সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে সার চোরাচালানের অভিযোগ উঠেছে। চোরাচালানের সার জব্দ করার পর তা ছেড়ে দেয়া এবং সাংবাদিকের জেরার মুখে সেই সার পুনরায় জব্দ করায় চোরাচালানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। চোরাচালানে জড়িত ডিলার ও পিকআপ চালককে ছেড়ে দেয়ায় কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সার চোরাচালানে জড়িত ওই কর্মকর্তার নাম মো. ইমতিয়াজ আলম। তিনি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। অন্যদিকে, সার ডিলারের নাম খবির মুন্সি। তিনি সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের বিসিআইসির ডিলার ও মেসার্স মুন্সি ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী।
গতকাল বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে পাচারকালে পিকআপসহ পাঁচ টন সার (১০০ বস্তা) আটক করে জনতা। সারবোঝাই ওই পিকআপটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ন ১১-৮১৮২। চালকের নাম মো. হৃদয়।
সার আটকের বিষয়টি জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মো. রবীআহ নূর আহমেদকে জানানো হলে তিনি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলমকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটককৃত সার জব্দ না করে ছেড়ে দেন। ঘটনাটি ঘটে সদর উপজেলার জয়রা এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার গড়াপাড়া ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার “মেসার্স মুন্সি টেড্রার্স” থেকে ১০০ বস্তা ডিএপি ও টিএসপি সার পাচার করে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকায় পাঠানো হচ্ছিল। পাচারকালে জয়রা এলাকার সরকারি হাঁস-মুরগী পালন কেন্দ্রের পাশ থেকে সার বোঝাই পিকআপটি আটক করে জনতা।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দিকে পিকআপভর্তি সার নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহ হলে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভার এলোমেলো কথা বলেন। জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আলমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে সার বোঝাই পিকআপের ছবি তুলে তা ছেড়ে দেন।
কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আলম বলেন, সারগুলো ডিলারের গোডাউনে পাঠিয়েছি। সার পাচার না করতে ডিলারকে নির্দেশ দিয়েছি। আপনারা ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সার চোরাচালানের বিষয়ে ডিলার খবির মুন্সিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজের চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ডিলার খবির মুন্সি কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। এ সময় কৃষি কর্মকর্তাও ডিলার খবির মুন্সিকে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার পরামর্শ দেন। সাংবাদিকরা চলে আসার পর পিকআপ ভর্তি সারগুলো ফের ঝিটকা এলাকায় পাচার করা হয়।
বেলা তিনটার দিকে সাংবাদিকরা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলমের সঙ্গে কথা বলতে তার অফিসে যান। এ সময় তার কাছে পাচার হওয়া সার জব্দ না করে ছেড়ে দেয়া ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ডিলারকে পরামর্শ দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম ডিলারকে ফোন করেন। ডিলার জানান, সারগুলো ঝিটকা পাঠানো হয়েছে। পরে ডিলারের মাধ্যমে সারগুলো ঝিটকা থেকে উপজেলায় এনে জব্দ করা হয়।
সন্ধ্যায় ডিলার খবির মুন্সিকে আটক করে এসিল্যান্ড অফিসে নেয়া হয়। সেখানে কৃষি কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার যুক্তি দেন কৃষি কর্মকর্তা। যদিও পাচার নিশ্চিত হওয়ার পর সারগুলো ফিরিয়ে এনে জব্দ করা হয়। পাচার হওয়া সার জব্দ করা হলেও পিকআপ চালক ও সার ডিলার খবির মুন্সিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।