বিনোদন ডেস্ক : রান্না বিষয়ক একটি টিভি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন কলকাতার অভিনেত্রী সুদীপা চ্যাটার্জি। সঞ্চালক হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারিন জাহানকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সুদীপা বলেন, ‘তুমি আমাকে প্রথম খাওয়াবে, আমি এখন গেস্ট।’ জবাবে তারিন বলেন, ‘তুমি যেহেতু গেস্ট, সুতরাং হোস্ট হিসেবে আমি আগে রান্না করে খাওয়াব।’ এরপর সুদীপার প্রশ্ন কী খাওয়াবে? তারিন বলেন, ‘তোমার উপলক্ষে এই পদটি দর্শকদের দেখাব। এটা হচ্ছে গরুর মাংসের কোফতা।’
বাংলাদেশের রান্না বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রচার হয়েছে পর্বটি। কিন্তু রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানের এই অংশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ ওপার বাংলার নেটিজেনরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেননি। সুদীপা একজন হিন্দু হয়ে গরুর মাংসকে ‘প্রোমোট’ করার অভিযোগ এনে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছেন তারা।
কমেন্টে একজন লেখেন, ‘ওনার বাড়িতে নাকি মা দুর্গার পূজা হয়। ছি!’ আরেকজন লেখেন, ‘এই মহিলা এখন গরুর মাংস প্রোমোট করছে। আর কত নিচে নামবে।’ দেবব্রত নামে একজন লেখেন, ‘গরুখোর নির্লজ্জ সুদীপা চাটার্জি নিপাত যাক।’ সজল কান্তি নামে একজন লেখেন, ‘একজন সনাতনী ব্রাহ্মণ কন্যা হয়েও সনাতনীদের নিষিদ্ধ গরুর মাংসের কোপ্তা রান্না করতে সুদীপা চ্যাটার্জি কোনো প্রতিবাদ করেননি। বরং তিনি হাসিমুখে সেটা রান্না করেছেন এবং উপভোগ করেছেন।’
সুমন কর্মকার নামে একজন তারিনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সুদীপা বাংলাদেশে গিয়ে গরুর মাংস রান্না করছে, খাচ্ছে। এক সাথে শুয়োরের মাংসও রান্না করতে পারতি। দেখতাম, কেমন তোরা একবৃন্তে দুটি কুসুম। অবশ্য শুয়োরের মাংস রান্না করার কথা বললে, ওখানে তোর মাংস রান্না হয়ে যেত। এই বাঙালি আগামী দিনে নিজের ঘরের মা, বউ, মেয়ে কেউ রান্না করে খেয়ে ফেলতে পারে। কলকাতায় বেশ কিছু হিন্দু নামধারী বিধর্মী বসবাস করে।’ পাশাপাশি টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।
এ পরিস্থিতিতে তারিন জাহান নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তারিন জাহান বলেন, “এপার বাংলা, ওপার বাংলার নানা পদ নিয়ে রান্নার অনুষ্ঠান ‘রাঁধুনী এপার ওপারের রান্না’। কোন পর্বে, কী পদ রান্না হবে তার চিত্রনাট্যে আগে থেকেই ঠিক করা হয়ে যায়। এই রান্নার অনুষ্ঠানকে ঘিরে যত বিতর্ক। আর আমি এই বিতর্কে না চাইতে জড়িয়ে পড়লাম। মনে হলো, নিজের কথাগুলো পরিষ্কার করি।”
ব্যাখ্যা করে তারিন জাহান বলেন, ‘ঈদের সময় দর্শকের কথা মাথায় রেখে গরুর মাংসের একটি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আমরা দর্শকদের জন্য ওই রান্না দেখিয়েছিলাম। আমি কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে সুদীপাদিকে গরুর মাংস খেতে বলেছি বা আমি গরুর মাংস খাওয়াব বলেছি এমন নয়। আমরা খাওয়া তো দূর, ছুঁয়েও দেখিনি। ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যে কেউ দেখতে পারেন।’
‘ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রত্যেকের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে সম্মান করি। এভাবেই মা-বাবা আমাকে বড় করেছেন। বাংলাদেশেও অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা হয়। এখানেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আছে। দুর্গাপূজা হয়। আমরা মণ্ডপে যাই। ধর্ম নিজস্ব। কিন্তু উৎসব সকলের।’ বলেন তারিন জাহান।
সুদীপা চ্যাটার্জিও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ বিতর্ক জন্ম দিতে ভালোবাসেন। এর আগেও এটা দেখেছি। তবে তারা কেউই সত্যিটাকে জানতে চায় না। কেউই দেখেনি নিজের চোখে। যতজন এই নিয়ে বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেছে, তারা জানেই না পুরো ব্যাপারটা। আমি না গরুর মাংস খেয়েছি, না গরুর মাংস রান্না করেছি।’
‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। তাদের দেশের জাতীয় খাদ্যের মধ্যে পড়ে গরুর মাংস। কারো ধর্মীয় রুচিতে বাধা দেওয়া আমার শিক্ষার মধ্যে নেই। আমি যদি নিজের ধর্মকে সম্মান করি, তাহলে অন্যের ধর্মাচরণে বাধা দিতে পারি না, এটা আমার মত।’ বলেন সুদীপা চ্যাটার্জি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।