জুমবাংলা ডেস্ক : সিংগাপুরের শ্রমবাজার নিয়ে আবারও নোংরা খেলায় মেতেছে একটি অসাধু চক্র। প্রতারণা করে কর্মী পাঠানোসহ নানা বিষয়কে আড়াল করে জনশক্তি রপ্তানি করতে চাইছে ঐ চক্রটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের কাজের জন্য অতীতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নষ্ট হয়েছে। এবারও একই প্রচেষ্টা সফল হলে সিংগাপুরের মতো বাজারটি ইমেজ সংকটে পড়বে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিংগাপুরে কর্মী পাঠানোর জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মানদণ্ড ছাড়াও প্রতিটি রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) ৩০ লাখ টাকা জামানত রাখতে হয়। কিন্তু নিবন্ধন হওয়ার পর থেকেই ওয়েসিস সার্ভিসেস মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নানা প্রতারণা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে ওয়েসিসকে সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাদের জামানতের অর্থ ৩০ লাখ টাকাও ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তথ্য গোপন করে ৩ হাজারেরও বেশি কর্মী সিংগাপুরে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র নেয়। এক্ষেত্রে তারা সিংগাপুরের অংশীদার প্রগ্রেসিভ বিল্ডার্সের সহায়তা নেয়। দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পাবার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি নড়েচড়ে বসে। বিএমইটি তদন্ত করে এর সত্যতা পেলে মন্ত্রণালয় ওয়েসিস ওভারসিজ লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিলসহ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা মেহেদিকে জরিমানাসহ প্রগ্রেসিভ বিল্ডার্সের টেস্ট সেন্টারের মাধ্যমে সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণ না করার সুপারিশ করে। জানা গেছে, বিএমইটির সুপারিশের পর মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কয়েক দফা শুনানি করে। সেখানেও প্রগ্রেসিভ এবং ওয়েসিস এর বিরুদ্ধে জালিয়াতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এরপর তা আদালতে গড়ায়। আদালত ওয়েসিস এর বিরুদ্ধে দেওয়া শাস্তি স্থগিত করে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এরপর ওয়েসিস সার্ভিসের পক্ষ থেকে নাজমুল হুদা মেহেদি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অপরাধ স্বীকার করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েসিস সার্ভিসের লাইসেন্স দুই বছরের জন্য স্থগিত করাসহ প্রগ্রেসিভ বিল্ডার্সের সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণের যাবতীয় এনওসি সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখে।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এনওসি স্থগিত রাখার পরও প্রগ্রেসিভ বিল্ডার্স নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সহায়তায় তারা ওয়েসিস এর পরিবর্তে মাজ ওভারসিস নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে পার্টনার দেখিয়ে সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণের জন্য পুনরায় আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বিষয়ে বিএমইটির মহাপরিচালকের মতামত চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে জানান, যে কোনো বিষয়ে সুবিধা চেয়ে যে কেউ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। এ বিষয়ে গাইডলাইন আছে। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে যাচাই বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সুতরাং যে কেউ আবেদন করলেই যে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ পাবে—এমন কথা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন ২০১৮ এর ১২ এবং ১৪ ধারা অনুযায়ী সিংগাপুরের কোম্পানির এনওসি পরিবর্তনসহ যে কোনো বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে তা মীমাংসা না করা পর্যন্ত নতুন এনওসি নিতে পারবে না। এটি জানার পরও মন্ত্রণালয়ের একটি অসাধু মহল তড়িঘড়ি করে প্রগ্রেসিভকে সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণের এনওসি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে স্বয়ং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বিস্মিত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন না মেনে তড়িঘড়ি করে যদি প্রগ্রেসিভকে সিংগাপুরে কর্মী প্রেরণের এনওসি দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটিও আদালত পর্যন্ত গড়াবে বলে শঙ্কা রয়েছে। ফলে সিংগাপুরে জনশক্তি রপ্তানি একটি বড় ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।