রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে কীবোর্ডের ক্লিক-ক্লিক আর হেডসেটে ফিসফিস। স্ক্রিনে ঝলসে ওঠে রংবেরঙের পিক্সেল, প্রতিটি মুহূর্তে জড়িয়ে থাকে হাজার টাকার হিসাব, লাখো দর্শকের উত্তেজনা। এখানে ভার্চুয়াল অ্যারেনাই বাস্তবের যুদ্ধক্ষেত্র। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা এখন শুধু গেম খেলছে না, গড়ে তুলছে ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার, বদলে দিচ্ছে ভবিষ্যতের সমীকরণ। একসময় শখের বসে শুরু করা গেমিং, আজকে পেশা। ‘পাবজি’ বা ‘ভ্যালোর্যান্ট’-এ বাংলাদেশি টিমের জয়ধ্বনি শুনেছেন নিশ্চয়ই? কিন্তু এই পথে হাঁটতে গেলে শুধু গেম জেতাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন কৌশল, ধৈর্য, এবং ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার: সফলতার রূপরেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। এই গাইডে উঠে এসেছে সেই রূপরেখাই – বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশি গেমারদের অভিজ্ঞতা দিয়ে, সফল হওয়ার বাস্তব পদক্ষেপগুলো।
ই-স্পোর্টস: শুধু খেলা নয়, বিশাল ক্যারিয়ারের মাঠ (H2)
গ্লোবাল ই-স্পোর্টস মার্কেট ২০২৪ সালে ১.৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে (নিউজু রিপোর্ট, ২০২৩), এবং বাংলাদেশ এই স্রোতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ ই-স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (BESA)-এর তথ্যমতে, দেশে নিয়মিত ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় ১০% পেশাদারিত্বের দিকে এগোচ্ছে। ঢাকার বসুন্ধরায় আয়োজিত ‘জাগো গেমিং ফেস্টিভ্যাল’-এ হাজারো তরুণের ভিড়, কিংবা ‘ফ্রি ফায়ার বাংলাদেশ সিরিজ’-এর ফাইনালে উন্মত্ত ভক্তদের চিৎকার – সবই প্রমাণ করে এই শিল্পের ক্রমবর্ধমান জোয়ার।
কিন্তু ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার মানে শুধু টুর্নামেন্টে খেলেই আয় করা নয়। এটা একটি বিশাল ইকোসিস্টেম:
- প্রফেশনাল প্লেয়ার: টিমের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া (যেমন: নেভেরাস ইস্পোর্ট, সাইলেন্ট কিলার্স)।
- স্ট্রিমার/কন্টেন্ট ক্রিয়েটর: টুইচ, YouTube, বা ফেসবুক গেমিং-এ লাইভ স্ট্রিমিং করে ভক্তদের সাথে যুক্ত হওয়া, স্পনসরশিপ ও ডোনেশন থেকে আয় (যেমন: বাংলাদেশি স্ট্রিমার ‘গেমিং উইথ টুকাই’)।
- কোচ/অ্যানালিস্ট: টিম বা ব্যক্তিগত খেলোয়াড়দের কৌশলগত পরামর্শ দেওয়া।
- ইভেন্ট ম্যানেজার/কাস্টার: টুর্নামেন্ট আয়োজন, পরিচালনা বা কমেন্টেটর হিসেবে অংশগ্রহণ।
- গেম ডেভেলপমেন্ট/টেস্টিং: স্থানীয় গেম স্টুডিও বা আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে কাজ।
বাংলাদেশে সম্ভাবনার আলো:
- ব্রডব্যান্ডের ব্যাপক প্রসার: সাশ্রয়ী মূল্যে হাই-স্পিড ইন্টারনেটের সুবিধা (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশন – BTRC ডাটা, ২০২৩)।
- মোবাইল গেমিং বুম: ‘ফ্রি ফায়ার’, ‘কল অফ ডিউটি মোবাইল’-এর জনপ্রিয়তা তরুণ প্রজন্মকে ই-স্পোর্টসের দিকে আকর্ষণ করছে।
- স্থানীয় টুর্নামেন্টের প্রাচুর্য: জাগো গেমিং, গ্রীণ ড্রাগন গেমিং, ডিভাইন গেমিং-এর মতো সংস্থাগুলো নিয়মিত ইভেন্ট আয়োজন করছে, যা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে নতুন প্রতিভাদের জন্য।
