জুমবাংলা ডেস্ক : অসময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাচায় তরমুজ চাষ করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। এই তরমুজ চাষ করে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তারা। এছাড়া মাচায় তরমুজ চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক কৃষক এটি চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। মাচায় তরমুজ দেখার জন্য উৎসুক মানুষ প্রতিদিন তরমুজের খেতে ভিড় করছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অসময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাচায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভাতারমাড়ি ফার্মের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় ২৭ একর (৫৪ বিঘা) জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন।
তরমুজ চাষি লিপু মিয়া বলেন, আমি ইউটিউবে অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ এর ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে এইবার বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করছি। লেখাপড়ার পর আমি বেকার ছিলাম।একদিন হঠাৎ করে ইউটিউবে দেখি গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই। তখন আমিও অসময়ে তরমুজ চাষ শুরু করি। আমি এবার দুই একর জমিতে চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো। আমি আশা করছি প্রায় ৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব। আমার এই তরমুজ চাষ দেখে এলাকায় অনেক যুবক কৃষকেরা এটি চাষ করে লাভবান হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক আমার এই তরমুজের খেতে কাজ করেন। বর্তমানে তরমুজের যে সাইজ তাতে আরও ৫/৬ দিন পরেই তরমুজ কাটতে পারব বলে আশা করছি।
কথা হয় পাশের এলাকার ফয়জুল নামে এক কৃষকের সঙ্গে, তিনি বলেন, আমি প্রতিবারেই সিজিনাল যে তরমুজটা হয় সেটা করে থাকি কিন্তু এবার আমি এই গ্রীষ্মকালীন যে তরমুজ সেটা চাষ করেছি। আমি প্রায় দেড় একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। আমি আশা করি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা তরমুজ বিক্রি করতে পারব। বর্তমান বাজার ব্যবস্থা ভালো থাকলে আমি প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি।
আগে বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করতো না কৃষক। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন বর্ষাকালেও মাচায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বীজ যেন পচে নষ্ট না হয় সেজন্য উন্নতমানের পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে চারা বেরিয়ে আসে। বর্তমানে মাচায় এখন অনেক তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজ ৩-৪ কেজি ওজনের। লাল ও হলুদ বর্ণের এ তরমুজগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু।
আর অসময়ে এমন সুন্দর তরমুজ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ আসছে তরমুজের খেতে। এছাড়া তরমুজের ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছে এবং এরপরে তারাও এভাবে তরমুজ আবাদ করবে বলে জানিয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ও তরমুজ খেত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তরমুজ খেত দেখতে আসা দর্শনার্থী লিমন বলেন, তরমুজগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। আর এই সময়ে মাচায় তরমুজ চাষ হয় এটা দেখার জন্যই শহর থেকে ছুটে আসা। দেখার পরে অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম। কৃষিতে প্রযুক্তি আজ কৃষিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা এখন সারাবছর তরমুজ খেতে পারব।
ওই এলাকার কৃষক লিটু বলেন, প্রথমে যখন এই তরমুজ আবাদ করে, তখন আমার কাছে একটু হাস্যকর মনে হয়েছিল। তবে কিছুদিন পরে গাছের গঠন দেখে নিজে আর দেরি করলাম না। আমি তাদের পাশে জমিতে তাদের সহযোগিতায় তরমুজ চাষ করলাম। এখন যে ফলন এসেছে তাতে তরমুজ বিক্রয় করে লাভবান হব আশা করছি। আর অনেক কৃষক এই তরমুজ খেত দেখতে আসে আবাদ করার জন্য।
তরমুজ চাষি জয়নাল হোসেন জানান, অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষের কথা শুনে অনেকেই পাগলামি বলে ভেবেছিল। পরে যৌথভাবে আমরা চাচা ভাতিজা মিলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় এর জন্য এই তরমুজ আবাদ করি। প্রায় ৫০ দিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এখন আমরা তরমুজের ফলন ভালো দেখতে পাচ্ছি। ৬০ দিনের মাথায় তরমুজ কাটা শুরু করব। বাজারজাত ভালোভাবে করতে পারলে ও বাজারে দাম ভালো পেলে লাভবান হব আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলমগীর কবির বলেন, মাচায় তরমুজ চাষে উৎপাদন খরচ খুব একটা বেশি না। এই তরমুজ অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। চাষিরা যাতে তরমুজ কোনো অসুবিধা ছাড়াই বাজারজাত করতে পারে সেজন্য আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করব। নতুন এই পদ্ধতিতে গোটা জেলায় প্রায় ২৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আমরা তাদের সব সহযোগিতা দিয়ে আসছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।