জুমবাংলা ডেস্ক : পাঁচ বছর সাত মাসের মধ্যে চারবার ডিম দিয়েছে ‘পদ্মা’। প্রথম তিনবারই সে ডিম ছেড়েছে পানিতে। তাই কোনো বাচ্চা ফোটেনি। কিন্তু এবার বালুর ঢিবিতেই ডিম দিয়েছে প্রাণীটি। ওই ডিম ইতোমধ্যে ঢেকে দেওয়া হয়েছে বালুতেই। এবার এই ডিম থেকে নতুন অতিথির আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা মিঠাপানির বিরল প্রজাতির কুমির। এটি ঘড়িয়াল বলে সমধিক পরিচিত। এই ঘড়িয়াল এখন বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীর শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার পুকুরে আছে এ প্রজাতির দুটি ঘড়িয়াল। নারী ঘড়িয়ালটির নাম পদ্মা, পুরুষটির নাম গড়াই।
এই চিড়িয়াখানায় অনেক আগে থেকেই ছিল দুটি নারী ঘড়িয়াল। ১৯৮৫ সালে পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ঘড়িয়ালদের ঠাঁই হয় এখানে। পুরুষ ঘড়িয়াল না থাকায় প্রজনন হচ্ছিল না। আবার ঢাকা চিড়িয়াখানায় চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল থাকলেও নারী না থাকার কারণে সেখানেও প্রজনন হচ্ছিল না। পরে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) উদ্যেগে, দুই চিড়িয়াখানায় ঘড়িয়াল বিনিময় করা হয়।
এরপর ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহী থেকে ‘যমুনা’ নামের এক নারী ঘড়িয়ালকে পাঠানো হয় ঢাকায়। আর ঢাকা থেকে গড়াইকে এনে সঙ্গী করা হয় পদ্মার। একসঙ্গে থাকার দেড় বছর পর দুজনের ভাব জমে। তারপর পদ্মা তিনবার ডিম ছাড়ে পানিতে। আগে থেকেই পুকুরের মাঝে একটা বালুর ঢিবি ছিল। সেখানে পদ্মা-গড়াই রোদ পোহাত। কিন্তু ডিম পাড়তো পানিতে। এ জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন পুকুরের ভেতরের বালুর ঢিবিটা বড় করে দেয়। এবার পদ্মা ডিম ছেড়েছে সেই বালুর ঢিবিতে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার ডিমগুলো দেখতে পায়।
শুক্রবার সকালে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কিউরেটর আনারুল হক কর্মচারী শামসুল ও আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে ঘড়িয়ালদের খাবার দিতে যান। খাবার দিতে এসে দেখতে পান ভাঙ্গাচোরাসহ কয়েকটি ডিম। প্রথমে শামসুল ও আলমগীর ডিমগুলো দেখে ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা আনোয়ারকে ডাক দেন। আনোয়ার নেমে যেতেই ঘড়িয়াল তেড়ে আসে। পরবর্তীতে চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার কালাম, কর্মচারী বাবরসহ অন্যদের সহযোগিতায় আটটি ডিম উদ্ধার করেন। এরপর ডিমগুলো রাখা হয় ঢিবির বালুর ভেতরে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনচার্জ ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ঢিবিতে ডিমগুলো বালুর নিচে রাখা হয়েছে। পদ্মা এর আগে তিনবার ডিম দিলেও বাচ্চা হয়নি। পানিতে ডিম দেওয়ার কারণে বাচ্চা হয়নি। এবার বালুতেই ডিম দিয়েছে সে। আশা করছি, এবার চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি আসবে।
কুমিরজাতীয় প্রাণীর মধ্যে ঘড়িয়াল দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতি। বন্য পরিবেশে এরা ৫০ থেকে ৬০ বছর বাঁচে। কেউ কেউ ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। পৃথিবীতে এখন ঘড়িয়াল টিকে আছে ২০০টিরও কম। বালুর তাপেই ঘড়িয়ালের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। এতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।