- সরকারি স্বীকৃতির প্রাথমিক পদক্ষেপ: ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে (সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন, জানুয়ারি ২০২৪)।
ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার গড়ার ধাপে ধাপে গাইড (H2)
১। ভিত্তি স্থাপন: গেম বাছাই ও প্রাথমিক দক্ষতা (H3)
- আপনার গেম খুঁজে নিন: সব গেমে ক্যারিয়ার গড়া যায় না। ‘মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন ব্যাটল অ্যারেনা (MOBA)’ যেমন Dota 2, League of Legends, ‘ফার্স্ট-পারসন শুটার (FPS)’ যেমন Counter-Strike 2, Valorant, PUBG, বা ‘রিয়েল-টাইম স্ট্র্যাটেজি (RTS)’ গেমে বিশেষায়িত হোন। আপনার প্যাশন, দক্ষতা এবং গেমটির প্রতিযোগিতামূলক দৃশ্য (Esports Scene) বিবেচনা করুন।
- গেমের গভীরে ডুব দিন: শুধু খেললেই হবে না। বুঝতে হবে গেম মেকানিক্স, ম্যাপ নলেজ, ক্যারেক্টার/এজেন্টের ক্ষমতা, মেটা (বর্তমান কার্যকর কৌশল), এবং প্রতিপক্ষের মনস্তত্ত্ব। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অনুশীলন অপরিহার্য।
- হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক: প্রতিযোগিতামূলক গেমিংয়ের জন্য একটি ভালো Gaming PC/Laptop, গেমিং মাউস, কীবোর্ড, হেডসেট এবং স্থিতিশীল, লো-পিং ইন্টারনেট সংযোগ (ফাইবার অপটিক হলে সর্বোত্তম) আবশ্যক।
২। দক্ষতা উন্নয়ন: শুধু খেলা নয়, শেখা (H3)
- অ্যানালাইসিস ও রিপ্লে রিভিউ: নিজের খেলার ভিডিও রেকর্ড করুন। ভুলগুলো চিহ্নিত করুন। টপ প্রো প্লেয়ারদের স্ট্রিম, ভিডিও (YouTube, Twitch) দেখুন। তাদের মুভমেন্ট, পজিশনিং, সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করুন।
- কমিউনিকেশন ও টিমওয়ার্ক (টিম গেমের জন্য): ভয়েস চ্যাট (Discord, TeamSpeak) ব্যবহারে দক্ষ হোন। স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর যোগাযোগ জিতিয়ে দিতে পারে ম্যাচ।
- মানসিক দৃঢ়তা (Mental Fortitude): ই-স্পোর্টসে চাপ অস্বাভাবিক নয়। ধৈর্য, পরাজয় মেনে নেওয়ার ক্ষমতা, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ এবং ফোকাস ধরে রাখা – এই ‘সফট স্কিলস’ ক্যারিয়ারের জন্য গেমিং স্কিলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মেডিটেশন বা স্পোর্টস সাইকোলজির বই পড়া সাহায্য করতে পারে।
৩। প্রতিযোগিতামূলক জগতে প্রবেশ: নাম পরিচিতি গড়া (H3)
- অনলাইন ল্যাডার/র্যাঙ্কড প্লে: গেমের ভিতরেই র্যাঙ্কড ম্যাচে অংশ নিয়ে নিজের স্কিল লেভেল প্রমাণ করুন (যেমন: ভ্যালোর্যান্টে Radiant, CS2-তে Global Elite, PUBG Mobile-এ Conqueror র্যাঙ্ক)।
- স্থানীয় ও অনলাইন টুর্নামেন্ট:
- জাগো গেমিং ফেস্টিভ্যাল, গ্রীণ ড্রাগন কাপ, ডিভাইন চ্যালেঞ্জ-এর মতো বাংলাদেশি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করুন।
- ফ্রি ফায়ার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ, PUBG Mobile বাংলাদেশ লিগ-এর মতো জাতীয় লেভেলের ইভেন্টগুলো লক্ষ্য রাখুন।
- বাংলাদেশ ই-স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (BESA)-এর ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে নিয়মিত টুর্নামেন্টের আপডেট পাবেন।
- বিনা খরচে শুরু করুন: অনেক অনলাইন টুর্নামেন্ট ফ্রি বা নামমাত্র ফিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় (যেমন: FaceIT, Battlefy প্ল্যাটফর্ম)।
