কুমিল্লার এক গলির মোড়ে, হাতের তৈরি শীতল পাটি বিক্রির ছোট্ট দোকান। মালিক রহিমা বেগম। তিন বছর আগে স্বামী হারানোর পর সংসারের হাল ধরতে শুরু করেছিলেন এই কাজ। আজ? তাঁর দোকান থেকে মাসে ৩০০+ পাটি বিক্রি হয়, স্থানীয় হোটেলগুলো তাঁর নিয়মিত গ্রাহক, আর সম্প্রতি জাপান থেকে এসেছে প্রথম আন্তর্জাতিক অর্ডার! রহিমার চোখে জল এনে দিলো প্রশ্ন: “কীভাবে সম্ভব হলো এত অল্প পুঁজিতে, এত বড় সাফল্য?” তাঁর উত্তর: “সফলতার মূলমন্ত্র জানুন – ধৈর্য আর গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে পারার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জয়!” রহিমার গল্প একা নয়। বাংলাদেশে ৭৮ লাখেরও বেশি MSME (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস) যেমন রহিমা, তেমনই লক্ষ্য অর্জন করছে। কিন্তু কী সেই অদৃশ্য সূত্র যা কয়েকটি ব্যবসাকে চূড়ায় পৌঁছে দেয়, আর অন্যগুলোকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করে?
সফলতার মূলমন্ত্র জানুন: শুরুটা হোক ভিত গড়ে
ধাপে ধাপে সাফল্যের ভিত্তি রচনা
সফলতার মূলমন্ত্র জানার প্রথম পাঠ হলো – ভিত্তি মজবুত করা। ঢাকার ডোকখিনীর তরুণ উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলামের গল্প চোখ খুলে দেবে। ২০২০ সালে মাত্র ২০,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা তাঁর মোবাইল এক্সেসরিজের দোকান আজ মাসে ৫ লাখ টাকা আয় করে। তাঁর সূত্র?
- স্বপ্ন নয়, পরিকল্পনায় বিশ্বাস: “আমার প্রথম মাসের আয় ছিল মাত্র ৩,৫০০ টাকা। হতাশ হলেও, আমি প্রতিদিন বিক্রির হিসাব লিখেছি, কোন পণ্য কখন ভালো বিক্রি হয় নোট করেছি। তিন মাসের ডেটা অ্যানালাইসিস করে বুঝলাম – ফোন কভার আর পাওয়ার ব্যাঙ্কের চাহিদাই সর্বোচ্চ। তখনই ফোকাস শিফট করলাম,” বললেন আরিফ।
- স্থানীয় বাজার গবেষণা (Market Research): বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS)-এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট বলছে, ৭৩% ছোট ব্যবসা ব্যর্থ হয় বাজার না বোঝার কারণে। আরিফ তাঁর দোকানের সামনের রাস্তায় দিনে কতজন পথচারী, তাদের বয়সসীমা, কাছাকাছি অফিস-কলেজের অবস্থান – সব ম্যাপ করে ব্যবসার মডেল বানিয়েছিলেন।
- অল্প পুঁজিতে SMART লক্ষ্য: “প্রথম তিন মাস: শুধু টিকে থাকা! ছয় মাস: দৈনিক বিক্রি ১,০০০ টাকা। এক বছর: দোকানের রেন্ট জোগাড় করা।” এই মাইক্রো-গোলগুলোই তাঁকে এগিয়ে নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, লক্ষ্য-ভিত্তিক পরিকল্পনা ছোট ব্যবসার সাফল্যের হার ৪০% পর্যন্ত বাড়ায়।
প্রয়োজনে ট্রেনিং, প্রয়োজনে সাহায্য নিন
রংপুরের নারী উদ্যোক্তা শেফালী আক্তার। পোশাক সেলাইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন নিজের একটি সেলাই মেশিন দিয়ে। কিন্তু কাজের অর্ডার বাড়াতে গিয়ে ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা টের পেলেন।
- সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কাজে লাগানো: তিনি ন্যাশনাল স্মল হোল্ডার্স কোম্পানি লিমিটেডের (NSIC) মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ভর্তি হলেন। সেখানে পেলেন ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আর কোয়ালিটি কন্ট্রোলের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৮% বেশি নারী উদ্যোক্তা এসব প্রশিক্ষণ নেন, যাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হার অন্যদের তুলনায় গড়ে ১৫% বেশি।
- অনলাইন রিসোর্সের শক্তি: শেফালী ইউটিউব চ্যানেল “Sewing Secrets BD” এবং SME ফাউন্ডেশনের ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আধুনিক ডিজাইনের ট্রেন্ড শিখেছেন। তাঁর তৈরি নকশিকাঁথা এখন ঢাকার বুটিক হাউসেও সরবরাহ হয়!
