জুমবাংলা ডেস্ক : গ্রামীন বাংলার একটি জনপ্রিয় ফল হলো পানি ফল বা শিংরা। অবহেলা অযত্নে জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা এই ফল এখন খুব কমই চোখে পড়ে। পানিফল বা শিংড়া নামে পরিচিত এই ফল এখন খুব কমই চোখে পড়ে। অনাদরে জলাভূমিতে শিংড়ার চাষ করে কৃষকেরা এখন লাভবান হচ্ছে। এর আবাদ কমে যাওয়ায় বাজারে এখন এর দামও ভালো বর্তমানে বগুড়ায় এই পানিফল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকা হিসেবে।
এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নিচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। ফলগুলিতে শিং এর মতে কাটা থাকে বলে এর শিংড়া নামকরণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। পানিফল কাঁচা, সিদ্ধ দুভাবেই খাওয়া যায়। এই ফল গুলো ১২ বছর পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম সক্ষম থাকে। অবশ্য দুই বছরের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ৩০০০ বছরে পূর্বেও চীনে এর চাষ হতে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ওয়াশিংটনে পানিফল উদ্ভিদকে অনেক সময় জলজ আগাছা হিসবে গণ্য করা হয়।
তাজা পানিফল আহারে কচকচে এবং নরম যা তৃষ্ণানিবারক। এই ফল ডায়াবেটিক রোগ নিরাময়ক। পানাসক্ত ব্যক্তির মাতলামো নিবারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চীনদেশে পানিফল জ্বর নিরাময়ক। ফল শুকিয়ে গুঁড়া করে আটা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই সামাজিক অনুষ্ঠান পূজা তথা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনের মাধ্যম হিসেবে এই ফলকে বিবেচনা করা হয়। ভারতে এই চূর্ণকে “সিঙ্গারা-কা-আটা” নামে অবহিত করে।
শিশুরা কচকচা এইফল খেতে খুব পছন্দ করে। সাধারণ গ্রামীণ শিশু-কিশোররা দামি ফল খেতে পারে না। তাদের বিকল্প পুষ্টির সুযোগ সৃষ্টি করে। খাদ্যোউপযোগী প্রতি১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম জলীয় অংশ, মোট খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, ০.৬ গ্রাম আঁশ, ৬৫ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি , ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ এবং ১৫ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে।
জলজ পরিবেশে পানির নিচে চাষ হয় বিধায় পানিফল বলা হয়। আবার এ ফলের আকার সিংগারার ন্যায় তাই সিঙ্গারা নাম দেয়া হয়। ফলের আকৃতির কারণে লজেন্স বা হিরার টুকরো ফলও বলে থাকে।
পানিফল রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন, কিংবা ওজন বেশি এমন ব্যক্তিরাও এ ফলটি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। লিভার ভালো রাখতে পানিফল খেতে পারেন। এছাড়া যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, অনিদ্রায় ভুগছেন দীর্ঘ সময় ধরে তারাও এ ফলটি খেতে পারেন শীতের এই সময়টাতে।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পূর্বে দোবিলা বিলে পানিফলের চাষ করছে চাষীরা। ওই এলাকার ছালাম, বক্কর ও বাদশা জানান, এই জমিতে ধান হয়না। অন্য কোন আবাদ না হওয়ায় তারা অল্প ব্যায়ে এই ফলের চাষ করছেন। এতে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। চাষীরা আরও জানান যেসব নিচু জায়গায় পানির গভীরতার করণে আমন ধান লাগানো সম্ভব হয়না সেখানেই কৃষকরা সাধারণত পানিফলের চাষ করে থাকেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।