লাইফস্টাইল ডেস্ক : দুধ পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় এর সংরক্ষণ করতে হয় খুব সাবধানে। গুঁড়ো দুধের চাইতে তরল বা কন্ডেন্সড দুধ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কোথায় কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সেটা অনেকেরই জানা থাকে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক দুধ সংরক্ষণ করার জন্য কোন কন্টেইনার সবচাইতে নিরাপদ।
১. প্লাস্টিক কন্টেইনারে দুধ সংরক্ষণঃ
গৃহস্থালির নানা কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন কিছু না। নানাবিধ সুবিধার কারণে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে খাবার সংরক্ষণ করা সহজ। এমনকি ওভেনে রান্নার জন্য ওভেন-সেফ প্লাস্টিক কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপারটা যখন হয় দুধ সংরক্ষণ করার, তখন বাঁধে মহাবিপত্তি। বাজারের প্লাস্টিক পাউচে BPA এবং DEHA নামক কেমিক্যাল থাকে, যা দুধে মিশে যায় এবং পরবর্তীতে শরীরে প্রবেশ করে। আবার প্লাস্টিকের নিজস্ব কিছু কেমিক্যাল থাকে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব রাসায়নিক দুধে মিশলে দুধের স্বাদ ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
প্লাস্টিক কিন্তু একেবারে খারাপ নাঃ
তবে প্লাস্টিক কিন্তু একেবারে খারাপ না। প্লাস্টিক অস্বচ্ছ, তাই এটা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে দুধকে বাঁচায়। তবে কিছু কিছু প্লাস্টিকে আবার সূর্যের আলো সামান্য প্রবেশ করতে পারে। তখন দুধ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানের প্লাস্টিক দুধ সহ অন্যান্য খাবারের উপযোগী করে বানানো হয়। এই ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের উপাদান হচ্ছে HDPE, যা আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষিত। এই জাতীয় প্লাস্টিকের রাসায়নিক দুধের সাথে সহজে মিশে না। কিন্তু একেবারেই যে মিশে না তা কিন্তু না, ঝুঁকি থেকেই যায়।
প্লাস্টিক সহজে ছিঁড়ে না বা ফাটে না। তাই এটা ডিপ ফ্রিজে রাখা যায় নিশ্চিন্তে। বাজার থেকে তরল দুধ বা কন্ডেন্সড মিল্ক কিনে এনে প্রথমে আইস কিউব ট্রে তে ঢেলে বরফ করে নিতে হবে। এরপরে বরফ করা দুধের কিউবগুলো প্লাস্টিকের ফ্রিজার ব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
ফ্রিজার-সেফ প্লাস্টিক কন্টেইনারঃ
ব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ ভরতে হবে, পুরোটা ঠেসে ভরা যাবে না। যখন দরকার পড়বে প্রয়োজনমতো কিউব বের করে ব্যবহার করা যাবে। ফ্রিজার-সেফ প্লাস্টিক কন্টেইনার কিনতে পাওয়া যায় যা ডিপ ফ্রিজের উপযোগী করে বানানো। সেটাও ভরার সময়ে কিছুটা খালি রেখে ভরতে হবে। কারণ দুধ বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়বে।
প্লাস্টিকের কন্টেইনার সহজে ভাঙে না, দামেও কম, বহনেও আরাম। কিন্তু এগুলোতে দুধ বেশিদিন ভালো থাকে না। বোঁটকা গন্ধ বা ছাতা পড়ে যায় দুধে। আবার প্লাস্টিক সহজে পঁচে না। তাই এটি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আবার প্লাস্টিকের প্যাকেট বুকের দুধ সংরক্ষণের জন্য একদমই নিরাপদ না।
২. কাগজের প্যাকেটে দুধ সংরক্ষণঃ
অনেকে আছেন বাজার থেকে দুধ কিনে আনার পর প্যাকেটেই সংরক্ষণ করেন। বাড়তি কোন কন্টেইনার ব্যবহার করতে চান না। তাদের জন্য এই সেকশনটি। বাজারে শক্ত, মোটা কাগজের যে প্যাকেটে দুধ বিক্রি হয় তাকে বলা হয় টেট্রা প্যাক বা কার্ডবোর্ড মিল্ক কার্টন। এই ধরণের প্যাকেটে কয়েকটি লেয়ার থাকে সূর্যের বেগুনি রশ্মি, বাতাস, জল, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান এড়ানোর জন্য।
টেট্রা প্যাকঃ
টেট্রা প্যাকের মূল উপাদান হচ্ছে পলিয়েথিলেন। পলিয়েথিলেন একটি জলরোধক উপাদান। তাই টেট্রা প্যাক সহজে জল ঢুকতে পারে না৷ গবেষণায় দেখা গেছে পলিয়েথিলেন এক ধরণের ফুডগ্রেড প্লাস্টিক। এর রাসায়নিক দুধে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। টেট্রা বা কার্ডবোর্ড কার্টনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এগুলো পুরোপুরি অস্বচ্ছ। প্লাস্টিকের জার কিছুটা ট্রান্সপ্যারেন্ট হতে পারে কিন্তু শক্ত কাগজ কোনমতেই ট্রান্সপ্যারেন্ট হয় না। তাই সূর্যের আলো সহ অন্য যেকোন আলো প্যাকেটে ঢুকে দুধ নষ্ট করতে পারে না। আবার টেট্রা প্যাক রিসাইকেল করা যায় বলে এটা পরিবেশবান্ধব।
রুম টেম্পারেচারঃ