গ্রাহকই রাজা: সম্পর্ক যেভাবে ব্যবসায় প্রাণ ফেলে
শ্রেষ্ঠ মার্কেটিং? গ্রাহকের মুখে হাসি!
সফলতার মূলমন্ত্র জানার দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো – গ্রাহককে রাজার আসনে বসানো। রাজশাহীর ছোট কফি শপ “আরামদায়ক” এর মালিক সজীব হাসান এর প্রমাণ।
- পার্সোনালাইজেশন (Personalization) এর জাদু: “আমার নিয়মিত গ্রাহক মাহবুব ভাইকে দেখলেই আমি বলে দিই – ‘এক কাপ ব্ল্যাক কফি, একটু স্ট্রং, তাই না?’ এই ছোট্ট কথায় তাঁর চোখে যে তৃপ্তির আভা দেখি, তা বিজ্ঞাপনের চেয়ে ঢের শক্তিশালী,” বললেন সজীব। গ্রাহকের পছন্দ-অপছন্দ নোট রাখা তাঁর রুটিন।
- ফিডব্যাককে স্বাগতম: দোকানের দেয়ালে ঝোলানো আছে ফিডব্যাক বুক। প্রতিদিন বিকেলে সজীব সেটা পড়েন। একবার এক কলেজছাত্রী লিখেছিল, “ওয়াই-ফাই স্পিড বাড়ালে ভালো হতো।” পরদিনই তিনি ইন্টারনেট কানেকশন আপগ্রেড করেন। ফল? ঐ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এখন তাঁর দোকানের নিয়মিত দর্শনার্থী।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়তা: শুধু পোস্ট দেওয়া নয়, গ্রাহকদের কমেন্টের জবাব দেওয়া, তাদের রিভিউ শেয়ার করা – এই ছোট ছোট কাজে “আরামদায়ক” এর ফেসবুক পেজে ১৫ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার!
বিশ্বাস গড়ে তোলার অস্ত্র: বিশ্বস্ততা
খুলনার মৎস্য চাষি ফরিদ মিয়া। পুকুরে মাছ চাষ করেন, সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি?
- গুণগত মানের কঠোর নীতি: “আমি কখনও ফরমালিন বা ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করি না। গ্রাহকরা জানেন, ফরিদ মিয়ার মাছে ভেজাল নেই। এই বিশ্বাসের দামটাই সবচেয়ে বেশি,” বললেন তিনি। তাঁর মাছের দাম অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি, তবুও ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে।
- ভালো কাজের কথাটা ছড়িয়ে পড়বেই: তাঁর এক গ্রাহক, স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক, তাঁর মাছের গুণগত মানের কথা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। সেটি ভাইরাল হয়, দূর-দূরান্ত থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে। ফরিদের কথায়, “সততা কোনো কৌশল নয়, সফলতার মূলমন্ত্র জানতে হলে এটাই প্রথম শর্ত।”
অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা: বদলাকেই বন্ধু বানান
বাজারে টিকে থাকতে পরিবর্তন জরুরি
সফলতার মূলমন্ত্র জানার তৃতীয় স্তম্ভ – পরিবর্তনের সাথে তাল মেলানো। করোনাকালে বহু ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও সিলেটের “বইচক্র” নামের ছোট লাইব্রেরি ও বইয়ের দোকান কিভাবে রূপান্তরিত হলো?
