লাইফস্টাইল ডেস্ক : লিভার মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি বিপাকের কাজ করে। এছাড়া হজমেও সাহায্য করে। ফ্যাটি লিভার মানে হলো যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া এবং যকৃত একটু বড় হয়ে যাওয়া।
শরীরে উৎপন্ন বিষাক্ত কিছু পদার্থকে পরিবর্তন ঘটিয়ে কম ক্ষতিকারক পদার্থে পরিণত করে বিভিন্ন উপায়ে শরীরের বাইরে নির্গমনের কাজ করে লিভার। লিভার কখনোই বিশুদ্ধ পদার্থগুলো নিজের মধ্যে জমা করে রাখে না। লিভারে চর্বি জমলে সেখানে প্রদাহের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তখনই সিরোসিস অব লিভারের ঝুঁকি বাড়ে।
মানুষের লিভারে সাধারণত ৩-৪ পাউন্ড চর্বি থাকে। লিভার সেলের চারপাশেও কিছু চর্বি থাকে। এ চর্বির পরিমাণ কোনোভাবে বেশি হলে অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল হয়ে লিভার সিরোসিসের মতো জটিলতা হতে পারে। লিভারের মধ্যে সাধারণত ৫ শতাংশ চর্বি শোষণ হতে পারে। যদি ৫ শতাংশের ওপরে চর্বি জমা হয়ে থাকে, তখনই আমরা একে ফ্যাটি লিভার বলে থাকি।
ফ্যাটি লিভার দুই প্রকার, অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। প্রথমটি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এবং দ্বিতীয়টি অ্যালকোহল ছাড়া অন্য অনেক কারণে হয়ে থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্যাটি লিভারের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি গ্রহণ, ডায়াবেটিস এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ইত্যাদি।
ফ্যাটি লিভার স্বাভাবিক থাকলে অর্থাৎ লিভার অ্যানজাইমগুলো যদি না বেরিয়ে থাকে, লিভারে কোনো প্রদাহ না থাকলে তাকে স্বাভাবিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়। তবে ফ্যাটি লিভার থেকে লিভারে প্রদাহ হলে তাকে বলে স্ট্যাটো হেপাটাইটিস। অর্থাৎ ফ্যাটি লিভারের কারণে তার প্রদাহ হয়েছে।
এ ছাড়া থাইরয়েড হরমোনে কোনো সমস্যা থাকলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ডায়াবেটিস ওজন আধিক্য, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ফ্যাটি লিভারের রোগ প্রথমদিকে তেমন গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ না করলেও পরবর্তী সময়ে এর থেকে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভার নিয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগলে কিছু খাবার ও পানীয় আছে যা এড়িয়ে যেতে হবে। জেনে নিন কী কী-
মদ্যপান
নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের অন্যতম কারণ মদ্যপান। এর থেকে সিরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ফ্যাটি লিভারের রোগীদের উচিত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
কোমল পানীয়
কোমল পানীয় ছোট-বড় সবার জন্য ক্ষতিকর। কোমল পানীয়ে ইথিলিন গ্লারাইকোল নামে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, এটি প্রায় আর্সেনিকের মতোই বিষ। কোমল পানীয়তে ধরনের পানীয়ে সোডা মেশানো থাকে। পাশাপাশি থাকে হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ। এগুলো শরীরের জন্য খুবই খারাপ। তাই এই পানীয় নিয়মিত খেলে শরীরে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
ফ্রুট জুস
বাজারজাতকৃত জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজালমিশ্রিত, নিম্নমানের এবং মাত্রাতিরিক্ত এসিটিক এসিড থাকায় এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞের মতে, প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট জুস বা ফলের রসে কৃত্রিম মিষ্টি মেশানো থাকে। তাই এই পানীয় ফ্যাটি লিভারের রোগীদের পান করা উচিত নয়। কোমল পানীয়ে থাকা উপাদানসমূহ লিভারে চর্বি জমতে আরও সাহায্য করে।
স্পোর্টস ড্রিংকস
চাঙা থাকতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস বা এনার্জি ড্রিংকস পান করেন। এই পানীয়তেও বিভিন্ন পদার্থ মেশানো। যা লিভারেরও ক্ষতি করে। তাই এ ধরনের কোনও ড্রিংকস পান করার আগে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কফি
কফি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর কফি খেলে সতেজ হয় এবং শরীরে শক্তি আসে। তবে এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন মানুষকে জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তবে এই পানীয় বেশি পরিমাণে খেলেই শরীরের ক্ষতি হবে। তাই আপনি দিনে ৩-৪ কাপের বেশি কফি পান করবেন না।
ফ্যাটি লিভার রোধে করণীয়
ভিটামিন, মিনারেলস, আয়ুর্বেদিক ভেষজ ইত্যাদিও লিভারের দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়। অপরিমিত মাত্রায় এসব গ্রহণ করলে লিভারের স্বাভাবিক কাজ বেড়ে যায়, লিভারের ওপর বেশি চাপ পড়ে।
অনেক সময় পরিপূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিপূরক খাবার খেলে লিভারের ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ভেষজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
ওজন কমাতে ব্যবহার করা প্রাকৃতিক ভেষজ লিভারের ক্ষতিও করে। এমনকি অতিরিক্ত গ্রিন টিও লিভারের ক্ষতি করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, দানাশস্য, দুগ্ধজাতীয় খাবার, বিভিন্ন ফল, পর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত বা আঁশজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
অসময়ের ফল ও শাকসবজি না খাওয়াই ভালো। রোগের চিকিৎসার জন্য মেডিসিনে অনেক ওষুধ পাওয়া যায়, তবে আপনি আপনার জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমেও উপশম পেতে পারেন। যেমন আপেল সিডার ভিনেগার, লেবু, হলুদ, গ্রিন টি, পেঁপে, আমলকি, রসুন, ভিটামিন ই, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম, চিয়া বীজ ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য উপকারি। সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে, কোমল পানীয়ের বদলে তাজা ফলের রস ও পানি পান করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।