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে। বিষাক্ত পদার্থের বিষ ক্রিয়ার ফলে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমি দুবার গিয়েছি অভিযানে। তাদেরকে ঘটনস্থলে না পেয়ে ডাকিয়ে এনে সতর্ক করেছিলাম। এ সপ্তাহে আবারও যাব। যারা কেমিক্যাল মিশিয়ে কলা বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।