টেট্রা প্যাকে করে দুধ ফ্রিজেও রাখা যায় আবার রুম টেম্পারেচারেও রাখা যায়। তবে রুম টেম্পারেচারে রাখতে হলে রাখার জায়গাটা সম্পূর্ণ শুষ্ক এবং ঠান্ডা হতে হবে। গুঁড়া দুধ প্লাস্টিকের কন্টেইনারে ঢেলে রাখার চাইতে কাগজের প্যাকেটেই রেখে দেয়া ভালো। কারণ গুঁড়া দুধ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়, কন্টেইনারে ঢাললে দ্রুত ব্যবহার করার তাড়া থাকে।
প্যাকেটের দুধ প্যাকেটেই রাখতে চাইলে মুখ এয়ারটাইট করে আটকে টেবিল বা শেলফে রাখা যাবে। রান্নাঘরের তাকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে তাপ বা সরাসরি আগুন পৌঁছাতে পারবে না। গরম তাপে টেট্রা প্যাকের ভেতর ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার হয়ে ফুলে যায়। প্লাস্টিকের মতো ট্রেটা প্যাকেও পোকামাকড় হামলা করতে পারে। তাই এই ব্যাপারটায় খেয়াল রাখা জরুরি। টেট্রা প্যাক ডিপ ফ্রিজে রাখলে চাপে ফেটে যেতে পারে। তাই প্যাক দুই তৃতীয়াংশ ভরা অবস্থায় ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
৩. কাঁচের কন্টেইনারে দুধ সংরক্ষণঃ
কাঁচের কন্টেইনার বা বোতলে দুধ রাখা সবচাইতে ভালো। প্লাস্টিক ও কাগজের তুলনায় কাঁচ অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকে। ফলে দুধ দীর্ঘক্ষণ ভালো থাকে। প্লাস্টিক ও টেট্রা প্যাকে দুধ যতদিন ভালো থাকে, কাঁচের জারে তার চাইতে দ্বিগুণ বেশি সময় ভালো থাকে। কাঁচ তৈরি হয় বিশেষ ধরণের বালু থেকে, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। এতে বাড়তি কোন আর্টিফিশিয়াল উপাদান থাকে না। তাই দুধের সাথে বিক্রিয়া করারও কোন চান্স নাই। দুধের এনজাইম ও স্বাদ বজায় রাখতে সাহায্য করে কাচ। তাই কাঁচের বোতলে রাখা দুধ খেতেও বেশ টেস্টি হয় আর দ্রুত হজম হয়।
আবার কাঁচের বোতল চাইলে বহুবার ব্যবহার করা যায়। প্রতিবার ব্যবহারের পরে সাবান জলে ধুয়ে নিলেই যথেষ্ট। কাঁচ রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, যা পরিবেশ বান্ধব। কাঁচের বোতল বা জার চাইলে দুধ রাখার পরিবর্তে অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়৷ কাঁচের বোতলে এয়ারটাইট করে দুধ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়। গরু বা ছাগলের দুধ, সয়া মিল্ক, নাট মিল্ক, কোকোনাট মিল্ক, এমনকি বুকের দুধ সহ যেকোন দুধ কাঁচের বোতলে করে ফ্রিজে রাখা যাবে। রাখার আগে অবশ্যই বোতলের গায়ে দুধের মেয়াদের তারিখ লিখে রাখতে হবে। এতে দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
কাঁচের কন্টেইনা বেশি ভালোঃ
বাজার থেকে কিনে আনা মিল্ক পাউচ বা টেট্রা প্যাক থেকে দুধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাঁচের কন্টেইনারে ঢেলে ফেলা উচিত। নাহলে রুম টেম্পারেচারে প্যাকেটের কেমিক্যালের সাথে দুধের উপাদান বিক্রিয়া করার সুযোগ কম পাবে। কিনে আনার পর ফেলে রাখলে প্যাকেটের কেমিক্যাল দুধে হানা দিতে পারে। এরপরে সেটা কাঁচের জারে ঢাললে খুব একটা সুবিধা হবে না। কাঁচের কন্টেইনারেরও বেশ কিছু অসুবিধা আছে। এটা বেশ সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হয়, অসাবধান হলে হাত ফসকে ভেঙে যাবে। আবার কাঁচের বোতল তুলনামূলকভাবে বেশ ভারী হয়, যা বহনে কষ্টকর।
ভারী জিনিস বারবার ধোয়া আরেক কষ্ট৷ কন্টেইনারের মুখ প্রশস্ত না হলে ভিতরে সাবান জল রয়ে যাবে। পরবর্তীতে দুধের সাথে সেটা মিশে বিষ ক্রিয়া হবে। আবার সূর্যের আলোর নিচে থাকলে বেগুনি রশ্মি দুধের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। তাই ফ্রিজ বা অন্য যেকোন ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে কাঁচের কন্টেইনার সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।
প্লাস্টিকের তুলনায় কাঁচ দামী, তাই অনেকে দুধ সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের জার কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফ্রিজে দুধ রাখার নিয়ম হলো ছোট ছোট কয়েকটি কাঁচের বোতলে দুধ রাখা। কিন্তু এতে ফ্রিজে জায়গা নষ্ট হয় অনেক। আবার কয়েকটি বোতলের বদলে বড় একটি জারে দুধ রাখলে সহজে সেটা খরচ না-ও হতে পারে। ফলে দুধ নষ্ট হওয়ার চান্স থেকেই যায়। ফ্রিজের নরমাল অংশে রাখার চাইতে ডিপ ফ্রিজে দুধ জমিয়ে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। কিন্তু এই কাজটাই কাঁচের কন্টেইনার দিয়ে করা যায় না। ঠান্ডায় দুধের আয়তন বাড়ে। তাই কাচের বোতল ডিপ ফ্রিজে রাখলে বরফ হয়ে যাওয়া দুধ কাঁচে ফাটল ধরাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।