জুমবাংলা ডেস্ক : তীব্র সংকটের মধ্যে ডলারের দাম আরও একদফা বাড়ল। আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারে বেড়েছে ৫০ পয়সা করে। তবে আন্তঃব্যাংকে অবিশ্বাস্যভাবে প্রতি ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৩ টাকা করে। আগে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এখন হবে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা। ডলারের নতুন দর আজ থেকে কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের লাইসেন্সধারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের দাম ওইভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ব্যাংকাররা আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে একমত হলেও আন্তঃব্যাংকে এত বেশি মাত্রায় বাড়ানোর পক্ষে মত দেননি। একপর্যায়ে ব্যাংকারদের মতামতকে উপক্ষো বাফেদার শীর্ষ নির্বাহীরা আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ানোর ঘোষণা দেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের অনেকে বলেছেন, আন্তঃব্যাংকে ডলারের বাড়তি দর কতটুকু কার্যকর করা সম্ভব হবে তা কিছু দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোতে বাফেদা থেকে চিঠি পাঠানোর আগ পর্যন্ত পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে।
কয়েকজন ব্যাংকার বলেছেন, আন্তঃব্যাংক ডলার বাজার স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ ডলার লেনদেন করতে চায় না। ওই বাজারকে চাঙা করার জন্য আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেশি মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা। আগে ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এতে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৫০ পয়সা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদেশে ফি পাঠানো, ভ্রমণ, চিকিৎসা খাতসহ অন্যান্য খাতে প্রতি ডলারের দামও ১১১ টাকা হবে। আগে ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এসব খাতেও বেড়েছে প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা করে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে প্রতি ডলারের দাম হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ছিল ১১০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৫০ পয়সা করে। এছাড়া অন্যান্য রেমিট্যান্স বা বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ছিল ১১০ টাকা। এ খাতে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৫০ পয়সা করে।
আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম আগে ছিল সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এখন হবে ১১৪ টাকা। এ খাতে প্রতি ডলারের দাম বাড়ছে সাড়ে ৩ টাকা। আগে নিয়ম ছিল ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা করতে পারবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার ১১০ টাকা করে কিনে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে বিক্রি করত। ফলে ব্যবধান ছিল ৫০ পয়সা।
এখন প্রতি ডলার কিনবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে। এর মধ্যে নিজেদের ব্যবহারের পর অতিরিক্ত ডলার থাকলে তা আন্তঃব্যাংকে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বিপরীতে যে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পড়ছে প্রায় ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা। এ হিসাবে আন্তঃব্যাংকে ১১৪ টাকা বিক্রি করলে সর্বোচ্চ মুনাফা হচ্ছে ৫০ পয়সা। কিন্তু ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক থেকে ১১৪ টাকা করে ডলার কিনে সেগুলো আমদানি বা ঋণ পরিশোধ বা অন্য কোনো কাজে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করবে। এ খাতে বিক্রির সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১১১ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলারের ৩ টাকা লোকসান দিতে হবে। এই লোকসান দিয়ে কোনো ব্যাংক আন্তঃব্যাংক থেকে ডলার কিনবে না বলে জানান ব্যাংকাররা। তারা আরও বলেন, আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ১১৪ টাকা হলে গ্রাহকদের কাছে বিক্রির দর হওয়া দরকার ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু সেটি করা হয়নি। আন্তঃব্যাংককে সক্রিয় করার জন্য এটি করা হলেও বাস্তবে তা কোনভাবেই সক্রিয় না হয়ে উলটো আরও স্থবির হয়ে পড়বে।
এদিকে অনেকে মনে করেন, আগামীতে ডলারের দাম আরও বাড়বে সে লক্ষ্যেই বাজারের এমন একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম এত বেশি বাড়ানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।