- টিম গঠন বা যোগদান: একই লক্ষ্য ও মনোভাবের খেলোয়াড়দের সাথে টিম বানান। বাংলাদেশে ‘ক্ল্যান কালচার’ বেশ জনপ্রিয়। সক্রিয়ভাবে খুঁজুন বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগ দিন।
৪। পেশাদারিত্বের দিকে: ব্র্যান্ড বিল্ডিং ও আয়ের উৎস (H3)
- কন্টেন্ট ক্রিয়েশন (স্ট্রিমিং/ইউটিউব): টুইচ, ফেসবুক গেমিং, বা YouTube-এ নিয়মিত লাইভ স্ট্রিম করুন বা হাইলাইট ভিডিও আপলোড করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব, গেমিং স্কিল এবং এনগেজিং ক্ষমতা দর্শক আকর্ষণ করবে।
- সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি: Instagram, Twitter (X), TikTok-এ সক্রিয় থাকুন। নিজের যাত্রা, অনুশীলনের টিপস, টুর্নামেন্ট আপডেট শেয়ার করুন।
- স্পনসরশিপ ও এন্ডোর্সমেন্ট: একবার আপনার একটি অনুগত ভক্তসমাজ (Fanbase) তৈরি হলে এবং ভালো পারফরম্যান্স দেখালে, স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড (গেমিং গিয়ার কোম্পানি, এনার্জি ড্রিংক, টেলিকম অপারেটর) স্পনসরশিপের প্রস্তাব দিতে পারে।
- টুর্নামেন্ট প্রাইজ মানি: বড় টুর্নামেন্টে জয় বা ভালো স্থান অধিকার সরাসরি আয়ের বড় উৎস।
- টিম স্যালারি: প্রফেশনাল টিমে যোগ দিলে মাসিক বেতন, টুর্নামেন্ট জয়ের বোনাস ইত্যাদি পেতে পারেন।
৫। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিকল্প পথ (H3)
- শিক্ষার সাথে ভারসাম্য: স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে অবহেলা করবেন না। ই-স্পোর্টসের ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হতে পারে। শিক্ষা একটি নিরাপত্তা জাল।
- সম্পর্কিত ক্ষেত্রে দক্ষতা: কমেন্টেটিং, ইভেন্ট প্রোডাকশন, ভিডিও এডিটিং (স্ট্রিম/কন্টেন্টের জন্য), গ্রাফিক ডিজাইন (সোশ্যাল মিডিয়া), কিংবা গেম ডেভেলপমেন্টে দক্ষতা আপনার বিকল্প ক্যারিয়ার পথ খুলে দিতে পারে।
- নেটওয়ার্কিং: ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন – অন্যান্য প্লেয়ার, টিম ম্যানেজার, ইভেন্ট অর্গানাইজার, কাস্টার। ভবিষ্যতে সুযোগ এনে দিতে পারে।
- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, চোখের উপর চাপ, মানসিক চাপ – স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
বাংলাদেশি ই-স্পোর্টস তারকাদের সাফল্যের গল্প (H2)
রাকিবুল হাসান “রাকিব”: বাংলাদেশের ই-স্পোর্টসের পথিকৃৎ। Dota 2-তে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অসংখ্যবার। তার দল ‘মেরাকি গেমার্স’ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি পরিচিত নাম। রাকিবের মতে, “ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার মানে শুধু গেম জেতা না, এটা একটা পূর্ণকালীন পেশার মতোই অ্যাপ্রোচ চায়। নিয়মানুবর্তিতা, দলনেতৃত্ব এবং ক্রমাগত শেখার মনোভাব থাকতে হয়।”
“গেমিং উইথ টুকাই” (ইমরুল হাসান তুহিন): ফেসবুক গেমিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলাদেশি স্ট্রিমার। নিয়মিত PUBG Mobile, GTA V স্ট্রিম করে লাখো ভিউয়ার জড়ো করেন। তার সাফল্যের মূলে আছে দর্শকদের সাথে আন্তরিক ইন্টারঅ্যাকশন এবং ধারাবাহিকতা। তিনি বলছেন, “স্ট্রিমিং শুরুর প্রথম কয়েক মাস হয়তো দর্শক কমই ছিল। হাল ছেড়ে না দিয়ে নিয়মিত স্ট্রিম চালিয়ে গেছি। দর্শকরা আপনার সত্যিকারের ভালোবাসা আর ধৈর্য্য টের পায়।”
