লাইফস্টাইল ডেস্ক : অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের কারণেই অনেকেই আলসারের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বর্তমান বিশ্বের ২.৪ থেকে ৬.১ শতাংশ মানুষ আলসারের সমস্যায় ভুগছেন। পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে তা সহজেই সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
আলসার শব্দটি এসেছে গ্রীক এলকোস নামক শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ দ্বাড়ায় “ক্ষত”। আলসার এমন একটি রোগ যা খাদ্যনালী কিংবা পেট বা ছোট অন্ত্রের আস্তরণের উপর ঘা বা বিভিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি করে থাকে। সাধারণত আলসার বলতে পাকস্থলীর আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারকেই বোঝানো হয়ে থাকে। এছাড়াও ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতর ডিওডেনাম নামক অংশতে এটি সাধারণত হয়ে থাকে যা পেপটিক আলসার হিসেবে পরিচিত।
পাকস্থলির ক্ষত (পেপ্টিক আলসার) মানে পাকস্থলি ও এর পরের অংশে কোন ক্ষত বা প্রদাহ। পাকস্থলির গায়ের আবরণ ও নিঃসৃত অ্যাসিডের ভারসাম্য নষ্ট হলেই এই আলসার হয়।
পাকস্থলির ক্ষত (পেপ্টিক আলসার) দুই ধরনের। একটা হল স্টমাক আলসার, স্টমাকের আলসারকে আবার বলা হয় গ্যাস্ট্রিক আলসার। আরেকটি হল ডিওডেনাম আলসার। এই দুটোকে একত্রে বলা হয় পেপ্টিক আলসার বা পাকস্থলির ক্ষত।
পাকস্থলীর গ্যাসট্রিক গ্ল্যান্ডে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয়। সাধারণত অনেকক্ষণ খালি পেটে খাকলে, অতিরিক্ত চা,কফি পান করলে, মশলাযুক্ত ও ভাজাভুজি খাবার বেশি খেলে, খাওয়ার অনিয়ম হলে, রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা ইত্যাদি কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে। গ্যাস, অম্বলের কারণেই পেট ফুলে ওঠে, ঢেকুর ওঠে, বুক জ্বালা করে ও পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।
খাদ্যনালিতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হয়। তা ছাড়া ‘এইচ পাইলোরি’ নামক একটি ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ থেকেও এই রোগ হতে পারে। এই সংক্রমণের ফলেই ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতরে আলসার দেখা দিতে পারে। তাই আলসার সম্পর্কে সচেতন হন শুরু থেকেই। জেনে নিন আলসারের কোন কোন লক্ষণ দখলে সতর্ক হবেন।
খাওয়ার পরেই পেটের উপরের ও মাঝের দিকে জ্বালা করে, কামড়ে ধরা ব্যথা হয়, তা হলে সতর্ক হোন।
গ্যাসট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার দু’-তিন ঘণ্টা পর পেটের ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। খাবার খাওয়ার পর যদি এমনটা প্রায়ই ঘটে, তা হলে তা আলসারের উপসর্গ হতে পারে।
খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেটে ব্যথা বাড়লেও আপনার আলসার হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় অনেক ক্ষণ খালি পেটে থাকলে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়।
বুক জ্বালা করলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অম্বলের সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাই। ঘন ঘন এমনটা হওয়া কিন্তু আলসারের লক্ষণ।
বেশিক্ষণ পেট খালি থাকলেই যকৃৎ থেকে যে বিনি নির্গত হয় তা গলব্লাডারে জমা হয়। এই তরল হজমে বাধা দেয়। ফলে বারবার বমি, পিত্তবমির মতো লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও খাবারের সংক্রমণ থেকে প্রায়শই পেটে ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। অ্যাসিড বেশিমাত্রায় ক্ষরণ হয় বলে গলা জ্বালা, পেট ব্যথার মতো সমস্যা দেখা যায়। সারাক্ষণ গা গোলানো, বমি-বমি ভাবের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই আলসার হয়েছে কি না, পরীক্ষা করিয়ে নিন।
চিকিৎসকের মতে, আলসারের সর্বাধিক কমন লক্ষণসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে পেটের উপরিভাগে তীব্র ব্যথা। ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকের উপরিভাগের যে কোনো জায়গায় আলসার ডেভেলপ হতে পারে, কিন্তু বেশীর ভাগ সময় ভাবি যে এটি পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়ে থাকে, যেখানে আমরা আসলে ব্যথা অনুভব করি।’
