লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রস্রাবের নিজস্ব কোনো গন্ধ নেই। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হলদেটে হলো সুস্থ মানুষের প্রস্রাবের রং। আবার গাঢ় হলুদ রংও হলো স্বাভাবিক। এমন প্রস্রাবের অর্থ হলো শরীর ঠিকমতো তার নিজের কাজ সামলে নিলেও সামান্য ডিহাইড্রেটেড। বেশি পরিমাণ পানি পান করলে সেই সমস্যারও সমাধান হয়ে যায়।
সাধারণত প্রস্রাব গন্ধহীন প্রকৃতির। তবে বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। আসলে দৈনন্দিন ডায়েট, ভিটামিন, ওষুধ ও হাইড্রেশনের ওপর নির্ভর করে এক্ষেত্রে। কিন্তু প্রস্রাব করার পর বাতাসে অক্সিডেটিভ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিন্তু তার থেকে অ্যামোনিয়ার গন্ধ উৎপন্ন হয়। যে কারণে পাবলিক টয়লেট থেকে তীব্র ঝাঁঝালো কটূ গন্ধ আমাদের নাকে আসে। আর এই গন্ধ অনেক সময়ই মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আর তখনই কিন্তু সেখান থেকে আসে একাধিক অসুস্থতা।
কেন প্রস্রাব দুর্গন্ধযুক্ত হল তার কিন্তু একাধিক কারণ রয়েছে। কখনও তা কোনও শারীরিক সমস্যার কারণেও কিন্তু হতে পারে। যারা ইস্টের সংক্রণমে ভুগছেন বা যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে তাঁদের প্রস্রাব সব সময় গন্ধযুক্ত হয়। তবে এই গন্ধ মাত্রা ছাড়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নইলে হতে পারে শরীরের ক্ষতি। আসতে পারে কিডনির সমস্যাও।
প্রস্রাব পানি এবং শরীরের বর্জ্য মিশ্রিত তরল হয়। পানির প্রস্রাবের পরিমাণ ৯৫% স্নিগ্ধ পদার্থগুলো মূত্রের পরিমাণের ৫% অংশ তৈরি করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য স্রাবের অন্যতম রূপ হল প্রস্রাব। কিডনি এটিকে গঠন করে এবং তা ভরাট না হওয়া পর্যন্ত মূত্রাশয়ে জমা হয়। এবং মূত্রনালী দিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। প্রস্রাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদার্থ হলো ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিন। এর মধ্যে প্রস্রাবের সর্বাধিক সাধারণ পদার্থ হল ইউরিয়া। পানি এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে আসা এই বর্জ্যগুরোর সাথে মূত্রও তৈরি হয়। এমন আরও অনেক উপাদান রয়েছে যা শরীর থেকে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে, যেমন পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। ।
অ্যামোনিয়া থেকে উৎপন্ন প্রস্রাবের ঝাঁজালো গন্ধটি যদি অসহনীয় হয়ে ওঠে, তবে তা বহুবিধ সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। কখনো কখনো দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব রোগ সংক্রমণ এবং অন্যান্য অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপসর্গ হতে পারে। রইল এমন কিছু সম্ভাব্য কারণ যা থেকে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয় প্রস্রাবে।
আবার কফি পান করলেও প্রসাবে কটূ গন্ধ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। আবার অ্যালকোহলও প্রস্রাবে গন্ধ তৈরি করতে পারে।
দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব কিন্তু স্বাস্থ্যের একটি সতর্কতা চিহ্ন হিসেবে কাজ করে। তাই প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এর পাশাপাশি জেনে রাখুন দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব কোন কোন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়-
অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ
আপনি যদি আপনার প্রস্রাবে অ্যামোনিয়ার গন্ধ পান তাহলে বুঝবেন আপনি মূত্রনালির সংক্রমণে (ইউটিআই) ভুগছেন। ইউটিআই এর লক্ষণ হিসেবে প্রস্রাকের রং বদলে ঘোলাটে হয় আবার কিছুটা রক্তাক্তও হতে পারে। একই সঙ্গে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি প্রস্রাবের চাপও বাড়ে। এর সঙ্গে জ্বর ও মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবে অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ ডিহাইড্রেশন, নির্দিষ্ট খাবার ও ভিটামিনের কারণেও ঘটতে পারে।প্রস্রাবে অ্যামোনিয়ার গন্ধ আরও যেসব রোগের ইঙ্গিত দেয়- কিডনিতে পাথর বা কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, মেনোপজ, প্রোস্টেট সংক্রমণ, যৌনবাহিত রোগ যেমন- ক্ল্যামাইডিয়া ইত্যাদি।
