ধর্ম ডেস্ক : মহান আল্লাহ তায়ালা অসীম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তিনি বান্দাদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সে জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সময় বরাদ্দ করে দিয়েছেন। সে সময়ে তিনি মহাপাপীদের মুক্তি দেন এবং অনুগত বান্দাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। এই মহা অফার সমূহের একটি হলো শবে বরাত।
শবে বরাতের ফজিলত
নিঃসন্দেহে শবে বরাত বা লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত্রি। এই রাত্রির ফজিলত অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।কুরআনুল কারীমে এই রাত্রির ব্যাপারে সরাসরি ও সুস্পষ্ট কোনো আয়াত না থাকলেও প্রায় আট জন সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যা শবে বরাত সম্পর্কে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য সহিহ হাদিস। সেই হাদিসটি হলো-
« يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»
‘আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।’
তাহলে এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো, এই রাতে মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া বাকিরা আল্লাহর রহমত, বরকত, ক্ষমা ও করুণা লাভে ধন্য হয়।
এছাড়া শবে বরাত বা লাইলাতুন নিসফে মিন শরীফ সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিস বিশারদগণ সেটিকেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলেছেন। হাদিসটি নিম্নরুপ-ইমাম তিরমিযি (র.) হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘একদা রাতের বেলা আমি রাসূল (স.) কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সন্ধানে বের হলাম। গারকাদুল বাকীতে গিয়ে তাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তার রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম, আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বনী কালবের ছাগল পালের লোমের চেয়ে অধিক পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করেন।’
উক্ত হাদিসগুলো ছাড়া শবে বরাত সম্পর্কে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে হাদিস বিশারদগণ সেগুলোর কোনো কোনোটিকে ضعيف বা দুর্বল এবং কোনো কোনোটিকে জাল ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেছেন।
শবে বরাত কি কুরআন-হাদিসের পরিভাষা?
শবে বরাত শব্দটি কুরআন ও হাদিসের প্রচলিত কোনো পরিভাষা নয়। কেবল ভারতীয় উপমহাদেশেই শবে বরাত শব্দটি প্রচলিত। এর কুরআনিক কোনো পরিভাষা না থাকলেও হাদিসের পরিভাষায় এটিকে ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান) বা মধ্য শা’বানের রজনি বলা হয়।
শবে বরাত কী কুরআন নাজিলের রাত?
শবে বরাত বা লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান এর ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে সরাসরি কোনো আয়াত বা বক্তব্য নেই। তবে কেউ কেউ অসতর্কভাবে সূরা দূখান এর ৩-৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ليلة مباركة বা বরকতময় রজনী দ্বারা শবে ক্বদর বা লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান কে উদ্দেশ্য করেছেন। আয়াতটি নিম্নরূপ-
﴿ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ . فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴾
‘নিশ্চয় আমি এটি (কুরআন)নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ (সূরা দুখান:৩,৪)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসীরগণের অভিমত-
ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজি (র.) বলেন, ‘এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি। কারণ আল্লাহ বলছেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি। আর যারা শাবানের মধ্য রাত্র ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে।’
ইমাম ইবনু কাসির (র.) বলেন, ‘যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা সুস্পষ্ট।’ আল্লামা শানকিতী বলেন, ‘মধ্য শাবানের দাবি) একটি ভিত্তিহীন দাবি।’
