নীরব ঘাতক ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, জানুন লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়

আমাদের শরীরের ভেতরে নীরবে কাজ করে চলা দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন অসংখ্য বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন ছেঁকে শরীরকে সুস্থ রাখে এই ছোট্ট ‘ফিল্টার’। কিন্তু কিডনি যখন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন শরীরে জমতে শুরু করে ক্ষতিকর উপাদান। এর ফলেই দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease বা CKD)। বিশেষজ্ঞরা একে নীরব ঘাতক বলে থাকেন, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ

প্রথম পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে রোগ অগ্রসর হলে দেখা দিতে পারে—

• ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন
• ক্লান্তি ও দুর্বলতা
• ক্ষুধামন্দা
• হাত-পা ও চোখে ফোলা
• প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হওয়া
• চুলকানি ও শুষ্ক ত্বক
• মনোযোগে সমস্যা ও ঘুমে ব্যাঘাত
• বমি ভাব, পেশি টান
• রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণ

দুটি প্রধান কারণ হলো:

1. ডায়াবেটিস
2. উচ্চ রক্তচাপ

এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে যেমন—

• গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
• পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (জেনেটিক সমস্যা)
• প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাথর, প্রস্টেট বা টিউমার)
• দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
• পুনরাবৃত্ত কিডনি সংক্রমণ

কিডনি দুর্বল হলে সম্ভাব্য জটিলতা

• অ্যানিমিয়া
• হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
• গাউট ও উচ্চ রক্তচাপ
• হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
• স্নায়ুর ক্ষতি
• অতিরিক্ত পটাশিয়াম বা ফসফরাস জমে যাওয়া
• শরীরে পানি জমে শ্বাসকষ্ট

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে কিডনি অনেকদিন সক্রিয় রাখা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন—

• নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
• ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
• কিডনি-বান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ
• ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
• নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ

প্রতিরোধের উপায়

• নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
• রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
• সুষম খাদ্য গ্রহণ
• ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন
• নিয়মিত ব্যায়াম
• স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
• অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া

বাজেটের মধ্যে সেরা ৫টি স্মার্টফোন, OnePlus থেকে iQOO

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একবার শুরু হলে তা আজীবন চলতে থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে কিডনির কার্যক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে—কিডনি রোগ ভয়াবহ হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য। তাই সচেতন হোন, নিজের এবং পরিবারের কিডনির যত্ন নিন।

সূত্র: Cleveland Clinic