নেভেরাস ইস্পোর্টস: বাংলাদেশের অন্যতম সফল প্রফেশনাল ই-স্পোর্টস অর্গানাইজেশন। তাদের ফ্রি ফায়ার, PUBG Mobile টিম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সফলতা অর্জন করেছে। তাদের প্লেয়ারদের ট্রেনিং রুটিন, মনিটরিং এবং টিমওয়ার্কের ওপর জোর দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় (H2)
ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার গড়া বাংলাদেশে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে:
- সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: “গেমিং মানেই সময় নষ্ট” – এই ধারণা এখনও প্রবল। পরিবারকে বোঝানো, ই-স্পোর্টসকে একটি বৈধ পেশা হিসেবে তুলে ধরা জরুরি। সাফল্যের গল্প শেয়ার করুন, ইন্ডাস্ট্রির আর্থিক সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরুন।
- পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: সব জায়গায় হাই-স্পিড ইন্টারনেটের অভাব, ভালো গেমিং হার্ডওয়্যারের উচ্চ মূল্য। কমিউনিটি গেমিং সেন্টার (LAN Cafe) ব্যবহার করে শুরু করা যেতে পারে।
- টেকনিক্যাল ইস্যু: সার্ভার ল্যাগ, পিং ইস্যু (বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সার্ভারে খেলতে গেলে)। স্থানীয় টুর্নামেন্টে বেশি ফোকাস করা এবং ISP (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) কে ইস্যু জানানো সমাধানের পথ।
- ক্যারিয়ারের অনিশ্চয়তা: খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার তুলনামূলকভাবে ছোট। এজন্য বিকল্প পথে দক্ষতা বাড়ানো (কোচিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) এবং শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব: ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই-স্পোর্টসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও সহায়তা প্রয়োজন।
উত্তরণের কৌশল:
- ডকুমেন্টেশন: নিজের সাফল্য (র্যাঙ্ক, টুর্নামেন্ট রেজাল্ট, ভিউয়ারশিপ নম্বর) রেকর্ড করুন। পরিবার বা সম্ভাবনা স্পনসরদের বোঝানোর জন্য এটি জরুরি প্রমাণ।
- কমিউনিটি গড়ে তোলা: অন্যান্য ই-স্পোর্টস উৎসাহীদের সাথে যুক্ত হোন। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। সম্মিলিত কণ্ঠস্বরই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে।
- বহুমুখী দক্ষতা: শুধু গেমিং স্কিলে না থেমে কমিউনিকেশন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো দক্ষতা অর্জন করুন।
ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবের সিঁড়ি। বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন প্রমাণ করছেন, ভার্চুয়াল অ্যারেনায় দক্ষতা, কৌশল ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা যায় টেকসই ভবিষ্যৎ। আপনার কীবোর্ড, মাউস আর স্ক্রিনই হতে পারে সফলতার হাতিয়ার। তবে মনে রাখবেন, এই রূপরেখায় সাফল্য পেতে চাইলে ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার কে শখ হিসেবে নয়, পেশাদারিত্বের সাথে নিতে হবে। আজই শুরু করুন নিয়মিত অনুশীলন, বিশ্লেষণ করুন নিজের পারফরম্যান্স, অংশ নিন স্থানীয় টুর্নামেন্টে। ধৈর্য্য ধরে, লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যান। বাংলাদেশের ই-স্পোর্টস দিগন্তে আপনিই হতে পারেন পরবর্তী উজ্জ্বল নক্ষত্র। আপনার যাত্রা শুরু হোক এখনই!
