জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ টেকসই ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে খরচ ও শ্রম কমাতে চীনা বহুবর্ষজীবী ধান চাষ করতে পারে।
চীনের ইউনান প্রদেশের মেনহাই কাউন্টির ডেপুটি মেয়র কং ইয়াং সম্প্রতি সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি দলকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যদি খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো বাড়াতে চায়, আমরা আমাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রস্তুত।’
চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট কয়েক বছর আগে বহুবর্ষজীবী ধান চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
ইউনান ক্রপ ভ্যারাসিটি অ্যাপ্রুভাল কমিটি ২০১৮ সালে এটিকে অনুমোদন দিয়েছে এবং জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এটিকে একটি আন্তর্জাতিক কৃষি উদ্ভাবন প্রযুক্তি হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কৃষি বিদ্যালয় পেরিনিয়াল রাইস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ধান গবেষণা কেন্দ্রের মতে, বন্য প্রজাতির ধানের রাইজোম বৈশিষ্ট্য, দীর্ঘজীবী ধান (ওরিজা লংস্টিমিনাটা) এবং বিভিন্ন শস্য ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলো ব্যবহার করে বহুবর্ষজীবী ধান প্রযুক্তি’র জাতগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকেরা শুধুমাত্র একবার জমিতে ধান রোপণ করবে, এরপর টানা ৩-৫ বছর ফসল আহরণ করতে পারবে। এই সময়ে বীজ কেনা, চারা দেয়া, লাঙল দেয়া ও চারা রোপণের মতো সাধারণ কৃষিকাজগুলো করার প্রয়োজন হয় না।
গবেষণা কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই প্রযুক্তিটি একটি দক্ষ ও টেকসই চাল উৎপাদন কৌশল নিয়ে এসেছে। এটি পরিবেশবান্ধব ও এবং খরচ কমাতে কার্যকর।’
প্রথাগত মৌসুমি ও বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে তুলনা ব্যাখ্যা করেছেন চীনা কর্মকর্তারা।
তারা বলেছেন, ‘মৌসুমি ধানের উৎপাদন প্রক্রিয়া জটিল। এর জন্য লাঙল, নিড়ানি, বীজ বপন, রোপণ, ফসল কাটা ও শ্রমিক ব্যবহারের মতো কষ্টসাধ্য কাজ করা প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে, বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ। পরবর্তী মৌসুমে যেহেতু ফসল কাটার আগে শুধুমাত্র শস্য আহরণের প্রয়োজন হয়, তাই শারীরিক পরিশ্রমও অনেক কমে যায়। ফলে উৎপাদন খরচও কম হয়।’
তারা আরো বলেন, ‘মৌসুমি ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি মৌসুমে খেতে বারবার চাষ দেয়ার প্রয়োজন হয়। যার জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয় এবং এতে প্রচুর মাটি ক্ষয় হতে পারে। প্রতি ঋতুতে নতুন বীজ কেনা ও চারা উৎপাদনের প্রয়োজন হয়। এতে উৎপাদন খরচ ও শ্রম দু’টিই বেশি হয়।’
‘কিন্তু বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদনে অনেকাংশে পানি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এটি এমন মাঠের জন্যও আদর্শ যেখানে শুধু বর্ষা মৌসুমের পরেই ধান রোপণ করা যায়। এটি প্রথাগতভাবে ধান উৎপাদনের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ পানি খরচ কমাতে পারে।’
মেংহাই মানকিয়াং ইউনটিয়ান এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিটাল কৃষি জাদুঘরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদনের মাঠগুলো দীর্ঘসময় ধান গাছে আবৃত থাকে, যা কার্বন সিংক বৃদ্ধি করে এবং মাটির ক্ষয় কমাতে পারে। তাই এটি একটি টেকসই চাল উৎপাদন কৌশল।’
এই কর্মকর্তা জানান, চীনের বাইরে ২০১৮ সাল থেকে লাওস, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বহুবর্ষজীবী ধান প্রযুক্তির পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তিটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভভুক্ত (বিআরআই) দেশগুলোতে উন্নয়নে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম মাসুদুজ্জামান বাংলাদেশে বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদনে চীনা প্রযুক্তির সাফল্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এ প্রযুক্তিতে তার উন্নত গবেষণা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য; বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল এবং সুনামগঞ্জ জেলার কিছু হাওর এলাকায় খুবই কার্যকর হতে পারে।’
তিনি দাবি করেছেন, ‘তিনি তার গবেষণায় দেখেছেন বহুবর্ষজীবী ধান গাছের জীবনকাল পাচঁ বছরেরও বেশি বাড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০ বছরেও আর বেশি সময় ধরে কৃষকদের আর ধান রোপণ করতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র অসুবিধা হলো কৃষকরা একটি বহুবর্ষজীবী খেত থেকে দু’বার ফসল আহরণ করতে পারবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রথাগত বা মৌসুমি ধান থেকে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করতে পারে।’
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ১৬-১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল রাইস কংগ্রেসে (আইআরসি) একটি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো বলেছেন, ‘আইআরসি আমাকে বহুবর্ষজীবী ধান উৎপাদনের বিষয়ে আমার উন্নত গবেষণার ওপর একটি উপস্থাপনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে সারাবিশ্ব থেকে ১ হাজার জনেরও বেশি বিজ্ঞানী যোগ দেবেন।’
সূত্র : ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।