সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : বাংলাদেশে শিল্পায়ন হচ্ছে। শিল্প কারখানা না থাকলে ছেলে-মেয়েদের কাজের সুযোগ নেই। দেশে শিল্প কারখানাও হতে হবে। তবে তা কৃষি জমি নষ্ট করে নয় বলে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাগ-বানিয়াজুরি এলাকায় ব্রি ধান ৯২ জাতের বীজ উৎপাদনকারী ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা মাঠে কাজ করতে চায় না, কাজও নেই। আমরা মেশিন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছি। আমরা কম্বাইন হার্বেস্টার, ধান লাগানোর যন্ত্র, ধান মারাইয়ের যন্ত্রসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর আমাদের ২৪ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি ইউক্রেনের যুদ্ধ, করোনা এই সকল কারণে বিদেশ থেকে তেল আসছে না। ৬০০ ডলার টনের ভোজ্য তেল বেড়ে হয়েছে ১৮০০-২০০০ ডলার টন। শিপের ভাড়া বাড়ছে, জাহাজের ভাড়া বাড়ছে। তার জন্য তেলের দাম কমানো যাচ্ছে না।
‘বাংলাদেশে যদি কৃষি না হয় দেশ টিকে থাকবে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে সেখান থেকে গম আসে না। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ হাতছানি দিয়েছে। কাজেই কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে হবে।’
দেশে খাদ্যশস্য যথেষ্ঠ আছে, কোনো হাহাকার নেই মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও বিএনপির ফখরুল ইসলাম প্রতিদিন টেলিভিশনের সামনে আসেন। তাদের বক্তব্য- বাংলাদেশ ডুবে গেল, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরল। এরকম একটা অবস্থা। মনে হয় যে, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ, শকুনেও লাশ খেয়ে শেষ করতে পারবে না। এমন একটা পরিস্থিতি বাংলাদেশে চলতেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৩-০৬ সালে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ক্ষমতায় ছিল। এসময় প্রতি বছর শত-শত মানুষ আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার কারণে না খেয়ে মারা গেছে। এই ১৩ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একজন মানুষ না খেয়ে মারা গেছে এই তথ্য যদি কোনো সাংবাদিক দেখাতে পারে, তাহলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেব।’
তিনি বলেন, ব্রি ধান ৯২ জাতের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, একজন শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক- সেও সরু চাল খেতে চায়। ৯২ জাতের ধান থেকে পাওয়া চাল চিকন। এ যাবত কালের সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীন ৯২ জাতের ধান। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি শতকে কমপক্ষে এক মণ ধান পাওয়া যায়। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নতুন-নতুন জাত উদ্ভাবন করছে। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। সবার মুখে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি।
‘৭১-এর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ। জমি ছিল মাথাপিছু ২৮ শতাংশ। এখন সতেরো কোটি মানুষ, জমি মাথাপিছু ১০ শতাংশ। আগে খাদ্যের অভাব ছিল, খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্যের জন্য পৃথিবীতে আমরা খাদ্যের ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। অন্য দেশের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া মানুষকে খাওয়ানো কঠিন হয়ে যেত। তখন দেশে দুর্ভিক্ষ হতো। প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা হতো। কোনো মানুষের ঘরে খাবার থাকত না। সেই বাংলাদেশে আজকে কোনো মানুষ দুই বেলার কম খায় না। সবাই দুই বেলার বেশি খায়। কোনো কোনো বছর খাদ্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে। আমরা বহির্বিশ্বে তা রপ্তানি করছি। আমদের এই সাফল্য এবং অর্জন সফল হয়েছে সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে।’
এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, ঘিওর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।