- ডিজিটাল শিফট (Digital Pivot): লকডাউনে দোকান বন্ধ। মালিক তানভীর আহমেদ শুরু করলেন “বই পৌঁছে দেবার” সার্ভিস। ফেসবুক পেজে বইয়ের তালিকা আপলোড, হোয়াটসঅ্যাপে অর্ডার নেওয়া, এবং স্থানীয় ডেলিভারি পার্টনারদের মাধ্যমে বই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া।
- সেবার প্রসার: শুধু বই বিক্রি নয়, শুরু করলেন অনলাইন বুক ক্লাব। জুমে আলোচনা সভা, লেখকদের সাথে ওয়েবিনার। এই কমিউনিটি তৈরি হওয়ায় লকডাউন উঠে গেলেও বিক্রি কমেনি, বরং অনলাইন অর্ডার এখনও চলছে!
- ডেটা ড্রিভেন ডিসিশন: তানভীর লক্ষ্য করলেন, লকডাউনে শিশুদের বই ও রান্নার বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। তাই তিনি স্টকে সেই ক্যাটাগরির বইয়ের পরিমাণ বাড়িয়েছিলেন।
নতুন প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করুন
বরিশালের কৃষি উপকরণ বিক্রেতা করিম উদ্দিন। তাঁর দোকানে এখন ডিজিটাল পেমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পণ্য ডেমো দেখানো হয়।
- সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহার: ইউএসএইডের “প্রগতি” প্রকল্পের সহায়তায় তিনি শিখেছেন কীভাবে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষকদের ফসলের রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করা যায়। এই সেবা দোকানের প্রতি কৃষকদের আকর্ষণ ও বিশ্বাস বাড়িয়েছে বহুগুণ।
- অনলাইন উপস্থিতি: “অনলাইন থাকা মানে ২৪/৭ দোকান খোলা থাকা,” বললেন করিম। তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে এখন মাসে ৩০% অর্ডার আসে, যা লকডাউনের আগে ছিল শূন্য!
টাকার খেলা: আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেভাবে সাফল্য ধরে রাখে
আয়-ব্যয়ের হিসাবই সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর
সফলতার মূলমন্ত্র জানতে হলে আর্থিক শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জের হোমমেড কেক ব্যবসায়ী নুসরাত জাহানের অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয়।
- স্পষ্ট হিসাবরক্ষণ: “প্রতিটি ডিম, এক কাপ চিনি, এমনকি গ্যাসের খরচও আমি নোট করি। প্রতি কেকের প্রকৃত খরচ (Cost of Goods Sold – COGS) বের করি। তাহলেই বুঝতে পারি কোন কেক থেকে কত লাভ হচ্ছে,” বললেন নুসরাত। সে অনুযায়ী তিনি পণ্যের দাম ও প্রমোশন ঠিক করেন।
- জরুরি তহবিল (Emergency Fund): মাসিক লাভের একটি অংশ (১০%) তিনি আলাদা করে রাখেন “বৃষ্টি দিনের” জন্য। এই তহবিলই তাকে একবার ওভেন নষ্ট হয়ে গেলে নতুন কেনার সামর্থ্য দিয়েছিল।
- লাভ পুনর্বিনিয়োগ (Reinvestment): প্রথম বছর শেষে লাভের টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন একটি ভালো কোয়ালিটির মিক্সার গ্রাইন্ডার কিনতে, যা উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ!