জেনে রাখুন (H2)
১। বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস থেকে আয় করা কি বৈধ?
হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বৈধ। টুর্নামেন্টে জিতে প্রাইজ মানি পাওয়া, স্ট্রিমিং বা ইউটিউব থেকে আয় (স্পনসরশিপ, ডোনেশন, এড রেভিনিউ), কিংবা কোনও প্রফেশনাল টিমের হয়ে বেতন পাওয়া – সবই আইনসম্মত আয়ের উৎস। তবে, জুয়া (Betting/Gambling) এর সাথে যুক্ত হওয়া অবৈধ এবং বিপজ্জনক।
২। ই-স্পোর্টস ক্যারিয়ার শুরু করার আদর্শ বয়স কত?
প্রতিযোগিতামূলক প্লেয়ার হিসেবে সাধারণত কিশোর বয়স (১৩-১৬) থেকে শুরু করা ভালো, কারণ তখন রিফ্লেক্স, শেখার গতি বেশি থাকে। তবে স্ট্রিমিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, কোচিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট – এসব ক্ষেত্রে বয়স খুব বড় বাধা নয়। দেরিতে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব, শর্ত হলো আবেগ, পরিশ্রম এবং শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
৩। শুধু মোবাইল গেম খেলেই কি ই-স্পোর্টস ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব?
অবশ্যই! মোবাইল ই-স্পোর্টস (Mobile Esports) বিশ্বব্যাপী দ্রুত বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে PUBG Mobile, Free Fire, Call of Duty: Mobile, Brawl Stars-এর মতো গেমগুলোতে বিশাল প্রতিযোগিতামূলক দৃশ্য আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মোবাইল প্লেয়াররাও বড় অংকের প্রাইজ মানি জিতছেন।
৪। ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ারের জন্য কি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দরকার?
সরাসরি গেম খেলার জন্য ডিগ্রির বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, ই-স্পোর্টস ইকোসিস্টেমের অন্যান্য পেশার জন্য (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, জার্নালিজম, গেম ডেভেলপমেন্ট) প্রাসঙ্গিক ডিগ্রি বা কোর্স (যেমন: ডিজিটাল মার্কেটিং, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স) খুবই উপকারী। পাশাপাশি, ডিগ্রি একটি ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে কাজ করে।
৫। বাংলাদেশি ই-স্পোর্টস প্লেয়াররা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে?
হ্যাঁ, অবশ্যই পারবে। অনেক বাংলাদেশি প্লেয়ার ও টিম ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ান, এশিয়ান এমনকি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে (যেমন: PUBG Mobile Global Championship, Free Fire World Series) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। যোগ্যতা অর্জন করে (Qualifier জিতে) এবং ভিসার সুবিধা পেলে অংশগ্রহণ সম্ভব।
৬। ই-স্পোর্টস প্লেয়ারদের শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া কেন জরুরি?
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার/মোবাইলের সামনে বসে থাকা, চোখের চাপ, ঘাড়-পিঠে ব্যথা, অনিয়মিত খাওয়া-ঘুমা – এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম (বিশেষ করে স্ট্রেচিং, কার্ডিও), চোখের বিশ্রাম (২০-২০-২০ রুল: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন), সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম একজন পেশাদার ই-স্পোর্টস অ্যাথলিটের জন্য অপরিহার্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।