লাইফস্টাইল ডেস্ক : গরু বা খাসির মাংসকে রেড মিট বা লাল মাংসও বলা হয়ে থাকে। রেড মিট যে শুধু আমাদের ক্ষতি করে এমন নয়।
তবে রান্নার পদ্ধতির ওপরেও নির্ভর করছে আপনি এ থেকে কতটুকু উপকার পাচ্ছেন সেটি। কিছু গবেষণা বলছে, মাংস রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু পদ্ধতিতে লাল মাংস রান্না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
গরুর মাংস হচ্ছে উচ্চমানের প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়াও আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাট, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, বি১২, আয়রন, জিংক, ফসফরাস ও গ্লুটাথিওন মেলে গরুর মাংস থেকে।
ডা. তানজিম জারা একটি ভিডিওবার্তায় জানান, লাল মাংস রান্নার পদ্ধতির সঙ্গে ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। মাংস যখন সরাসরি আগুনে পোড়ানো হয় বা বেশি তাপে রান্না করা হয়, যেমন বারবিকিউ করা হয় বা কড়াইতে খুব উচ্চতাপে ভাজা হয়, তখন ক্যানসার তৈরি করে এমন কেমিক্যালের উৎপাদন বেশি হয়।
আগুনে পুড়িয়ে রান্না করা বা খুব উচ্চতাপে রান্না করার চেয়ে অল্প আঁচে মাংস রান্না করা শ্রেয়— এমনটা বলছে গবেষণা। অল্প আঁচে রান্না করলে মাংস খুলে আসে— এই পদ্ধতিতে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট বলছে, মাংসের সম্ভাব্য কার্সিনোজেনগুলো হচ্ছে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন। এগুলো তৈরি হয় মাংস গ্রিলিং বা ভাজার সময়। মাংস থেকে চর্বি সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়াতেও এ ধরনের কার্সিনোজেন তৈরি হয়।
চলুন জেনে নিই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মাংস রান্নার স্বাস্থ্যকর উপায়—
তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন
উচ্চতাপে মাংস রান্না করলে এতে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস ও পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়। এসব কেমিক্যাল কম্পাউন্ড ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
গবেষণায় কিডনি ক্যানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নাকৃত মাংসের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মাংসের ধরন ও কাটার ধরনের ওপর আদর্শ তাপমাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন গরুর মাংসের স্টিক বা রোস্ট রান্নার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
চর্বিহীন মাংস গ্রিলিং করুন
গ্রিলিং করে খেতে চাইলে চর্বিহীন মাংস বেছে নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বিবহুল মাংস গ্রিলিং করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। চর্বিবহুল মাংস গ্রিলিং করা হলে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস নামক কার্সিনোজেন উৎপন্ন হয়। মাংসের চর্বি গলে গ্রিলের ওপর পড়ে ও আগুনের আঁচ বেড়ে কার্সিনোজেনটি তৈরি হয়, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে মাংসের ওপর লেগে থাকে। অন্যদিকে চর্বিহীন মাংস গ্রিলিং করলে এমন কিছুর সুযোগ নেই বললেই চলে।
মাংস পোড়ানো থেকে বিরত থাকুন
পোড়া মাংসের স্বাদ যেমনই হোক, এটা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। মাংস যত পুড়বেন, ক্যানসারের ঝুঁকি তত বাড়বে।
গবেষণায় বলছে, পোড়া মাংস বেশি খেলে শরীরে কার্সিনোজেন বেড়ে যায়। বিশেষ করে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস। শরীরে যত কার্সিনোজেন প্রবেশ করবে, ক্যানসারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে।
মসলা বাড়িয়ে দিন
কেবল স্বাদ বাড়াতে নয়, রোগের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যেও মাংসে মসলার ব্যবহার বাড়াতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসে মসলার পরিমাণ বাড়ালে অথবা মসলা দিয়ে সিজনিং বা মেরিনেড করলে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস কমে যায়। যার মানে হলো, ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যায়।
সবজি দিয়ে মাংস রাঁধুন
মাংস সবজি দিয়ে রান্না করতে পারেন। এতে মাংস কম খাওয়া হয়। পাশাপাশি পুষ্টিগুণও বেড়ে যায় রান্নার। এ ক্ষেত্রে মাশরুম অথবা আস্ত রসুন দিয়ে মাংস রান্না করতে পারেন। আবার মাংস রান্নায় লাউ, বাঁধাকপি, পেঁপে বা মিষ্টিকুমড়াও রাখতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।