অতিরিক্ত ঋণ নয়, সঠিক ফান্ডিং খুঁজুন
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এসএমই খাতে ঋণের প্রবাহ ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সঠিক উৎস বাছাই জরুরি।
- সরকারি সুবিধা: যেমন –
- বাংলাদেশ ব্যাংকের “রিফাইন্যান্সিং স্কিম” (সুদের হার সাধারণ ব্যাংক ঋণের চেয়ে কম)
- এসএমই ফাউন্ডেশন-এর গ্র্যান্ট ও লো-ইন্টারেস্ট লোন প্রোগ্রাম।
- মুজিব বছর উদ্যোক্তা ঋণ (মহিলা ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা)।
- ডিজিটাল লেন্ডিং: বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাইক্রো-লোন সার্ভিস দ্রুত ও সহজে ছোট অংকের ফান্ডিং দেয়, যদিও সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
- সতর্কতা: “ঋণ নেওয়ার আগে EMI (Equated Monthly Installment) হিসাব করে নিন। মাসিক আয়ের সর্বোচ্চ ৩০% EMI-এর জন্য রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ,” পরামর্শ দেন ফিন্যান্স এক্সপার্ট ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. ফারহানা হক।
স্থায়িত্ব ও সম্প্রসারণ: সাফল্য ধরে রাখার কৌশল
টিমওয়ার্ক ও ডেলিগেশন
যখন ব্যবসা বাড়ে, একা সব সামলানো অসম্ভব। চট্টগ্রামের ছোট প্রিন্টিং প্রেস “শিখা প্রিন্টার্স”-এর মালিক সুমন দাসের অভিজ্ঞতা:
- ডেলিগেশন শিখুন: “আমি সব কাজ নিজে করতাম। ফলে গ্রাহক সার্ভিসে ঘাটতি হতো। দুইজন দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে ট্রেনিং দিলাম। এখন আমি প্রেস মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ আর নতুন মার্কেটিং প্ল্যানে ফোকাস করি। ব্যবসার কার্যকারিতা বেড়েছে,” বললেন সুমন।
- মোটিভেশন গুরুত্বপূর্ণ: কর্মীদের সাথে নিয়মিত কথা বলা, তাদের মতামত শোনা, ভালো পারফরম্যান্সে ছোটো ছোটো পুরস্কার (বোনাস, উপহার) দেওয়া – এই ছোট ছোট উদ্যোগ টিম স্পিরিট বাড়ায়।
ব্র্যান্ডিং: শুধু নাম নয়, প্রতিশ্রুতিও!
সফলতার মূলমন্ত্র জানার শেষ ধাপ – ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
- একটি কাহিনী বলুন: বগুড়ার হ্যান্ডিক্রাফ্ট ব্যবসা “নকশী থ্রেড”। মালিক সেলিনা আক্তার প্রতিটি পণ্যের সাথে গল্প শেয়ার করেন – কোন মহিলা দল এটি বুনেছে, ঐ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কোন নকশা ব্যবহৃত হয়েছে। এই গল্প পণ্যকে শুধু পণ্য থাকতে দেয় না, এনে দেয় আবেগের সংযোগ।
- ধারাবাহিকতা (Consistency): পণ্যের কোয়ালিটি, সেবার মান, এমনকি প্যাকেজিং – সব কিছুতেই ধারাবাহিকতা রাখুন। এটাই গ্রাহকের মনে আপনার ব্র্যান্ডের ইমেজ গড়ে তোলে।
- স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ততা: “নকশী থ্রেড” স্থানীয় স্কুলে আর্ট কম্পিটিশন স্পন্সর করে, মেলায় স্টল দেয়। এতে ব্র্যান্ডের স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়ে, তেমনি সামাজিক দায়বদ্ধতাও পালন হয়।
মনে রাখুন: সফলতার মূলমন্ত্র জানা মানে কোনো শর্টকাট খোঁজা নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া – ভিত্তি গড়া, গ্রাহককে বোঝা, পরিবর্তনের সাথে তাল মেলানো, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ধারাবাহিকভাবে উন্নতির পথে হাঁটা। রহিমা, আরিফ, শেফালী, সজীব, ফরিদ, তানভীর, করিম, নুসরাত, সুমন, সেলিনা – এরা প্রত্যেকেই প্রমাণ করেন যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর সঠিক কৌশল জানা থাকলে, ছোট ব্যবসাও হয়ে উঠতে পারে বিশাল সাফল্যের গল্পের উৎস! আপনার শুরুটা যতই ছোট হোক না কেন, আজই সফলতার মূলমন্ত্র জানুন এবং আপনার স্বপ্নের ব্যবসাকে সত্যি করে তুলুন। এক পা এগিয়ে যান এখনই – আপনার গল্পই হতে পারে আগামী দিনের অনুপ্রেরণা!
জেনে রাখুন
১. ছোট ব্যবসার জন্য সফলতার মূলমন্ত্র জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক কোনটি?
সবকিছুর ভিত্তি হল গ্রাহককে বোঝা ও তাকে সন্তুষ্ট রাখা। বাজার গবেষণা করে গ্রাহকের চাহিদা, সমস্যা ও পছন্দ জানুন। গুণগত পণ্য বা সেবা দেওয়া, বিশ্বস্ততা বজায় রাখা এবং তাদের ফিডব্যাক গুরুত্বের সাথে নেওয়াই দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক ও ব্যবসার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা মার্কেটিংও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু গ্রাহক ছাড়া ব্যবসা অচল।
২. অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে সফল হওয়া কি সম্ভব?
