নিয়াজুর রহমান নিওন ও শবনম শারমিন, সম্পর্কে স্বামী–স্ত্রী। নিয়াজুর রাজধানীর বেসরকারি নর্থ–সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শবনম শান্তা–মারিয়ামে পড়াশোনা করেছেন। দুজনই ব্যবহার করেন দামি মোবাইল ফোন, পোশাক আশাকে চাকচিক্য। দুই থেকে তিন মাসের বেশি কোনো বাসায় ভাড়া থাকেন না। এরমধ্যেই কাউকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন অর্থ, দামি জিনিসপত্র, এমনকি দামি গাড়ি। এরপর আবার গা-ঢাকা দেয় এই দম্পতি।

শবনমের বাড়ি ঝিনাইদহের চন্ডিপুর এলাকায়। আর তার স্বামী নিয়াজুরের বাড়ি রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায়।
গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বায়িং হাউজের মালিককে ফাঁদে ফেলে তারা টাকা, মোবাইল ফোন ও তার প্রাইভেট নিয়ে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর যশোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে তাদের জালিয়াতির নানা কাহিনী।
পুলিশ জানায়, গত সেপ্টেম্বরে ভাটারা থানা এলাকায় আরেক ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি হাতিয়ে নেন নিয়াজুর। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে গাড়ি উদ্ধার হলেও নিয়াজুর ছিলেন অধরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ৩–৪ তরুণীকে ব্যবহার করে বছরখানকে আগে একটি চক্র তৈরি করেন নিয়াজুর। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে টার্গেট করে প্রথমে তারা সম্পর্ক তৈরি করেন। এরপর কাউকে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেন, আবার কাউকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাসায় দাওয়াত করেন। এরপর কৌশলে আটকে রেখে টাকা দাবি করেন। টাকা না পেলে শারীরিক নির্যাতন চালান। এই গ্রুপে তামান্না নামে আরেক তরুণীর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানায়, সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় প্রক্সিমা বায়িং হাউসের মালিক আলী নূর ইসলাম জীবনকে জিম্মি করেন নিয়াজুর। সেখানে শবনম ও তামান্না ছিলেন। আলী নূরের কাছে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি নিয়ে চক্রটি পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলার পর যশোর থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়ি নিয়ে চম্পট হয়ে প্রথমে তারা যান গাজীপুরে। সেখানে হোটেলে থাকেন। এরপর সাভার হয়ে যান যশোরের কোতয়ালী এলাকায়। সেখানে একটি বাসা ভাড়া নেন। আর একই এলাকায় আরেকটি বাসার গ্যারেজ ভাড়া করেন। নিজেই গাড়ি চালিয়ে যশোর যান নিয়াজুর।
ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিয়াজুর ও তার চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত চতুর। তরুণীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন পেশার লোকজনকে ফাঁসান নিয়াজুর। এই চক্রের আরও কয়েকজনকে আমরা খুঁজছি।’
ব্যবসায়ী আলী নূর ইসলাম বলেন, ‘নিয়াজুর অত্যন্ত ধূর্ত। বায়িং হাউজের স্যাম্পল দেখানোর কথা বলে বাসায় নিয়ে আটকে রেখে টাকা, মোবাইল ফোন ও গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয়। তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে আরও কয়েকজন ছিল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