একজন তাবেয়ী যার নাম ইকরিমা। তিনি বলেছেন, বরকতময় রজনি দ্বারা লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান (মধ্য শাবানের রজনি) বা শবে বরাত উদ্দেশ্য। এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত। ইকরিমা ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর খাদেম।দ্বিতীয় হিজরি শতকে আন-নাদর বিন ইসমাঈল নামক কুফার এক গল্পকার ওয়ায়েজ ভুলবশত ইকরিমার ব্যক্তিগত অভিমতকে ইবনে আব্বাসের অভিমত বলে প্রচার করেন। হাদিসের ইমামগণ আন-নাদর বিন ইসমাঈলকে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম নাসায়ী ও যুরআ বলেছেন, সে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও মূল্যহীন। ইবনু হিব্বান বলেন, তার ভুল খুব মারাত্মক। যে কারণে তিনি পরিত্যক্ত বলে গণ্য হয়েছেন। ( তথ্যসূত্র: যাহাবী, মীযান আল-ইতিদাল ৭/২৬, ইবনু আদী, আল-কামীল ৮/২৬৬,২৬৭)
ইকরিমার মতামত নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সকল মুফাসসীরগণ তার অভিমত বাতিল বলে গণ্য করেছেন।
ইকরিমার বিপরীতে প্রায় সকল সাহাবী, তাবেয়ী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসীরিনে কেরাম বলেছেন, অত্র আয়াতে ليلة مباركة বা বরকতময় রজনি দ্বারা রামাদান আল কারীমের লাইলাতুল ক্বদর ই উদ্দেশ্য। অত্র আয়াতে বলা হয়েছে, কুরআন নাজিল হয়েছে এক বরকতময় রজনীতে। কিন্তু সেটি কোন রাত তা এই আয়াতে সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। কুরআন ব্যাখ্যার একটি শ্রেষ্ঠ মূলনীতি হলো, কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর। যেহেতু এই আয়াতে কুরআন নাজিলের বরকতময় রাত সম্পর্কে বলা হয়েছে সেহেতু সেটি মূলত কোন রাত তাও কুরআনের অন্য আয়াতে সুস্পষ্ট করে এভাবে বলা হয়েছে-
إِنَّآ أَنزَلْنٰهُ فِى لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ (সূরা আল-ক্বদরঃ ০১)।
অতএব, প্রমাণিত হলো যেই রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে সেই রাত ক্বদরের রাত। আর সেই রাত রয়েছে রামাদান আল কারীমে।
শবে বরাত কী ভাগ্য রজনি?
শবে বরাত শব্দটি ফারসি। যার বাংলা অর্থ হলো- ভাগ্য রজনী। সন্দেহের অবকাশ নেই শবে বরাত অত্যন্ত বরকতময় রাত। তাই বলে শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা সুস্পষ্ট সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি। যদি এই রাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা হয় তাহলে তা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। কারণ কুরআন নাজিল হওয়া ক্বদরের রাতটি ভাগ্য রজনী। সেই রাতে তকদির লিপিবদ্ধ করা হয়। সূরা আল কদরে ইরশাদ হয়েছে,
تَنَزَّلُ الْمَلٰٓئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
‘সে রাতে (লাইলাতুল কদরে) ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে।’ (সূরা আল-ক্বদর: ০৪)
আবার সূরা দুখানে ইরশাদ হয়েছে- ‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ (সূরা দুখান: ০৪)
অতএব, লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান (মধ্য শাবানের রজনি) বা শবে বরাতকে ভাগ্য রজনি বলা বাড়াবাড়ি ও সুস্পষ্ট সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত রামাদানের লাইলাতুল ক্বদর ই হচ্ছে ভাগ্য রজনি।
তবে এই রাত্রিকে যদি আরবিতে ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাত) বলা হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ লাইলাতুল বারাত অর্থ হলো ক্ষমা বা মুক্তির রাত। এই রাত ক্ষমার রাত যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, হাদিসের পরিভাষায় এটিকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনি বলা হয়। অতএব, আমাদের উচিত হাদিসে উল্লিখিত পরিভাষাটি বলতে অভ্যস্ত হওয়া।
নফল নামাজ পড়া
শবে বরাতের আলাদা কোনো নামাজ বা রোজা নেই। এই রাতে নামাজ আদায়ের আলাদা কোনো পদ্ধতিও নেই। তবে সালাফদের কেউ কেউ এ রাতে নফল ইবাদাত করেছেন। তাই এই রাতে কেউ যদি নফল সালাত আদায় করে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে এসব একাকী করাই উত্তম।
বেশি বেশি নফল নামাজ ও দীর্ঘ ইবাদত প্রসঙ্গে আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি জবাবে বললাম, না, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন! নবিজি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থায়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৫৪)
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে নফল নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া এবং লম্বা সিজদা করা এ রাতের বিশেষ একটি আমল।
তাওবা-ইস্তিগফার পাঠ করা
