ডা. শায়লা হক : লিভার বা যকৃতে যখন বেশি পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি জমে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে তখন তাকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে। অতিরিক্ত ফ্যাট অনেক সময় লিভার ফেইলিয়ার (Liver Failure) এরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু চলছে রমজান মাস তাই এবার জানবো ফ্যাটিলিভারের রোগীদের রোজায় করণীয় সম্পর্কে।
যারা ফ্যাটি লিভারের রোগী, তাদের জন্য রোজা উপকারী হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে উপবাসের সময় লিভার সেলের নানামুখী তৎপরতায় ফ্যাট জমা হতে দেয় না। কাজেই অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস এবং অন্য কোন জটিল রোগ না থাকলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে উপকৃত হবেন।
প্রধানত নিচের কারণগুলোর জন্যই লিভারে ফ্যাট জমতে দেখা যায়
১। স্থূলতা
২। রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকা
৩। রক্তে ফ্যাট বিশেষ করে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকা
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে :
১. অ্যালকোহলিক অর্থাৎ অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে।
২. নন-অ্যালকোহলিক অর্থাৎ অ্যালকোহল বাদে অন্য কোন কারণে।
আমেরিকার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই রোগে আক্রান্ত এবং এটি লিভার ফেইলিয়ার (Liver Failure) এর অন্যতম বড় একটি কারণ। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার প্রধানত যারা স্থূল এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস বা প্রসেস মিট বেশি খায় তাদের মধ্যে লক্ষণীয়। এই অসুখ কমানোর অন্যতম একটি বড় দাওয়াই হলো ডায়েট। একটি সুস্থ শরীরে লিভার বা যকৃৎ শরীরের বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে, পিত্তরস তৈরি করে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভারের সেই কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
ফ্যাটি লিভার রোগীদের কি খাওয়া উচিত:
১. প্রচুর ফল ও সবজি
২. ফাইবার বা খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ সবজি ও শস্য
৩. খুব কম পরিমাণে চিনি, লবণ, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং সম্পৃক্ত ফ্যাট গ্রহণ
৪. অ্যালকোহল বর্জন করা
৫. লো ফ্যাট, লো ক্যালরি ডায়েট ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়
রমজানে ফ্যাটিলিভার রোগীরা কী খাবেন:
ইফতার: ইফতারের সময় প্রচুর পানি এবং তরল খাবার গ্রহণ করবে। কম চর্বি যুক্ত এবং রসালো খাবার ও ফলমূল খাওয়া উচিত। কম তেলে ভাজা দু‘য়েকটি পেঁয়াজি, বেগুনি খেতে পারবেন। মাঝারি মাপের একটি জিলাপি এবং ছোট এক বাটি হালিম খেতে পারবেন। আর ইফতারের সময় একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেলে হজম ভালো হবে।
পানীয়: পানি, দুধ, শরবত, ঘরে বানানো ফলের রস সঙ্গে অল্প পরিমাণ চিনি খেলে সারা দিনের রোজায় পানি শূন্যতা পূরণ হবে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে সতেজ হবেন।
খেজুর: ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানেরা খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙেন। খেজুরে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি এবং শক্তি। এ ছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম, কপার, ম্যাংগানিজ এবং ফাইবার- যা আপনাকে মুহূর্তেই চাঙা করবে, লিভারের রোগীরা প্রতিদিন ইফতারিতে ৩-৪ টি খেজুর খেতে পারবেন।
ফল : যে কোন ধরনের ফল লিভারের রোগীরা খেতে পারবেন, যথেষ্ট পরিমাণ রসালো ফল খেতে পারেন তবে ডায়বেটিস থাকলে মিষ্টি ফল বেশি খাবেন না।
সুপ: ভ্যাজিট্যাবল, চিকেন কিংবা কর্ণ যে কোন সুপ খেতে পারবেন।
রাতের খাবার: ইফতারের পর রাতের খাবার হালকা হতে হবে। এ সময়ে আপনি ভাত অথবা রুটি অথবা পাস্তা সঙ্গে মুরগি, মাছ, সবজি পরিমাণ মত খেতে পারবেন। এসময় ফ্যাটি লিভারের রোগীরা টক দই খেতে পারেন।
সাহরি: সাহরিতে পরিমিত ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, মুরগি খেতে পারবেন। কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং সঙ্গে কলা খেতে পারবেন।
এড়িয়ে চলুন: বিশেষত লিভার সিরোসিস ও ফ্যাটি লিভারের রোগীরা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ফাস্ট ফুড, গরু ও খাসির মাংস, বড় চিংড়ি, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
রমজানে ব্যায়াম: শারীরিকভাবে সক্ষম ক্রনিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিসের কোন কোন রোগী ইফতারের পর সাধ্যমতো হালকা ব্যায়াম কিংবা হাঁটা হাটি করতে পারবেন।
সবশেষে: আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে লিভারের বিভিন্ন রোগীরা রমজানে রোজা রেখেও সুস্থ থাকতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।