লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে ফ্যাটি লিভার একটি নীরব মহামারী হয়ে উঠছে। পরিবারের কাউকে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু কজনই বা জানেন, এই রোগের মূল কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়ায় লুকিয়ে আছে? আজকের লেখায় আমরা জানব, কোন তিনটি খাবার একেবারেই বাদ দিতে হবে যদি আপনি চান ফ্যাটি লিভারের মতো বিপজ্জনক রোগ থেকে দূরে থাকতে।
Table of Contents
ফ্যাটি লিভার: একটি নীরব বিপদ
ফ্যাটি লিভার একটি সাধারণ কিন্তু অবহেলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এই রোগে লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হয়, যা পরবর্তীতে লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস করে দিতে পারে। ফ্যাটি লিভার প্রথম দিকে কোনো উপসর্গ ছাড়াই শরীরে বাসা বাঁধে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার এমনকি লিভার ফেইলিওরের কারণও হতে পারে। গবেষণা বলছে, বর্তমানে শহরের প্রায় ২৫% মানুষ নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে (NAFLD) আক্রান্ত।
ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের:
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD): অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD): অ্যালকোহল ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদির কারণে হয়।
ফ্যাটি লিভার নিরাময়ে প্রথম ধাপ হলো খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফ্যাটি লিভার এড়াতে যেসব খাবার সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত
অতিরিক্ত চিনি ও ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার
চিনির প্রতি আসক্তি আমাদের লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত চিনি এবং উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, ক্যান্ডি, কেক, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, এমনকি ফলের জুসের মধ্যেও চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এগুলো প্রতিনিয়ত খাওয়া লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা করে।
ফ্রুক্টোজ একটি প্রাকৃতিক চিনি হলেও এটি লিভারের মধ্যে গ্লাইকোজেন রূপে জমা হয় এবং অতিরিক্ত হলে ফ্যাটি লিভার সৃষ্টি করে। এক সমীক্ষা অনুসারে, যারা প্রতিদিন ১ গ্লাস সফট ড্রিংক খান, তাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি ৩৫% বেশি। তাই এসব খাবার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
- ফল খান আসল রূপে, জুস নয়
- চিনির পরিবর্তে স্টেভিয়া বা নারকেল চিনি ব্যবহার করুন
- জলখাবারে প্রোটিন-ভিত্তিক খাবার রাখুন
বীজজাত ভেজিটেবল অয়েল (Seed Oils)
অনেকেই ভাবেন সূর্যমুখী, রাইস ব্র্যান, ভুট্টা, সয়াবিন বা ক্যানোলা তেল স্বাস্থ্যকর। কিন্তু বাস্তবে এইসব বীজজাত তেল শরীরে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে ফেলে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ফ্যাটি লিভার-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এসব তেলের রিফাইন্ড প্রসেস এবং উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার সময় টক্সিন তৈরি হয়, যা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরিষার তেল বা ঘি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে।
স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
- রান্নায় সরিষার তেল বা দেশি ঘি ব্যবহার করুন
- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে
- তেলের ব্যবহার সীমিত রাখুন, সেদ্ধ খাবার বেছে নিন
বিশ্ববাজারের প্রভাব সহ নানা কারণে প্রক্রিয়াজাত তেল সহজলভ্য হলেও সচেতন থাকা জরুরি। বিশ্ববাজারের প্রভাব সম্পর্কিত সচেতনতা আপনার খাদ্যাভ্যাসেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক ও ঘুমের ওষুধ
অনেকেই মাথা ধরলে, সামান্য জ্বর বা শরীর ব্যথা হলেই প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খেয়ে নেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। একইভাবে ঘুমের অসুবিধা হলে ঘুমের ওষুধ খাওয়া এখন অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই ওষুধগুলোর নিয়মবহির্ভূত সেবনে লিভার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয় এবং ধীরে ধীরে ফ্যাটি লিভার বা সিরোসিসের ঝুঁকি তৈরি করে।
স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
- ব্যথা হলে প্রাকৃতিক সমাধান যেমন হট কমপ্রেস ব্যবহার করুন
- পর্যাপ্ত পানি পান ও ব্যায়াম করুন
- ঘুমের সমস্যা হলে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম করুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এমনকি প্যারাসিটামলও যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে সেটি লিভার ফেইলিওর পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
লিভারের যত্নে সঠিক খাদ্যাভ্যাস
লিভার সুস্থ রাখতে শুধু ক্ষতিকর খাবার বাদ দিলেই চলবে না, বরং লিভার-বান্ধব কিছু খাবার নিয়মিত ডায়েটে রাখাও জরুরি। যেমন:
- হলুদ: এতে থাকা কারকিউমিন লিভারের প্রদাহ কমায়
- বিটরুট: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, লিভার ডিটক্সে সাহায্য করে
- অ্যাভোকাডো ও বাদাম: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে ভরপুর
- সবুজ শাকসবজি: ক্লোরোফিল লিভারের টক্সিন দূর করে
ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন বাড়লেই ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা বা সাইক্লিং করলে লিভারের ফ্যাট কমে আসে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণগুলোর একটি। তাই সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামই একমাত্র উপায়।
স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন যেমন নিয়মিত নজরে রাখা জরুরি, তেমনি নিজের স্বাস্থ্যও প্রতিদিন সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রাপ্ত তথ্য
ফ্যাটি লিভার নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে Harvard ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধগুলি পড়তে পারেন।
আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে। প্রতিদিন কিছুটা সচেতনতা আপনাকে লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
FAQs
ফ্যাটি লিভার হলে কী উপসর্গ দেখা যায়?
শরীরে দুর্বলতা, হালকা পেটব্যথা, খাবারে অরুচি, বমিভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় উপসর্গ থাকে না।
চিনি খাওয়া বন্ধ করলেই কি ফ্যাটি লিভার সেরে যাবে?
চিনি কম খেলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমে, তবে সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস জরুরি।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন তেল ব্যবহার করবেন?
সরিষার তেল, ঘি বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প। সয়াবিন, ক্যানোলা বা সূর্যমুখীর তেল পরিহার করা উচিত।
প্রতিদিন কতক্ষণ ব্যায়াম করলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমবে?
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ফ্যাটি লিভার কি নিরাময়যোগ্য?
হ্যাঁ, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা হয়, তবে ফ্যাটি লিভার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে।
ছবিটি ভালভাবে দেখুন মরুভূমির মধ্যে একটি ভুল রয়েছে, খুঁজে বের করুন
ঘুমের ওষুধ কি ফ্যাটি লিভার তৈরি করে?
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফ্যাটি লিভারসহ নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।