স্পোর্টস ডেস্ক : প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক। সেই ২০১৮ সালে রিংকু সিংকে দলে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ওই সময় তো বটেই, গত আইপিএলের আগ পর্যন্ত কয়জন রিংকু সিংয়ের নাম জানত তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। এবারও যখন নাইট রাইডার্সে তার নাম দেখা গেল, তখন অনেকেই বলেছেন, এমন একজন ক্রিকেটারের ওপর টাকা ছড়ানো কি উচিত হয়েছে? আজ গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় এক ম্যাচে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন ২৫ বছর বয়সী রিংকু সিং।
ম্যাচটি জয়ের জন্য শেষ ওভারে নাইটদের প্রয়োজন ছিল ২৯ রানের। হাতে মাত্র ৩ উইকেট। জশ দয়ালের করা ২০তম ওভারের শেষ পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে দেন রিংকু সিং। ক্রিকেট ইতিহাসে ছয় বলে ছয় ছক্কার ঘটনা আছে, এই ভারতের মাটিতেই বেন স্টোকসকে চার ছক্কা মেরে ব্র্যাফেটের বিশ্বকাপ জেতানোর ঘটনা আছে, কিন্তু এভাবে শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা! তাও এমন একজন ক্রিকেটার এই কাণ্ডটা ঘটালেন, যাকে ক্রিকেট দুনিয়া সেভাবে চেনেই না।
রিংকু সিং নাইটদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেন গত আসরে। ৭ ম্যাচ খেলে করেন ১৭৪ রান। এর আগে তিন বছরে মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলে তিনি করেছিলেন ৭৭ রান। এমন একজন ক্রিকেটার আজ নাইটদের জিতিয়ে দেবেন, সেটা কি কেউ কল্পনা করেছিল? আসলে ক্রিকেট এমনই। রোমাঞ্চকর সব ঘটনার জন্ম হয় ২২ গজে। রিংকু সিংয়ের উত্থানের গল্পটাও কম রোমাঞ্চের নয়। যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাই একটা যুদ্ধ ছিল। আইপিএল তো বহু দূরের বিষয়।
লখনউয়ের দুই কক্ষের ভাঙাচোরা টিনের ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে ছিল রিংকুর সংসার। তারা বাবা খানচাঁদ সিং গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি দেওয়ার কাজ করতেন। দুই বেলা ঠিকমতো খাবার জুটত না। বাধ্য হয়ে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রিংকুকে তার বড় ভাই এক জায়গায় ঝাড়ুদারের কাজে লাগিয়ে দেন। সেই কাজ করেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেননি রিংকু। মাত্র ১৭ বছর বয়সে উত্তর প্রদেশ রাজ্য দলে সুযোগ পান। ২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়।
২০১৮ সালে ডাক পান আইপিএলে। একটা সময় নাইট রাইডার্সের একাদশে দেখা যেত না রিংকুকে। কিন্তু বদলি হিসেবে নেমে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে তিনি বারবার আলোচনায় উঠে আসেন। কিন্তু একাদশে সুযোগ পেতেন না। তার সমসাময়িক ক্রিকেটাররা যখন আইপিএলে অধিনায়ক পর্যন্ত হয়ে গেছেন, রিংকু শুধু ফিল্ডিং করেছেন! হাল ছাড়েননি রিংকু। চেষ্টা করে গেছেন নিজেকে বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়ার। নিজের জীবন থেকেই সেই রসদ পেয়েছেন। যে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে উঠে এসেছেন, ক্রিকেট মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।