জুমবাংলা ডেস্ক : আকাশপথে চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট দুটি উচ্চতা বেঁধে দেয়া হয়েছে বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বেঁধে দেয়া পথ দুটি হলো ভূমি থেকে ৫০০ ও এক হাজার ফুট। অনুমতি ছাড়া এ সীমানায় ড্রোন, রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট সিস্টেম, রিমোট কন্ট্রোলড খেলনা উড়োজাহাজ ওড়ানোর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকলেও মানা হচ্ছে না ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে। অনেক ক্ষেত্রেই লম্বা সুতা ব্যবহার করে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে এক-দেড় হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়। ফলে প্রায়ই উড্ডয়নরত হেলিকপ্টারে আটকে যাচ্ছে ঘুড়ির সুতা। আশঙ্কা তৈরি করছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ৬০ মিটার অথবা ২০০ ফুটের ওপরে ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরের তিন নটিক্যাল মাইলের মধ্যেও ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যদিও দেশে মানা হচ্ছে না এসব। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে অর্থাৎ গাজীপুর, পূর্বাচল ও আশুগঞ্জ থেকে লম্বা সুতা ব্যবহার করে ওড়ানো ঘুড়িগুলোই বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে হেলিকপ্টার চলাচলের ক্ষেত্রে। এ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও প্রায়ই যান্ত্রিক ক্ষতির মুখে পড়ছে বেসরকারি হেলিকপ্টারগুলো।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের পরিচালক এবং প্রধান বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার গুলজার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি হেলিকপ্টারগুলোর জন্য ৫০০ ও এক হাজার ফুট উচ্চতা বরাদ্দ থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় ৫০০ ফুট। অতীতে ওড়ানো ঘুড়িগুলোর বিচরণ ক্ষেত্র সর্বোচ্চ ৩০০ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেকে লম্বা সুতা ব্যবহার করে দেড় হাজার ফুট পর্যন্ত আকাশসীমায় ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, যা হেলিকপ্টার উড্ডয়নের জন্য বিপজ্জনক। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সাধারণ সুতার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের সুতা, যা এতই শক্ত যে হেলিকপ্টারের পাখার সংস্পর্শে এলে না ছিঁড়ে উল্টো জড়িয়ে যাচ্ছে, যা নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সারা বছর ঘুড়ি ওড়ানো হলেও বর্ষার পর এ প্রবণতা বাড়ে। বড় দুর্ঘটনার আগেই এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কাগজের ঘুড়ির জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি। আর ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সাধারণ সুতার বদলে যে প্লাস্টিকের সুতো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিও আঠার সঙ্গে কাচ, লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের গুঁড়ো মিশিয়ে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এসব উপকরণ মেশানোয় সুতা এতই শক্ত হচ্ছে যে টানাটানি করেও সহজে ছেঁড়া যায় না। হেলিকপ্টারের পাখায় পেঁচিয়ে গেলে ঘুড়ির সুতা টেনে খুলতেও নানা সমস্যা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটি।
বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ড্রোন, গ্লাইডারসহ উড্ডয়নকারী যেকোনো যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৭’ পাস হয়েছে। বিমানবন্দরের আশপাশে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ওড়া ঘুড়ি যেহেতু আকাশপথে চলাচলকারী হেলিকপ্টারগুলোর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, সে কারণে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে বেবিচকের পক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এজন্য যারা বিমানবন্দরের আশপাশে লম্বা সুতা ব্যবহার করে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে তাদের সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে প্রচার বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও ঘুড়ি ওড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড্রোন, রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট সিস্টেম, রিমোট কন্ট্রোলড খেলনা বিমান ও ঘুড়ি ওড়াতে অনুমতি লাগবে। অনুমোদন ছাড়া এগুলো ওড়ানো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি ঝুঁকি বলে বিবেচিত হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া ওড়ানোর ফলে নিয়মিত যাত্রীবাহী দেশী-বিদেশী বিমান, হেলিকপ্টার এবং
দ্রুতগতির সামরিক বিমানের আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বিবেচনায় অনুমোদন ছাড়া কোনো কিছু ওড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে বলে সে সময় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে আইএসপিআর।
বেবিচক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে বর্তমানে ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০টি হেলিকপ্টার বাণিজ্যিক সেবা দিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি এগুলো ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে স্কয়ার লিমিটেডের তিনটি, মেঘনা এভিয়েশনের চারটি, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের সাতটি, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের চারটি, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজের চারটি, ইমপ্রেস এভিয়েশনের একটি, বিআরবি এয়ার লিমিটেডের দুটি, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি, পারটেক্স এভিয়েশন ও বিসিএলের দুটি করে হেলিকপ্টার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও প্রতি মাসে হেলিকপ্টারের ফ্লাইট সংখ্যা ছিল এক হাজারের মতো, কিন্তু বর্তমানে প্রতি মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
সূত্র : বণিকবার্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।