আলসার রোগীদের খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় বা ক্ষুধা কমে যায়। ক্ষুধা হ্রাস এবং সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে বমি অপ্রত্যাশিত ভাবে তাদের ওজন কমিয়ে ফেলে। কিছু আলসার রোগীরা বলেন যে, স্বাভাবিক পরিমাণে আহার সত্ত্বেও তাদের ওজন হ্রাস পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, আলসার নিজেই ওজন কমাতে পারে।
আলসারের সর্বাধিক কমন লক্ষণসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে, বদহজম এবং এই কারণেই আপনার ঢেকুর ওঠতে পারে। যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঢেকুর তোলেন এবং উল্লেখিত উপসর্গের যেকোনো একটি লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
ভিটামিন বি ১২ এর অভাব অনেক সময়ই আমরা বুঝতে পারি না। ডি এন এ এবং রক্ত সঞ্চালনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এছাড়াও ডাইরিয়া,কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, ডিপ্রেশন, শ্বাসের সমস্যা দেখা যায়। যাঁরা গ্যাসট্রিকের সমস্যার ভুগছেন তাঁরা যদি ডিম, লো ফ্যাট মিল্ক, লো ফ্যাট মিল্কের দই, চিকেন ব্রেস্ট খেতে পারেন তাহলে উপকার পাবেন।
প্রায়শই যদি ডায়েরিয়া ও পেটে ব্যথা হয়? আপনি ভাবেন বোধহয় খাবার সমস্যা বা পানির থেকে কোনও কারণে হয়েছে। কিন্তু সাতদিন ছাড়াই যদি এই সমস্যা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হয়ে গ্যাস্ট্রিকের জন্য এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই সঙ্গে হঠাৎ করে পেট ব্যথা, বমি, ফুড পয়জন মানেই সমস্যা অন্য।
ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া। বেশি ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, বেশি পরিমাণ লবণ খাওয়া প্রভৃতি কারণে পেটে মেদ জমে। এর ফলে শুধুই যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
গ্যাস্ট্রিক ও বমি বমি ভাব থেকে মুক্তির উপায়
প্রতিদিনকার একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক। আর এর সঙ্গে বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া। এই সমস্যার ঘরোয়া সমাধানে অনেকেই লেবু-পানি খেয়ে থাকেন।
যদিও এতে কাজ হয়। তবে এর থেকেও দ্রুত ফল পেতে রয়েছে আরো একটি উপায়। রান্না ঘরেই আছে এর সহজ সমাধান। একটু দারুচিনিতেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে অতি সহজেই। শুধু এই সমস্যাই নয়, পেট খারাপ ও খুব তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার পরেও দারচিনি খেলে সস্তি মেলে। চলুন জেনে নেয়া যাক এর সেবন পদ্ধতি-
এক গ্লাস পানির মধ্যে সারা রাত দারুচিনি ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেই পানি খান। প্রায়ই যদি বমি বমি ভাব হয়, তাহলে দারুচিনি ভেজানো পানি সঙ্গে রাখুন।
এছাড়া বাড়িতে দারুচিনি দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন। পানি গরম করার সময়ে দারুচিনি দিয়ে খান। এতেও চটজলদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা বমি ভাব কমবে।
দারুচিনি সাধারণত বিরিয়ানি এবং মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আযুর্বেদ অনুযায়ী, মশলাদার খাবার খেয়ে বমি ভাব হলেও তখন দারুচিনিই ওষুধের কাজ করে। পেটও ঠাণ্ডা রাখে এই মিশ্রণ।
গাড়িতে যাতায়াত করার সময়ে বমি বমি ভাব হয় নিশ্চয়! সেসময় সঙ্গে দারুচিনি ভেজানো পানি রাখুন।
অনেকেরই ধারণা ঝাল, তেল, মশলাদার খাবার খেলেই আলসার হতে পারে। এই ধারণা কিন্তু ভুল। ঝাল বা মশলাদার খাবার আলসারের জন্য দায়ী নয়। তবে এই খাবার রোগের তীব্রতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে। ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস পরিপাকতন্ত্রে আলসারের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। কর্মব্যস্ত জীবনে কাজের চাপে আমরা খেতেও ভুলে যাই। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলেও কিন্তু শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথা উপশম করার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন। ঘন ঘন ব্যথার ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু পেটের মধ্যে এই মারণরোগ ডেকে আনছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।