হ্যাঁ, একদম সম্ভব! বাংলাদেশে অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে মাত্র কয়েক হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করা ব্যবসা আজ লক্ষ টাকা আয় করছে। চাবিকাঠি হল SMART লক্ষ্য (নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক ও সময়ভিত্তিক) নির্ধারণ করা, খরচ কমানো (যেমন: ঘরে শুরু করা), ধীরে ধীরে বাড়ানো, লাভ পুনর্বিনিয়োগ করা এবং ধৈর্য্য ধরা। অল্প পুঁজিতে শুরু করলে ঝুঁকি কম, শেখার সুযোগ বেশি।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া কি ছোট ব্যবসা সফল হতে পারে?
যদিও ডিজিটাল মার্কেটিং (ফেসবুক পেজ, ইমেইল মার্কেটিং) আজকের যুগে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সাশ্রয়ী হাতিয়ার, তবুও স্থানীয়ভাবে শুধু অফলাইনেও সফল হওয়া সম্ভব, বিশেষত নির্দিষ্ট স্থানীয় গ্রাহকভিত্তিক ব্যবসায় (যেমন: স্থানীয় মুদি দোকান, মেরামতের দোকান)। তবে, অফলাইনে সফল হতে হলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, মুখের কথার প্রচার (Word-of-Mouth), স্থানীয় কমিউনিটিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অসাধারণ গ্রাহক সেবার উপর জোর দিতে হবে। ডিজিটাল উপস্থিতি বাড়ালে অবশ্য সুবিধাই বেশি।
৪. ব্যবসায় লোকসান হলে কী করণীয়?
লোকসান হলে প্রথমেই কারণ খুঁজে বের করুন: কি পণ্য/সেবায় লোকসান? বাজার চাহিদা কম? খরচ বেশি? প্রতিযোগিতার চাপ? তারপর দ্রুত পদক্ষেপ নিন:
- অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান।
- লোকসানের পণ্য/সেবা বন্ধ করুন বা পুনর্বিবেচনা করুন।
- গ্রাহকদের কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক নিন।
- ব্যবসার মডেল পুনর্বিবেচনা করুন (Pivot করুন)।
- প্রয়োজনে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজর বা মেন্টরের সাহায্য নিন।
- হাল ছাড়বেন না, শেখার সুযোগ হিসেবে নিন।
৫. সরকারি কোন সহায়তা ছোট ব্যবসায়ীরা পেতে পারেন?
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহায়তা পাওয়া যায়:
- সুবিধাজনক ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্সিং স্কিম, এসএমই ফাউন্ডেশন, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF) এর অধীন সংস্থাগুলো থেকে কম সুদে ঋণ।
- প্রশিক্ষণ: এসএমই ফাউন্ডেশন, বিসিক (BSCIC), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক ব্যবসায়িক দক্ষতা, প্রযুক্তি ও বিপণন বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
- গ্র্যান্ট ও সাবসিডি: কিছু নির্দিষ্ট সেক্টর (যেমন: কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, গার্মেন্টস সহায়ক শিল্প, গ্রিন টেকনোলজি) বা নারী/তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রকল্পে গ্র্যান্ট বা ভর্তুকি।
- ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম: সরকারি উদ্যোগে তৈরি প্ল্যাটফর্মে (যেমন: ইজিবিজি) পণ্য তালিকাভুক্ত করার সুযোগ।
৬. ব্যবসায় সাফল্যের জন্য কোন গুণটি সবচেয়ে জরুরি?
ধৈর্য্য (Patience) এবং অভিযোজনযোগ্যতা (Adaptability) – এই দুটির সমন্বয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য্য ছাড়া প্রথম বাধাতেই হতাশ হয়ে ভেঙে পড়বেন। আর বাজার, প্রযুক্তি ও গ্রাহকের চাহিদা দ্রুত বদলায়। সেই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে ও ব্যবসার মডেলকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার (Adapt) ক্ষমতা না থাকলে টেকসই সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। এই দুটি গুণই সফলতার মূলমন্ত্র জানার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।