লাইফস্টাইল ডেস্ক : চিকেন চেঙ্গিজি। নাম শুনলে মনটা আনচান করে উঠতে বাধ্য। একে তো চিকেন তায় আবার এমন ‘মশলাদার’ নাম। কথিত আছে যে মুরগির এক সুস্বাদু এবং নতুন পদ রান্না করে মঙ্গোল যোদ্ধা চেঙ্গিজ খানকে খাইয়েছিলেন তাঁর বাবর্চি। সেই পদ খেয়ে দারুণ খুশি হয়েছিলেন চেঙ্গিজ খান। তাই নাকি তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছিল এই পদের। এই পদটি এখন উত্তর ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি রান্না।
মুঘলাই রান্নার সঙ্গে ভারতীয় তথা বাঙালি খাদ্যরসিকগণ ভালোভাবেই পরিচিত। আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল যুগ শুরু হয় পঞ্চদশ শতকে, বাবরের শাসনকালে। ফার্সি ভাষায় “মুঘল” শব্দের অর্থ “মঙ্গোল।” কিন্তু মুঘল রাজত্ব প্রতিষ্ঠার আগেই নাকি ভারতে মুঘলাই খাবার প্রবেশ করে গিয়েছিল। আর যে পদটির হাত ধরে এই ঘটনাটা ঘটেছিল, সেই খাবারটিই হল চিকেন চেঙ্গিজি।
যদিও ইতিহাস বলছে, চেঙ্গিজ খান কখনও দিল্লি সফর করেননি। তিনি সিন্ধু পর্যন্ত পৌঁছোতে পারলেও দিল্লিতে আসেননি। তাছাড়া সাবেকি এই পদে যে সব মশলা ব্যবহার করা হয়েছিল তা মূলত ভারতীয়, যা মঙ্গোল সেনাবাহিনীর কাছে ছিল বিদেশি মশলা। তাই অনেক ইতিহাসবিদের মতে, চেঙ্গিজ খানের সঙ্গে চিকেন চেঙ্গিজির কোনও যোগ নাও থাকতে পারে।
আবার দিল্লিতে প্রবেশ করতে না পারলেও মুঘল সৈন্যরা পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান অঞ্চলের বিভিন্ন শহর ও শহরতলীতে প্রবেশ করেছিল। সেখানে তাদের বংশধরেরা থেকে গেছেন। সেই অঞ্চলগুলিকে বলা হত মুঘলপুরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুঘলপুরা বিলুপ্ত হলেও তাদের রন্ধনশৈলী টিকে রয়েছে আজও। চিকেন চেঙ্গিজি সেইরকমই একটি রান্না বলে অনেকে মনে করে থাকেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের একটি জনপ্রিয় উপাধি হল ‘চেঞ্জেজি’। এই উপাধিধারীদের চেঙ্গিজ খানের বংশোদ্ভূত বলে দাবি করা হয়।
উপকরণ
চিকেন- ১ কেজি (বড় টুকরো করে কাটা)
ম্যারিনেশনের জন্য
ভালো করে ফ্যাটানো দই- ৫-৬ টেবিল চামচ
আদা রসুন বাটা- ২ টেবিল চামচ
লেবুর রস- ২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- পরিমাণ মতো
নুন- স্বাদ অনুসারে
গ্রেভির জন্য
পেঁয়াজ- ২টি মিডিয়াম সাইজের
কাজু- ১৫-২০টি
লঙ্কাগুঁড়ো- ২ চামচ
কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো- ২ চামচ
ধনে গুঁড়ো- ৩ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো- ১ চামচ
আদা রসুন বাটা- ২ চামচ
টমাটো পিউরি- ৪ চামচ
দুধ- ১ কাপ
ফ্রেশ ক্রিম- ৪ চামচ
চাট মশলা- সামান্য
কসৌরি মেথি- ১ চামচ
সাদা তেল বা ঘি- পরিমাণ মতো
নুন- স্বাদ অনুসারে
প্রণালী
– চিকেন ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
– এবার চিকেন ম্যারিনেট করে নিতে হবে। দই, আদা-রসুন বাটা, লেবুর রস, লঙ্কা গুঁড়ো এবং নুন দিয়ে খুব ভালো করে চিকেন মেখে নিন।
– এক ঘণ্টার মতো চিকেন ম্যারিনেট করে রাখুন।
– পেঁয়াজ ঝিরিঝিরি করে কেটে নিন। কড়াইয়ে তেল বা ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে নিন। এতে দিয়ে দিন কাজু।
– কাজু ও পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
– কাজু-পেঁয়াজ বাটা ঠান্ডা করে নিয়ে বেটে নিন। মিক্সিতে প্রয়োজন মতো জল দিয়ে মিহি করে বাটতে হবে।
– এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম করুন। তাতে ম্যারিনেট করা চিকেনগুলি ভালো করে ভেজে নিন। চিকেনের দুই পিঠ হালকা বাদামি হয়ে গেলে ভালো।
– ভাজা চিকেন আলাদা করে রাখুন।
– বাজার থেকে কেনা রেডিমেড টমাটো পিউরি দিতে পারেন। আবার দুটি মিডিয়াম সাইজের টমাটো মিক্সিতে পেস্ট করে নিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
– এবার দুধ ফুটিয়ে ঠান্ডা করে রাখুন।
– কসৌরি মেথি শুকনো খোলায় হালকা ভেজে হাত দিয়ে গুঁড়ো করে নিন।
– কড়াইয়ে ফের তেল কিংবা ঘি দিয়ে গরম করুন।
– এবার এতে দিয়ে দিন আদা রসুন বাটা। মিনিট দুয়েক ভালো করে ভেজে তাতে দিয়ে দিন টমাটো পিউরি। কষাতে থাকুন।
– ভালো করে মেশানোর পর এতে দিয়ে দিন পেঁয়াজ-কাজু বাটা।
– খুব ভালো করে কষাতে থাকুন যতক্ষণ না তেল বের হচ্ছে।
– এবার এতে একে একে দিয়ে দিন নুন, লঙ্কাগুঁড়ো, কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো এবং গরম মশলা গুঁড়ো।
– ফের কষাতে থাকুন। মশলা থেকে তেল আলাদা হলে তাতে দিয়ে দিন দুধ। আরও একবার ভালো করে মেশাতে থাকুন।
– মিনিট চার-পাঁচ পরেই দেখবেন মশলা থেকে ফের তেল আলাদা হচ্ছে। এবার এতে চিকেন ভাজাগুলি দিয়ে দিন।
– খুব ভালো করে কষাতে থাকুন। প্রয়োজন মতো জল দিয়ে ফের কষাতে থাকুন।
– মিনিট পনেরোর মধ্যেই দেখবেন মোটামুটি রেডি হয়ে গেছে। এবার এতে ছড়িয়ে দিন ফ্রেশ ক্রিম, চাট মশলা এবং রোস্টেড কসৌরি মেথি।
– কড়াইয়ের ঢাকনা চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন।
– রুমালি রুটি, তন্দুরি রুটি কিংবা নানের সঙ্গে চিকেন চেঙ্গিজির জুটির জবাব নেই। ভাতের সঙ্গে খেতে চাইলে সাদা ভাতের বদলে জিরা রাইসের সঙ্গে খান। পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গী হলে চিকেন চেঙ্গিজি আবার বেশি মশলাদার হয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।