এই রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ বরকতময় এই রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে নেমে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গুনাহ মাফ করেন। এই মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত আগমন করে তখন আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৮০)
তাই সংকটময় পরিস্থিতিতে এই রাতে আমাদের আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং করোনাভাইরাস থেকে হেফাজতের দোয়া করা উচিত।
এই রাত সম্পর্কে হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, এই রাত্রিতে এবাদতকারীদের গুনাহরাশি আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর, গণক, জাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতামাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।
মধ্য শাবানের নফল রোজা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত কর ও দিনে রোজা পালন কর। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজের নফল রোজা তো রয়েছেই, যা আদি পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদও (সা.) পালন করতেন, যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তা ছাড়া, মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ; শবে কদরের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি বা হজরত দাউদ (আ.)-এর পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও সর্বোপরি প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয়; এবং শবে কদরের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের পর রজব ও শাবান মাসে বেশি নফল ইবাদত তথা নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন; শাবান মাসে কখনো ১০টি নফল রোজা, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। রজব ও শাবান মাসের নফল রোজা রমজান মাসের রোজার প্রস্তুতি।
একটি রোজার মাসআলা
হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা শরিফে হিজরতের পরে দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরাও আশুরার একটি রোজা পালন করেন। তখন তিনি সাহাবিদের বললেন, আগামী বছর থেকে আমরা আশুরার আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখব, ইনশা আল্লাহ! যাতে তাদের সঙ্গে মিল না হয়। তাই আশুরার রোজা অর্থাৎ মহররম মাসের দশম তারিখের রোজার সঙ্গে তার আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখা মোস্তাহাব। শবে বরাতসহ বছরের অন্য নফল রোজাগুলো একটি রাখতে বাধা নেই; বরং এক দিন পর এক দিন রোজা রাখা হজরত দাউদ (আ.)-এর সুন্নত বা তরিকা; যা নফল রোজার ক্ষেত্রে উত্তম বলে বিবেচিত এবং সওমে দাউদি নামে পরিচিত। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজাও আলাদা আলাদা বা একত্রেও রাখা যায়।
বর্জনীয় বিষয়সমূহ-
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে নিম্নে উল্লিখিত প্রত্যেকটি কাজ অবশ্যই বর্জনীয়।
১. শিরকে লিপ্ত হওয়া।
২. হিংসাত্মক কাজ করা।
৩. আল্লাহর নাফরমানিমূলক কাজ করা।
৪. সমবেত হয়ে ইবাদাত বন্দেগি করা।
৫. মসজিদ,মাজার ও কবরস্থান আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা।
৬. এ রাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা তার গৃহে ফিরে আসে এমন ধারণা করা।
৭. আতশবাজি ফোটানো।
৮. রাতে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় গোসল করাকে ফজিলতপূর্ণ মনে করা।
৯. এ রাতকে খাওয়া দাওয়া ও উৎসবের রাতে পরিণত করা।
১০. এ রাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা।
পরিশেষে বলবো, ফরজ ও নফলের সীমারেখা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সারাজীবনের নফল ইবাদত একটি ফরজ ইবাদতের সমান হবে না। নফলের পেছনে দৌড়ে আমরা মাঝে মাঝে ফরজ সালাতগুলোকেও তরক করে ফেলি। এর চেয়ে কঠিন আত্মপ্রবঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না।
মহান আল্লাহ বান্দাদের প্রতি একটি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন, আর তা হলো- তিনি তার বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগিতে কোনো ত্রুটি হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যেমন, নফল সালাত দ্বারা ফরজ সালাত আদায়ে ভুল-ত্রুটিগুলো পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাই ফরজগুলো যথাযথ আদায় করে এরপর সুন্নাত ও নফল আদায় করলেই সুফল পাওয়া যাবে। আর সমস্ত ইবাদাত হবে আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর নির্দেশিত পন্থায়। মনগড়া কোনো ইবাদাত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।