জুমবাংলা ডেস্ক : বছরের এ সময়ে যতো বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হয়ে থাকে তা বেশিরভাগ সময় সন্ধ্যায় বা ভোর রাতে হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যায়, আবার কোনো কোনো এলাকায় রাতে হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত দুই দিন ধরে ভোর রাতে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয় দেশের প্রায় সব জায়গায় সন্ধ্যায় কিংবা ভোর রাতে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।
কিন্তু এর কারণ কি জানতে চাইলে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি আজ শুক্রবার সকালে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরের এ সময়ের ঝড়-বৃষ্টির ধরনই সন্ধ্যায় কিংবা ভোর রাতে হওয়া।’
গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধগাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু ছাড়া বৃষ্টি হবে না। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস আসে সন্ধ্যার পর। একই সময় দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পশ্চিমা বাতাস আসে। উভয়ের বাতাসের মিলিত প্রভাব বৃষ্টির জন্য উপযোগিতা পায় সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত। তাই মূলত সন্ধ্যার পর কিংবা ভোর রাতে বৃষ্টি হয়ে থাকে।’
আবহাওয়াবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার তুলনায় ভোর রাতেই বেশি ঝড়-বৃষ্টি হয়ে থাকে। বছরের এ সময়ে দিনভর তাপমাত্রা বেশি থাকার পাশাপাশি বাতাস উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয়। আর উত্তরের বাতাসে গতি থাকলেও তা জলীয়বাষ্পহীন। সন্ধ্যার পর বাতাসের দিক পরিবর্তিন হয়ে দক্ষিণ দিক থেকে আসে। আর এই বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকে।
এই বাতাসের গতিবেগ কম থাকায় ঘনীভূত হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বৃষ্টি ঘটায়। বাতাস ঘনীভূত হতে অনেক সময় ভোর রাত পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর এ কারণে স্বল্প সময়ের জন্য ঝড়-বৃষ্টি ঘটিয়ে জলীয়বাষ্প হারিয়ে শুস্ক বায়ুতে পরিণত হয় এবং সকালে রোদ ঝলমলে দেখা যায়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, মাইজদি, ফেনী ও কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাঙ্গামাটিতে।
কবে নাগাদ সারা দেশে বৃষ্টি হবে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘রবিবার থেকে দেশজুড়ে কমবে তাপমাত্রা। সারা দেশেই কালবৈশাখীর তাণ্ডব দেখা দিবে এবং কমে আসবে গরমের তীব্রতা। ইতোমধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা কমে এসেছে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২ মে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব হলো। চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় সব এলাকায় এবং সিলেট ও রংপুর বিভাগেও বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। আর কাঙ্খিত বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রার পারদ কমে আসায় গরমের তীব্রতা কমে এসেছে। দেশজুড়ে আজ শুক্রবার তাপমাত্রা আরো কমবে কিন্তু শনিবার আবারো বাড়বে। তবে রবিবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হতে যাওয়া কালবৈশাখীর প্রভাবে সপ্তাহজুড়ে শীতলতা থাকবে।
অপরদিকে চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসেও মৃদু মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। একইসাথে শিলা বৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব দেখা যাবে। আবার মাসের শেষার্ধে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া একাধিক লঘুচাপের মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এদিকে এপ্রিলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড হয়েছে। একইমাসে দেশে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত এপ্রিলের পুরো মাস জুড়েই ছিল তাপপ্রবাহ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল গত ৩০ এপ্রিল যশোরে। গরমে সারা দেশের আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এবং বাতাসও গরম ছিল।
উল্লেখ্য, ১ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে এবং ২০ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেল। সাধারণত কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি হলে মাঝারি ও ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হয়ে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।