ধর্ম ডেস্ক : ইসলামের অন্যান্য রোকন তথা সালাত, জাকাত ও সিয়ামের যেমন বড় বড় ফজিলত রয়েছে, তেমনি হজের রয়েছে নিজস্ব ফজিলত ও মর্যাদা। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হজ করবে আর কোনরূপ অশ্লীলতা করবে না এবং পাপাচার করবে না সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসবে যেদিন তার মা তাকে জন্মদান করেছে।’ সুবহানাল্লাহ! কত বড় ফজিলত। বান্দা যত বড় গুনাহ করুক না কেন হজ করার মাধ্যমে সে নিষ্পাপ শিশু হয়ে যায়।
হজের যেমন অনেক ফজিলত রয়েছে। ঠিক তেমনি হজ না করারও ক্ষেত্রে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাহন ও পাথেয় এর মালিক হয়েছে, যা তাকে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেবে তবু সে হজ করলো না তাহলে সে ইহুদি অবস্থায় মারা গেল, না নাছারা অবস্থায় তাতে কিছু আসে যায় না। অর্থাৎ তার হালাকি ও বরবাদি অবশ্যম্ভাবী। তা এ কারণে যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম তার ওপর বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরজ করা হয়েছে।’ [তিরমিজি, ৮১২]
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ করল না, আল্লাহর কসম সে হয় ইহুদি হয়ে মারা যাবে, না হয় নাসারা হয়ে।’ আল্লাহু আকবার, কি ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি! এরপরও কি কোনো মুসলিম, যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আল্লাহর রাসুলকে বিশ্বাস করে, যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে, সে কি হজ আদায় না করে থাকতে পারে? এমন দুঃসাহস দেখাতে পারে?
অথচ আমাদের এ দেশে এমন অনেক লোক আছে যারা সময় ও সুযোগের অভাব এবং ব্যবসায়িক ঝামেলার অজুহাতে ফরজ হজ আদায় করার কথা চিন্তাও করে না। যখন মৃত্যুর সময় হবে। আর মৃত্যু তাকে থাবা দিয়ে নিয়ে যাবে। তখন কোথায় থাকবে তার ব্যবসায়ী ঝামেলা? সময় অভাবের অজুহাত? সুতরাং এখনো সময় আছে আমরা যেন সাবধান হই। হজ ফরজ হওয়া মাত্র যেন হজ আদায় করার বিষয় পূর্ণ সচেষ্ট হই।
অনেকেই মনে করেন, বৃদ্ধাবস্থায় হজ আদায় করবেন। হজ একটি আর্থিক ও শারীরিক ইবাদাত। সুতরাং পরে দেখা যায়, তিনি আর শারীরিকভাবে সক্ষম থাকেন না কিংবা হজ পালন করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেষ জীবনের ভরসায় না থেকে হজ ফরজ হলে দ্রুত আদায় করা ফেলা আবশ্যকীয়।
হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে এ হাদিসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপরে কোন আমল?
তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবারও জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘হজ্জে মাবরুর অর্থাৎ- কবুলযোগ্য হজ’। [বুখারি ২৬, মুসলিম ৮৩, তিরমিজি ১৬৫৮]
আর কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭]
লেখক: প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর, শরীয়তপুর।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।