মিষ্টি গন্ধ
চিনিযুক্ত বা ফলের সুগন্ধযুক্ত প্রস্রাব ডায়াবেটিস বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া (হাই ব্লাড সুগার) এর ইঙ্গিত দেয়। মিষ্টি গন্ধ হওয়ার কারণ হলো শরীরে গ্লুকোজ বা শর্করা বেড়ে যাওয়া।
ডিহাইড্রেশন
যারা পানিশূন্যতায় ভুগছেন তাদের প্রস্রাবেও দুর্গন্ধ হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রস্রাবের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থ বেশি থাকে, ফলে তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয়। তাই দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা আবশ্যক।
আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রস্রাব খুব কম গন্ধ বহন করে। কারণ প্রস্রাবের প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি। অবশিষ্ট পরিমাণে বেশিরভাগই বর্জ্য পদার্থ থাকে যেমন- ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান। যা কিডনি দ্বারা ফিল্টার করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণেও প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কারণ ইউটিআই, ডিহাইড্রেশনসহ লিভার বা কিডনির রোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু জটিল আকার ধারণ করে। তাই সতর্ক থাকুন।
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন
প্রস্রাবে গন্ধ হওয়ার আরও একটি কারণ হল ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন’। এই সংক্রমণ প্রস্রাব এবং মূত্রাশয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কখনও এই সংক্রমণের হাত ধরে মূত্রনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা প্রস্রাবের গন্ধে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে যৌনতার মাধ্যমে পরিবাহিত হওয়া ছাড়াও মূত্রনালির সংক্রমণও দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা দূর করবেন যেভাবে
প্রচুর পানি পান করুন: যাদের ইউটিআই আছে তাদের প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। বেশী পানি পান করলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়।
ভিটামিন সি : ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে সহজেই মোকাবেলা করা যায় এই সমস্যা। বিশেষ করে টমেটো, কমলালেবু, বাধাকপি, ব্রকোলি জাতীয় খাবার খেলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ঢুকবে। মিটবে এই সমস্যা।
সেলারি বীজ: সেলারি বীজ মূত্র বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন, ৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউটিআই প্রতিরোধ করে।
ক্যানবেরি জুস : একটু দামী হলেও, এই ফল বাজারে অতি সহজেই পাওয়া যায়। আর তা বাড়িতে এনে জুস বানিয়ে খেলে আটকানো যায় কিডনি স্টোন।
বেকিং সোডা : সাধারণ ভাবে এই বস্তুটি আমাদের বাড়িতে কেক বা বিশেষ ধরণের ভাজা খাওয়ার তৈরি করতে প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে ২ চামচ বেকিং সোডা গুলে খেলে তা অতি সহজেই উপকারে আসে।
আদা ও রসুন : চিকিত্সকরা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আদা ও রসুন রাখার কথা বলছেন। কারণ এই দুটি সবজিই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বলেই গণ্য করা হয়।
আনারস : আনারসের রস প্রস্রাবের সমস্যায় খুবই কার্যকরী। ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশী পরিমাণে আনারস খাওয়া উচিত। এতে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপকারী অ্যানজাইম। গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস খান।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.