লাইফস্টাইল ডেস্ক : সংক্রামক ডায়রিয়া রোগের জন্য মূলত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আর পরজীবী দায়ী। শিশুদের ক্ষেত্রে রোটা, অ্যাডিনো, অ্যাস্ট্রো, নরওয়াক নামের বিভিন্ন ভাইরাস ডায়রিয়া করে থাকে। এদের মধ্যে রোটা ভাইরাস খুব বেশি মাত্রায় ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা ঘটিয়ে থাকে।
শীতকালের দিকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। দুই বছরের নিচের শিশুরা, বিশেষ করে যারা বুকের দুধ পায়নি তারা তীব্র পানিশূন্যতায় ভোগার আশঙ্কায় থাকে। আক্রান্ত রোগীর মলের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পানি বা খাবারে মিশে এ ভাইরাসটি নতুন শিশুকে আক্রান্ত করে।
আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের কোষের বাইরের দিকে ‘ভিলাই’ নামে কিছু রোঁয়া থাকে। এরা একদিকে লবণ আর পানি রক্তে প্রবেশে সহায়তা করে আবার কিছু শর্করা হজমেও কাজ করে। ভাইরাসগুলো অন্ত্রে ঢুকে দুয়েক দিনের মধ্যে এই ভিলাইকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে মলে লবণ আর পানি বেড়ে যায়। অন্যদিকে হজম না হওয়া শর্করাও প্রচুর পানি টানতে থাকে। ফলে শুরু হয় প্রচ- পাতলা পায়খানা। সঙ্গে থাকে হালকা জ্বর আর বমি। ঠিকমতো পানি বা স্যালাইন না পান করলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এই অসুস্থতা সপ্তাহখানেক থাকতে পারে। আগে থেকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সমস্যা বেশি গুরুতর হতে পারে।
বয়স আর পায়খানার বর্ণনা শুনে ভাইরাসঘটিত ডায়রিয়া বোঝা যায়। পায়খানা পরীক্ষা করে কোনো রক্ত বা জীবাণু না পাওয়া ভাইরাস ইঙ্গিত করে। তবে কারও তীব্র প্রলম্বিত জ্বর, একটানা অতিরিক্ত বমি, রক্ত পায়খানা হলে অন্য জীবাণু সন্দেহ করতে হবে।
পর্যাপ্ত তরল খাবার খেয়ে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করাই ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার চিকিৎসা।
শিশুদের জন্য এই তরল হতে পারে বুকের দুধ, খাওয়ার স্যালাইন, ফলের রস, ভাতের মাড়, চিড়া পানি প্রভৃতি। পানিশূন্যতা তীব্র হলে রক্তে স্যালাইন দেওয়া হয়। রক্তে এসিড বেড়ে যাচ্ছে কিনা চিকিৎসক এটাও দেখেন। জিঙ্ক সিরাপ, বমির ওষুধ, ল্যাক্টোজ মুক্ত দুধের কথা বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে। এন্টিবায়োটিক বা এন্টিভাইরাল ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই।
রোটা ভাইরাসের বিভিন্ন সেরোটাইপ দিয়ে জন্মের পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু প্রতিবছর আক্রান্ত হতে পারে। তবে পরবর্তী সংক্রমকগুলো কম গুরুতর হয়। বুকের দুধ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পরিষ্কার হাতে বচ্চাকে লালন-পালন করে ভাইরাসকে কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। তবে রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন রয়েছে। জীবন্ত ভাইরাসকে অকেজো করে এই টিকা তৈরি হয়। জন্মের দেড় মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যে এক মাস অন্তর দুই ডোজের মনোভ্যালেন্ট এই টিকা মুখে খেতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুখে খাওয়ার প্যান্টাভ্যালেন্ট আরেকটি টিকা রয়েছে, যার ডোজ তিনটি, দুই, চার আর ছয় মাস বয়সে।
অভিভাবকের কাছ থেকে এই টিকাবিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন খুব পেয়ে থাকি। তাদের জন্য বলে রাখি, এই টিকা রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে ৮৫% কার্যকর। এটি শিশুর ডায়রিয়াজনিত জটিলতা কিংবা প্রলম্বিত হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪২% কমিয়ে দেয়। তবে এর পরেও রোটা ছাড়া অন্যান্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী দিয়ে ডায়রিয়া হতেই পারে। শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া আর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি জোর দিতেই হবে। তবে সবচেয়ে দায়ী এই রোটা ভাইরাসকে টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।