লাইফস্টাইল ডেস্ক : দেহের ডান দিক আর বাম দিক দেখতে প্রায় একই রকম হলেও কার্যকরণে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কেউ ডানহাতি কেউ বাঁহাতি; তবে দুপাশ সমান মাত্রায় ব্যবহার করেন এরকম মানুষের সংখ্যা বিশ্বে এক শতাংশ।
এই তথ্য জানিয়ে পেশাদার খেলোয়ারদের মানসিক-শারীরিক মার্কিন প্রশিক্ষক ডানা স্যান্টাস বলেন, “দেহের একটা দিক বেশি কর্মক্ষম অন্যদিক একটু দুর্বল- এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন শক্তিশালী দিকটা দিয়ে বেশি কাজ করা হয়।”
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ছোটখাট কাজে তেমন সমস্যা হয় না। তবে ভারী বা দীর্ঘক্ষণ ধরে করতে হয় এরকম কোনো কাজ দেহের এক পাশ দিয়ে বেশি করলে ব্যথা, পেশিতে টান পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।”
আর এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হল দেহের দুই পাশকেই সচল রাখার চেষ্টা করা।
দেহের একপাশ দিয়ে বেশি কাজ করার সমস্যা
পেশাদার খেলোয়ারদের প্রশিক্ষক হিসেবে স্যান্টাস বলেন, “অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যে বাস্কেটবল খেলোয়াড় তার বেশি সক্রিয় হাত দিয়ে বল ছুড়ছেন সব সময়, পরে সেই হাতের ব্যথা নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হয়েছে।”
“তবে আপনি হয়ত পেশাদার খেলোয়াড় না, যে কারণে দেহের এক পাশের ওপর সব-সময় জোর দিতে হবে। তবে চিন্তা করে দেখুন- সুপার মার্কেটের যে ক্যাশিয়ার শুধু ডান হাত দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বা কোনো মা শিশুকে বেশিরভাগ সময় কোমড়ের একদিকেই নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি আঘাতের মাত্রা বেড়ে যাবে যদি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়।”
দেহের একপাশ দিয়ে বেশি কাজ করার আরেকটি সাধারণ প্রবণতা বেশি দেখা যায় যখন কোনো আঘাত থেকে সেরে ওঠা হয়।
স্যান্টাস বলেন, “ধরা যাক আপনার যে দিকটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল সেদিকের পা মচকে ফেলেছেন। তখন দেহের যে পাশটা বেশি কর্মক্ষম সেটার ওপর বেশি নির্ভশীল হয়ে যেতে হয়। এমনকি পা মচকানো সেরে গেলেও একই কাজ করে যেতে থাকবেন। কারণ ততদিনে আপনি আরও বেশি কর্মক্ষম দিকটায় নির্ভশীল হয়ে গেছেন।”
দৈনিক কার্যক্রম থেকে ভারসাম্যহীনতা চিহ্নিত করা
দৈহিক নড়াচড়ায় দুপাশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলার প্রধান চাবিকাঠি হল সচেতনতা- পরামর্শ দেন স্যান্টাস।
সারাদিন কীভাবে কাজ করছেন সে দিকে নজর দিতে হবে। আর সাধারণ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে অদল বদল করে কাজ করা সম্ভব।
যেমন- যদি একদিকে ব্যাগ বহন করার অভ্যাস থাকে তবে সেটা বাদ দিয়ে নিয়মিত পাশ বদল করে বহন করতে হবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার সময় যদি এক পায়ে ভর বেশি দেওয়া হয় তবে দুপায়েই নিয়ম করে ভর পরিবর্তন করতে হবে।
এমনকি প্রতিদিন যদি সোফার একপাশে বসে টিভি দেখার অভ্যাস থাকে, তবে সময়ে সময়ে পাশ বদল করেও সার্বিকভাবে দেহের অপেক্ষাকৃত দুর্বল দিকটা সচল করা যায়।
যদিও হাঁটার ক্ষেত্রে মনে হতে পারে ভারসাম্যহীনতা নেই। তবে এরপর হাঁটার সময় খেয়ার করুন কোন দিকটা বেশি চাপ দিচ্ছেন। আর এটা বোঝার সহজ উপায় হল কোন পায়ের জুতা বেশি ক্ষয় হয়েছে।
স্যান্টাস বলেন, “সাধারণভাবেই আমরা দেহের একপাশ দিয়ে বেশি কাজ করতে অভ্যস্ত। তবে কিছু বিষয় হয়ত পরিবর্তন করা যায় না। যেমন- কলম দিয়ে লেখা বা এই ধরনের কোনো কাজ।”
তবে ভারসাম্য রক্ষার বিভিন্ন ব্যায়াম ও দৈনিক চর্চার মাধ্যমে দেহের দুপাশকে প্রায় সমানভাবে কর্মক্ষম করে তোলা যায়।
ভারসাম্যের জন্য ব্যায়াম
শুনতে হয়ত উল্টা লাগতে পারে, তবে দেহের একপাশ দিয়ে ব্যায়াম করার মাধ্যমে দুপাশের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনা যায়।
পদ্ধতিটা হল একবার ডান পা ও হাতের ব্যায়াম করা। পরপরই একই সময় ধরে বাম পা ও হাতের ব্যায়াম করা। এভাবে শরীরচর্চার মাধ্যমে শুধু সামঞ্জস্যহীনতাই দূর করা যায় না, পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা পুনরায় হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
স্যান্টাস এক্ষেত্রে ‘ডাম্বেল’ ব্যাবহার করার পরামর্শ দেন। দুপাশে আলাদা আলাদা ভাবে একই হারে ডাম্বেল দিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও ‘সিঙ্গেল লেগ রোমানিয়ান ডেড লিফ্ট’ ‘সিঙ্গেল আর্ম শোল্ডার প্রেস’ ও ‘সিঙ্গেল আর্ম রোস’ ব্যায়ামগুলো বেশ কার্যকর।
এক্ষেত্রে একজন ব্যায়াম প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শরীরচর্চার করার পরামর্শ দেন তিনি।
সংশোধন-মূলক ব্যায়ামের অন্য সুবিধা
সাধারণ দুপাশের ব্যায়ামের তুলনায় একপাশ ধরে ব্যায়াম করার আরেকটি সুবিধা হল, যখন দেহের একপাশের ব্যায়াম করা হয় তখন অন্য পাশটারও গতি বাড়ে।
এই বিজ্ঞান সমর্থিত ব্যায়ামকে বলা হয় ‘ক্রস এডুকেইশন ট্রেইনিং’- জানান স্যান্টাস।
সাধারণ দেহের একপাশের আঘাত সারিয়ে তুলতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও, যারা সুস্থ তাদের ক্ষেত্রেও দেহের ভারসাম্যতার সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
স্যান্টাস বলেন, “দেহের দুর্বল দিকটা নিয়ে তাই বলে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না। খালি দৈনিক কার্যক্রমে ওপরের বিষয়গুলো পালন করতে থাকুন। তাহলেও একসময় দুর্বল দিকটা আরও সচল হয়ে উঠবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।