জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি ইলিশ মৌসুমে ফেনীর সোনাগাজীর জেলেদের মধ্যে বিরাজ করছে চাঙাভাব। জালে ধরা পড়ছে বড় আকারের ইলিশ। দুই থেকে তিন কেজি ওজনের এসব ইলিশ একেকটি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। একসময় বড় ফেনী নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। আকারে বড় সে সব ইলিশ ছিল স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। দীর্ঘদিন আকাল গেলেও এ নদীতে আবার ফিরেছে সেই ইলিশ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, ইলিশর প্রজনন বাড়াতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন এ অঞ্চলের জেলেরা। দীর্ঘদিন নদী ও সাগরে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকায় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ফলে এখন এত বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় আকারের ইলিশ এবং আগের তুলনায় বেশি ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ফেনী নদীর পরিবেশ উন্নত হয়েছে। এ নদীকে ইলিশ নিজেদের বিচরণ ক্ষেত্র মনে করছে। যার ফলে এখানে ইলিশ আসছে এবং তা ধরা পড়ছে। ছট্টু মহাজন নামে স্থানীয় এক জেলে মহাজন জানান, এবছর জালে আগের চাইতে ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে জেলেদের ।
ইলিশের মৌসুমে বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগর মোহনায় ইলিশ শিকার করেন রুপক নামে আরেক জেলে । তিনি জানান, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে এই নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু মাঝখানে ইলিশ কমে যায়। যেটুকু ইলিশ পাওয়া যেত, তা ধরাও কঠিন হয়ে উঠেছিল। কারণ, জলদস্যুর ভয়ে জেলেরা সাগর মোহনার দিকে যেতে ভয় পেতেন।
এই জেলে বলেন, তবে দুই থেকে তিন বছর ধরে ফেনী নদীতে ভালই ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা এখন সাগর মোহনাতেও যেতে পারছেন। কারণ, প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে এখন জলদস্যু নেই বললেই চলে।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, ‘চলতি বছর ইলিশ আগের চাইতে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। এখানে এত ইলিশ আগে দেখিনি। তবে শুনেছি ১৫ থেকে ২০ বছর আগে এখানে অনেক ইলিশ ধরা পড়ত। মাঝখানে তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ’
দেশে কয়েক বছর ধরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ইলিশ তার আগের বিচরণক্ষেত্রগুলোয় ফিরে আসছে। এর পেছনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সুফলের কথা বলা হচ্ছে। প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। আবার অক্টোবরে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। এসব নিষেধাজ্ঞা সুফল দিচ্ছে বলে খোদ জেলেরাই স্বীকার করছেন।
উপজেলার চরজান্দিয়া জেলে পাড়ার প্রশান্ত নামে এক জেলে বলেন, আগে স্থানীয় জেলেরা পেটের দায়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতেন। তারা নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চুরি করে নদীতে মাছ শিকার করতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তারা সরকারি সহযোগিতা পেয়ে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন। এতে নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ বেড়েছে।
বড় ফেনী নদীতে এখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হিসেবে আরও কিছু বিষয়ের কথা জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, বড় ফেনী নদীর যে জায়গায় ইলিশ ধরা পড়ছে, সেটি উপজেলার চরখন্দকার জলদাসপাড়ার কাছাকাছি এলাকা। এখান থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দূরত্ব বড়জোর ১২ কিলোমিটার। সাগরে জোয়ারের সময় পানি ফুলে বড় ফেনী নদীতে আছড়ে পড়ছে। এর সঙ্গে আসছে ইলিশ। তাই বড় ফেনী নদীতে যে ইলিশ ধরা পড়ছে, এসব ইলিশ মূলত সাগরের।
মৎস্য গবেষকরা বলছেন, বড় ফেনী নদী ইলিশের একটি বড় প্রজননক্ষেত্র। ইলিশ উৎপাদনের স্বার্থেই এখানকার পরিবেশ ভালো রাখা দরকার। এখানে বেশি ইলিশ, বড় ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি শুভ ইঙ্গিত দেয়। ইলিশ গবেষকদের মতে, ৩ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ১৫ থেকে ২০ লাখ ডিম ছাড়তে পারে। আর ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ছাড়তে পারে ১৫ লাখ পর্যন্ত ডিম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।