জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে গত চার বছরে এইডসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগের তথ্য গোপন, নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাপন ও সচেতনতার অভাবে তরুণদের মধ্যে এ হার বাড়ছে।
ঢাকার মহাখালীতে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এইডস আক্রান্তদের জন্য রয়েছে ২৫ শয্যার একটি ইউনিট। বছরের বেশিরভাগ সময় এটি রোগীতে থাকে পূর্ণ; কখনও কখনও সংকুলান হয় না মেঝেতেও।
হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছে ১০ বছরের শিশু গোলাপ (ছদ্মনাম)। বাবা ও মা দুজনেই এইচআইভি পজিটিভ হওয়ায় শিশুকালেই বহন করছে এ ভাইরাস। বাবা আফ্রিকা প্রবাসী, আর এইডসে আক্রান্ত মা মারা গেছেন তিন মাসে আগে। এ বয়সে আপনজন বলতে আছেন দাদা ও দাদি। বছরের বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকতে হয় শিশুটিকে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, তরুণদের অবাধ ও অনিরাপদ যৌনাচার, নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাপন এবং ব্যবহৃত সুঁই দিয়ে মাদকগ্রহণে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া, তথ্য গোপন এবং দেরিতে শনাক্ত হওয়ায় বাসা বাঁধছে ভাইরাসটি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৬৫৮ জন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৯, ২০২২ সালে ৯৪৭ এবং ২০২৩ সালে ১ হাজার ২৭৬ জনে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, চলতি বছরেও বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়স ১৪ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ জন করে রোগী আসছেন। ওপেন মাইন্ডেড হওয়ার কারণে দিন দিন এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণ, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার, কনডম ছাড়া যৌনমিলন এবং আক্রান্ত মা থেকে গর্ভাবস্থায় অথবা বুকের দুধ খাওয়নোর মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগ। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা কিংবা তার ব্যবহৃত থালাবাসন অথবা পোশাক ব্যবহার করা এবং হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এইডস ছড়ায় না।
ঢাকার জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার বলেন, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি! এক্ষেত্রে এটাও একটা কারণ হতে পারে। আমাদের অনেক মানুষ দেশের বাইরে কাজ করছেন। আমাদের হাসপাতালে এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যারা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে এ রোগের ভাইরাস বহন করে দেশে এসে ধরা পড়ছে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে; স্ত্রী থেকে বাচ্চার মধ্যে ছড়াচ্ছে। এভাবেই দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়টাতে নজর দেয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ‘২০ থেকে ৩০ বছর আগে এইচআইভি নিয়ে যে ধারণা ছিল, সেটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ ভাইরাসটি এখন নিরাময়যোগ্য। এটাকে বলে ফাংশনাল কিউর। এর মানে হচ্ছে, আপনি ওষুধ খাবেন, ভালো থাকবেন। ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের রোগীদের মতো এইচআইভি রোগীদেরও সারাজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। ওষুধ খেলেই সে ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তানও ধারণ করতে পারবেন নারীরা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।