অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির : আট থেকে আশি, যে কোনো বয়সী মানুষের চোখেই থাবা বসাতে পারে গ্লুকোমা নামক চোখের ভয়ঙ্কর রোগ। ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু করলে না পারলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে এই রোগটি। শিশু থেকে বয়স্ক নাগরিক সবাই গ্লুকোমার ঝুঁকিতে রয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি কিন্তু শিশুরা গ্লুকোমা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে। অল্প বয়স্কদেরও গ্লুকোমা হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা গ্লুকোমা রোগকে বলে থাকেন ‘সাইলেন্ট থিফ’।
গ্লুকোমা যে কারণে হয় : চিকিৎসকদের মতে, চোখের মধ্যে যে অংশ দিয়ে তরল পদার্থ চলাচল করে, সেই রাস্তা নানা কারণে অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণেই হোক, তরল পদার্থ গমনের পথটি বন্ধ হয়ে গেলে তা সেখানে জমে চোখের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপটি তৈরি হয়ে থাকে অপটিক স্নায়ুতে। সেই চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণতর হতে থাকে। পরবর্তীকালে ্টে থেকেই দেখা দিয়ে থাকে অন্ধত্ব, যা যে কোনো মানুষের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক পরিণতি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিটা শুরু হয় পরিধির চারপাশ থেকে। তাই গ্লুকোমায় আক্রান্ত রোগীদের ‘সাইড ভিশন’ নষ্ট হতে থাকে। চোখের ভেতর জল তৈরি হতে থাকে অথচ বের হওয়ার জায়গা পায় না। এর ফলেই তা দুর্বল জায়গাগুলোয় চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যদি বলেন, তিনি পাশের দিকে দেখতে পারছেন না, তা হলে বুঝতে হবে, ক্ষতি অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
গ্লুকোমার প্রাথমিক লক্ষণ : দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া। চোখ থেকে অত্যধিক জল পড়া। চোখ লাল হয়ে যাওয়া। আলোর দিকে তাকালে চোখে ভীষণ ব্যথা হওয়া। চোখের পাতা এঁটে যাওয়া, চোখ খুলতে না পারা। দীর্ঘদিন কোনো স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে, চোখে কোনো আঘাত পেয়ে থাকলে বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। চোখের চিকিৎসক একবার পাওয়ার সেট করে দেওয়ার পর সাধারণত আরও এক-দেড় বছরের মধ্যে তা বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে যদি মাস কয়েক যাওয়ার পর থেকেই দেখতে অসুবিধা হয়, কিংবা ঘন ঘন পাওয়ার বাড়ে, তাহলে সন্দেহ করতে হবে তা গ্লকোমার প্রকোপে হতে যাচ্ছে ।
গ্লুকোমা প্রতিরোধ : গ্লুকোমা নিরাময়ের দিকে নজর রাখলেও এটি পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আমরা প্রথম দিকে গ্লুকোমা শনাক্ত করতে পারি, তা নিশ্চিত করার কিছু সেরা উপায় হলো প্রায়ই চোখের পরীক্ষা করানো। পরিবারের চিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া। নিজেকে ফিট রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। চোখের আঘাতের কারণ হতে পারে এমন কাজগুলো করার সময় চোখ রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণভাবে সারানো সম্ভব নয়। তবে সময়মতো ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অসুখের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
৪০ বছরেও আপনাকে দেখে মনে হবে ২৫-এর তরুণী, নিয়মিত করুন এই ৪টি কাজ
লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ, ‘বাংলাদেশ আই হসপিটাল’
মালিবাগ শাখা, ঢাকা
০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫, ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।