সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতে জব্দকৃত একটি ড্রেজার বালু উত্তোলনকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় জব্দ করা বালুবাহী একটি বাল্কহেড নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বালু উত্তোলনকারীরা দলবলসহ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী হরিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তাপসী রাবেয়াকে জিম্মি করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, জব্দকৃত ড্রেজার ছিনিয়ে নেওয়া এবং এসিল্যান্ডকে জিম্মি করার বিষয়ে এখনো কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তাপসী রাবেয়া সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পদ্মা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে যান। তার সাথে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আনসার সদস্যরা ছিলেন। গিয়ে তিনি দেখতে পান উপজেলার শেষ সীমানায় ধুলশুড়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে একটি ড্রেজার এবং বালুবাহী একটি বাল্কহেড জব্দ করেন। সেগুলো নিয়ে ফিরে আসার সময় দোহার থেকে স্পিডবোট ও ট্রলারযোগে প্রায় দেড় শতাধিক লোক এসে তাদেরকে ঘেরাও করেন। এ সময় ড্রেজারটি তারা নিয়ে যায়। তবে, বাল্কহেডটি তিনি ছাড়েননি। তাদেরকে ঘেরাও করা লোকজন বাল্কহেডসহ তাদেরকে দোহারের মৈনট ঘাট এলাকায় নিয়ে যান। এসিল্যান্ড বিষয়টি মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি ঢাকার জেলা প্রশাসককে জানান। এরপর ঘটনাস্থলে যান দোহারের এসিল্যান্ড এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান। দোহারের এসিল্যান্ডকে মৌখিকভাবে বাল্কহেডটি বুঝিয়ে দিয়ে তিনি হরিরামপুরে ফিরে আসেন। তবে, বাল্কহেড বা ড্রেজারের মালিক কে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোহারের নয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ মিয়ার নেতৃত্বে ঢাকা জেলার দোহার ও মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ট হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনা কেউ। শহীদ মিয়া প্রচুর টাকা-পয়সার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাখেন বলে জানান স্থানীয়রা। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কোন মামলা বা জরিমানা ছাড়াই মোবাইল কোর্টে জব্দ হওয়া বাল্কহেডটি উদ্ধার করে নেন বলে জানা গেছে।
শহীদ মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই বাল্কহেডটি আমার না, শুনেছি ওটা মাহবুব খান নামের এক ব্যক্তির। হরিরামপুরের ইউএনও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সেটি জব্দ করার পর দোহারের এসিল্যান্ডের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাকে আমার ইউএনও স্যার জানান, হরিরামপুরের এসিল্যান্ড আসছেন মোবাইল কোর্টে, কি একটা বিষয়ে জটিলতা হচ্ছে, তুমি যাও। আমি গিয়ে এসিল্যান্ডকে মৈনট ঘাটে দেখি। তিনি আমাকে জানান, এরা বালু উত্তোলন করছিল আমি বাল্কহেডটি ধরেছি। আপনার কাছে দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। তিনি আমার জিম্মায় কিভাবে দিলেন, আমি বুঝতে পারছি না। আমাকে লিখিতভাবে দেননি। আমাদের এখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের কাজ চলছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলি। তারা জানান যে, বাল্কহেডটি তাদের, সেটি নদী ভাঙন রোধের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসিল্যান্ড যদি বাল্কহেডটি জব্দ করে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে তিনিই বলতে পারবেন।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দোহারের ইউএনও মোবাশ্বের আলম বলেন, গতকাল এরকম ঝামেলা হয়েছিল শুনেছি। তবে, বাল্কহেড বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
মোবাইল কোর্টে জব্দকৃত ড্রেজার ছিনিয়ে নেওয়া এবং এসিল্যান্ডকে জিম্মির বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।