লাইফস্টাইল ডেস্ক : পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই দীর্ঘায়ু পেতে চান। কিন্তু শুধু দীর্ঘায়ু পেলেই হবে না, দীর্ঘ দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটও জরুরি। দীর্ঘ দিন সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য কোন কোন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, জীবনধারায় কোন কোন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন জেনে নিন।
ডিএনএ রক্ষা করা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের ক্রোমোজোমের স্বল্পতা দেখা দেয়। যা মানুষকে অসুস্থতার দিকে ধাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক খাবার ও শরীরচর্চার মাধ্যমে এগুলো রক্ষা করা সম্ভব।
জেতার জন্য খেলো
দীর্ঘ ৮০ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কোনো একটি কাজকে সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য ঘটনার গভীরে যায় এবং চিন্তা করে তারা দীর্ঘদিন বাঁচে।
বন্ধু তৈরি করো
‘বন্ধু’ শব্দটি ছোট, কিন্তু এর গভীরতা অনেক। বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি সীমাহীন। বন্ধুত্বের কোনো বয়সসীমা নেই। সমবয়সীরাও যেমন বন্ধু হতে পারে, তেমনি বয়সে ছোট-বড়রাও বন্ধু হতে পারে। মনের মিল হলেই বন্ধু হওয়া যায়। দীর্ঘায়ুর জন্য জীবনে বন্ধু খুব প্রয়োজন।
ভালো বন্ধু খোঁজো
প্রিয় বন্ধু চিরদিনের। ভালো বন্ধুত্ব কখনোই হারিয়ে যায় না। দুজন ভালো বন্ধু কখনোই একে অপরকে ভুলে যাবে না বরং আরো বেশি করে একে অপরকে মনে করবে এবং সময় পেলেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে খুনসুটি করবে, এমনই হতে হবে বন্ধুত্ব। রাগ অভিমান করে পরস্পরকে ভুলে গেলে সেটা কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়। তাই বন্ধুত্বে বিশ্বস্ত থাকা যায় এমন ভালো বন্ধু জীবনে খুব দরকার।
ধূ’ম’পা’ন ত্যাগ করা
আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর এক সমীক্ষা বলছে, যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সুস্থ ভাবে দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য ধূ’ম’পা’নে’র অভ্যাস গোড়াতেই ত্যাগ করতে হবে— এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
পর্যাপ্ত ঘুম
জীবনের অন্যতম আরামদায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে ঘুম। ঘুম আমাদের মেটাবলিজম সিস্টেম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। জীবনে স্থিতি দেওয়ার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে। হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে রাখে। লং আর শর্ট টার্ম মেমোরি গুছিয়ে রাখাসহ স্মৃতিশক্তি গুছিয়ে জড়ো করে রাখে। শারীরিক, মানসিক ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য জীবনের মোট সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ভুলে গেলে চলবে না আট ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে সবচেয়ে ভালো রাখে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ডায়েট ফলো করা
দীর্ঘায়ুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ডায়েট ফলো করতে হবে। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইটোকেমিকল উচ্চ মাত্রায় থাকে, সে খাবারগুলো আমাদের মস্তিষ্ক কর্মোদ্যম রাখে। টমেটো বা তরমুজে লাইপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা মুক্ত আয়নকে শরীর থেকে বের করে দেয়। এই মুক্ত আয়ন বার্ধক্যজনিত একটি সমস্যার কারণ। গাঢ় সবুজ শাক যেমন কলইশাক বা পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘কে’ থাকে। যা স্মৃতি হ্রাস হয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে রাখে এবং মস্তিষ্ক বুড়িয়ে যেতে দেয় না।
ওকিনাওয়ানদের মতো খাওয়া
জাপান ও ওকিনাওয়ানরা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ জীবন পায়। কারণ তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পদ্ধতি। সবুজ এবং হলুদ সবজি বেশি খায় তারা এবং এগুলোর ক্যালরি অনেক কম। কিছু ওকিনাওয়ান তাদের খাবারের ৮০% খায়।
বিয়ে করা
২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।
ওজন কমানো
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ‘মেটাবোলিজম’ কমতে থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বেশি বেশি ব্যায়াম এবং কম ক্যালরি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
শরীরচর্চা করা
অনেক বয়স পর্যন্ত নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে সাঁতার, হাঁটাহাঁটি এবং সাইক্লিংয়ের মতো শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। যেগুলো হৃদপেশির সংকোচন-প্রসারণ ত্বরান্বিত করে শরীরকে ভালো রাখে হৃদপিণ্ডকেও সুস্থ রাখে।
ম’দ্যপান নয়
‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া বেশ কয়েকটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, যারা সপ্তাহে ১৪ পেগ ম’দ্যপান করেন, তাদের ছয় মাস পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে। যারা সপ্তাহে ১৪ থেকে ২৫ পেগ পর্যন্ত মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে আয়ু কমে যেতে পারে এক থেকে দুই বছর। আর যারা সপ্তাহে ২৫ পেগের বেশি মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে আয়ু পাঁচ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া
পৃথিবীতে বহু অনিষ্টের কারণ হলো রাগ বা ক্রোধ। এ রাগের ফলে মানুষ সম্মানিত হওয়ার পরিবর্তে লজ্জা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। তাই কারো দ্বারা কোনো ক্ষতি বা অন্যায়মূলক কাজ হয়ে গেলেও রাগ না করে ক্ষমা করা বা ধৈর্য ধারণ করা উচিত। কারণ রাগ নয় ক্ষমায় রয়েছে প্রকৃত মানুষের সাফল্য।
দূর্ঘটনা থেকে বাঁচতে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা
মটরসাইকলে বা সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট মাথাকে যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করে। তাই অবশ্যই বের হবার আগে হেলমেট সঙ্গে নিতে হবে। হেলমেট না থাকায় মোটর সাইকেল দ্বারা সংঘটিত অধিকাংশ দুর্ঘটনায় মৃত্যুই হয়ে থাকে।
জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা রাখা
আমরা জীবনে কী চাই কিংবা আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত— এ সম্পর্কে একটা ধারণা থাকা প্রত্যেক মানুষের দরকার। আশাবাদী মানুষ সব সময় সফল হয় এবং তারা তাদের লক্ষ্যকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। দীর্ঘায়ুর জন্য আমাদের লক্ষ্য ও চাহিদা সে পর্যন্তই থাকা উচিত, যে পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পারব। কাল্পনিক বা অসম্ভব কোনো লক্ষ্য ও চাহিদা আমাদের থাকা উচিত নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।