সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ার কারণে সরকারি চাকুরিজীবী স্বামীর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে এক গৃহবধুকে।
মানিকগঞ্জ পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) এর ইনস্ট্রাক্টর রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে অন্য নারীর প্রতি আসক্তিসহ পরকীয়ার কারণে সংসার ভাঙ্গনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে এক সন্তানের জননী পাপিয়া আক্তার।
তবে ওই কর্মকর্তা দ্বিতীয় বিয়ের কথা অস্বীকার করলেও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কথোপথনের একটি অডিও আসে এই এই প্রতিবেদকের কাছে। সেই অডিওতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকারও করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বামীর নির্যাতনসহ নানা অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেন পাপিয়া আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, রবিউল আওয়াল বেকার থাকাবস্থায় ভালোবেসে ২০১৭ সালে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের ১০ মাস পর স্বামীর চাকুরি হয় পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর পদে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে তাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। স্বামীর কর্মস্থল ফেনিতে যোগদান করেন। ২০২০ সালে এক নারী শিক্ষকের সাথে কেলেংকারী ঘটনার পর পটিয়াতে তার স্বামীকে বদলী করা হয়। পটিয়াতে যাওয়ার পর ওই নারী শিক্ষক (ফেনীর ফুলগাজী পশ্চিম বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা আক্তার) এর সাথে সম্পর্কে চালিয়ে যায়।
ওই নারীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক জানার পর তাকে সংশোধনের চেস্টা করলে সে তার উপর অত্যাচার শুরু করে। এরপর তিনি স্বামীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে ওই নারীর কাছ থেকে একটি মুচলেকা নেওয়ার হয়। মুচলেকায় তারা আর কোনো সম্পর্কে না জড়ানোর কথা বলেন। এরপর ২০২৩ সালে জুলাই মাসে তার স্বামীকে মানিকগঞ্জ পিটিআইতে বদলী করা হয়। মানিকগঞ্জ আসার পর থেকে তার স্বামী তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে তার স্বামী তাকে ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে তালাক দেন। এই ঘটনায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি অভিযোগ দেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় তাদের পুনঃরায় বিয়ে হয়। কিন্তু পুনঃরায় বিয়ে হলেও তার স্বামী গোপনে ওই নারীকে নিয়ে ঢাকায় হোটেলে রাত্রীযাপন করেন।
বিষয়টি জানার পর তার স্বামী ওই নারীকে বিয়ে করবে মর্মে তার কাছে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট দ্বিতীয় বিয়ে জন্য স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর চান। তিনি ওই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর না করার কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সেই সাথে ওই নারীকে গোপনে সে বিয়ে করেছে। এখন দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দিলে তার চাকুরি চলে যাবে। এর জন্য সে ব্যাকডেট দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি স্বামীর দেওয়া শর্তে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়াতে গত মাস থেকে রবিউল আওয়াল পাপিয়া আক্তার ও তার সন্তানের কোনো ভরণপোষন দিচ্ছেন না। পাপিয়া বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর মানিকগঞ্জের ভাড়া বাসায় তালা লাগিয়ে দেন রবিউল আ্ওয়াল। পরে তিনি অন্য ভাড়াটিয়ার সাহায্যে ওই বাসার তালা খুলেছেন।
পাপিয়া আক্তার জানান, তার স্বামীকে সে সংশোধন করার চেস্টা করেছেন। কিন্তু সে সংশোধন হয়নি। সে একজন নারী লোভি নরপশু। পিটিআইতে চাকুরি করার কারণে অনেক শিক্ষিকাদের সাথে তার স্বামীর সম্পর্কে রয়েছে। ফুলগাজী পশ্চিম বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের কারণে স্বামী তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে। এখন আমার একটাই দাবি আমার সন্তান যেন তার বাবা ও পরিবার না হারায়।
এ ব্যাপারে পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর রবিউল আওয়ালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাপিয়া আক্তার এখন আমার স্ত্রী নয়। সে অবাধ্য হওয়ার কারণে গত মাসে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ে অনুমতি না দেওয়ার কারণে তালাক দিয়েছেন কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আর দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজন নেই। পাপিয়া একজন সন্দেহপ্রবণ নারী। সে অফিসে এসে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। এ ধরনের মানুষের সাথে সংসার করা যায় না। তবে তিনি ওই নারীকে বিয়ে করেননি বলে দাবি করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।