জুমবাংলা ডেস্ক : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। রবিবার (২৫ মে) সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। এবারও তিন ধাপে আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ২৫ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী—তিন ধাপে আবেদন নেওয়া হবে। ফল প্রকাশ, নিশ্চায়ন ও মাইগ্রেশনের পর শুরু হবে চূড়ান্ত ভর্তি। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ১৫-২৫ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবেন। এরপর ৩০ জুলাই সারাদেশে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
অনলাইনে আবেদন যেভাবে
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, চলতি বছর অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (www.xiclassadmission.gov.bd) একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদনের কার্যক্রম চলবে। অনলাইন ছাড়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পারবেন না। এবার আবেদন ফি ১৫০ টাকা।
১৫০ টাকা আবেদন ফি দিয়ে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রম দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবেন, সেগুলোর মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে ভর্তির অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে ৩৩৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিকভাবে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চিত করার পর তিনি আরও দুই ধাপে মাইগ্রেশন করতে পারবেন। শিক্ষার্থীর পছন্দের কলেজ সিট ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অটো মাইগ্রেশন করা হবে।
গ্রুপ নির্বাচন পদ্ধতি
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের যেকোনো একটিতে আবেদন করতে পারবেন। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা শুধু মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবেন। একইভাবে ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা শুধু ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে আবেদনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান গ্রুপে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের যেকোনোটি এবং সাধারণ ও মুজাব্বিদ মাহির গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান গ্রুপ ছাড়া যেকোনোটিতে আবেদন করতে পারবেন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের যেকোনে গ্রুপে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন, ফল প্রকাশ, নিশ্চায়ন ও ভর্তির সিডিউল
প্রথম ধাপ: এ ধাপে আবেদন শুরু হবে ২৬ মে, চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। ১২-১৩ আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি এবং পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে। একই সময়ে (১২-১৩ জুন) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তিত হওয়া শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৪-১৮ জুন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইন সার্ভিস ও কল সেন্টার বন্ধ থাকবে।
২৩ জুন রাত ৮টায় প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে। ২৩ জুন ফল প্রকাশের পর থেকে ২৯ জুন রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন করতে হবে। ৪ জুলাই পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: ৩০ জুন শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের আবেদন। এ ধাপে আবেদন চলবে ২ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত। ৪ জুলাই রাত ৮টায় দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৮ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া চলবে। ১২ জুলাই দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
তৃতীয় ধাপ: ৯-১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন শুরু হবে। ১২ জুলাই তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ এবং ১৩-১৪ জুলাই তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন করতে হবে।
ভর্তি: ১৫ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত তিন ধাপে নির্বাচিত এবং সফলভাবে নিশ্চায়ন করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। এরপর ৩০ জুলাই অনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
ভর্তি ফি ও সেশন চার্জ
নীতিমালা অনুযায়ী—এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ৫ হাজার টাকা, মেট্রোপলিটন (ঢাকা ছাড়া) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার টাকা, জেলায় ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা ও মফস্বলে দেড় হাজার টাকা।
নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ভার্সনে সাড়ে ৭ হাজার টাকা, ইংরেজি ভার্সনে সাড়ে ৮ হাজার টাকা, মেট্রোপলিটন (ঢাকা ছাড়া) বাংলা ভার্সনে ৫ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ৬ হাজার টাকা, জেলায় বাংলা ভার্সনে ৩ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে আড়াই হাজার টাকা এবং উপজেলা ও মফস্বলে বাংলা ভার্সনে আড়াই হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার টাকা।
শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করার সময় রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ১৪২ টাকা, ক্রীড়া ফি বাবদ ৫০ টাকা, রোভার/রেঞ্জার ফি বাবদ ১৫ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ফি ১৬ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি ৭ টাকা, বিএনসিসি ফি ৫ টাকা, শিক্ষক কল্যাণ ফি ও অবসর সুবিধা ভাতা ফি ১০০ টাকাসহ মোট ৩৩৫ টাকা নিতে পারবে।
ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা
২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে তার সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে।
শিক্ষার্থী নির্বাচন পদ্ধতি
ভর্তির জন্য কোনো বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। কেবল শিক্ষার্থীর এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকবে। অন্যদিকে মোট আসনের ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
কলেজ পরিবর্তনের নিয়ম
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর কোনো শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্র (টিসি) ইস্যু করা যাবে না। কিংবা বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত ছাড়পত্রের বরাতে ভর্তি করা যাবে না।
ছাড়পত্রের (টিসি) মাধ্যমে ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রী ভর্তির ১৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে জমা দিতে হবে।
বোর্ডে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন যারা
একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইনে হলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ম্যানুয়ালি ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রবাসীদের সন্তান অথবা বিকেএসপি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অথবা খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভাগীয় অথবা জাতীয় পর্যায়ে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বোর্ড উপযুক্ত প্রমাণপত্র যাচাই-বাছাই করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করবে।
একাদশ শ্রেণিতে আসন কত
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি বোর্ডে মোট পাস করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী। দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট আসন প্রায় ৩৪ লাখ। সেই হিসাবে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ফাঁকা থাকবে অর্ধেকের বেশি আসন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা জানান, সারাদেশে ৯ হাজার ২০০টির মতো কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। মোট আসন সংখ্যা ২২ লাখেরও কিছু বেশি।
তিনি বলেন, এটা তো গেলো কলেজ-মাদরাসার হিসাব। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সেখানেও তো প্রায় আড়াই লাখ আসন রয়েছে। ভোকেশনাল যেটাকে আমরা বলি, সেখানেও এইচএসসিতে (ভোকেশনাল) পড়ার সুযোগ রয়েছে ৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ আসন রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।