জুমবাংলা ডেস্ক : নতুন করে আলোচনায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ‘ঘনিষ্ঠ বান্ধবী’ তৌফিকা করিম। আনিসুল হক আইনমন্ত্রী হওয়ার পর গত দশ বছরে এই নারী আইন মন্ত্রণালয় ঘিরে তৈরি করেন তার সাম্রাজ্য। আর নিয়োগ বাণিজ্য, রায় বদল থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। গেল জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে এমপি হওয়ার পর ওইবারই আইনমন্ত্রী হন আনিসুল হক। এরপর থেকে তিনি আইনমন্ত্রীর পদে ছিলেন।
গত মঙ্গলবার রাতে আনিসুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তৌফিকা করিম। কখনো তিনি আইনজীবী, কখনো মানবাধিকার কর্মী বা ব্যবসায়ী। এমনকি আনিসুল হকের মালিকানাধীন সিটিজেন ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যানও এই নারী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন আনিসুল হকের মা প্রয়াত জাহানারা হক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনিসুল হকের ওপর বান্ধবী তৌফিকার প্রভাব এতটাই ছিল যে, আইন মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্ত আসত তার কথায়। তার ফোনে পাল্টে যেত মামলার রায়। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জামিন অযোগ্য ব্যক্তির জামিনও হতো তার কথায়।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, আনিসুল-তৌফিকা জুটি গত ১০ বছরে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা কানাডাসহ আরও অনেক দেশে পাচার করেছে। উল্লেখ্য যে, তৌফিকার ছেলে থাকেন কানাডায়। এছাড়াও পাচারের অর্থে দুবাই এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হিসেবে কয়েকটি বাড়ি করেছে তৌফিকা-আনিসুল চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি জেলার চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা জজ নিয়োগ থেকে শুরু করে সাব রেজিস্ট্রার নিয়োগ-বদলি করে হাজার কোটি টাকা অবৈধ অর্জন করেছে এই জুটি। ‘স’ আদ্যাক্ষর দিয়ে নাম) ঢাকার এক (নারী) ডেপুটি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তৌফিকা হয়ে অবৈধ টাকা যেত আনিসুল হকের হাতে।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীর নামে কয়েকশ মামলা হয়। তাদের অনেককে নাশকতার মামলায় জড়িয়ে, ফাঁসিয়ে আনিসুল-বান্ধবী তৌফিকা অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে আলোচিত মামলার রায় বদলে দিতেও তিনি ‘বন্ধু’ আনিসুল হককে প্রভাবিত করতেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ঢাকার একটি হোটেলে আলোচিত ধর্ষণ মামলার রায় বদল করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গুলশানের একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আনিসুল-তৌফিকা জুটির বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে।
আদালতের একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, তৌফিকা আইনপেশায় আছেন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তৌফিকা করিম।
তৌফিকা আইনপেশার সূত্রে স্ত্রী বিয়োগের পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। যদিও তৌফিকার স্বামী-সন্তান রয়েছে। আনিসুল হকের কল্যাণে ২০১৯ সালে তিনি বেসরকারি উদ্যোক্তা সম্মননাও নেন। লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি) নামে তার একটি এনজিও রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার আগে ২৬ জুলাই তৌফিকা দেশ ছেড়ে কানাডা পালান বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।