বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন মানেই যেন এক ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনা, অস্থিরতা এবং বিভাজনের প্রতিচ্ছবি। এ নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক দলের সরাসরি হস্তক্ষেপ, প্যানেলভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রায়শই সংঘর্ষের কারণে ছাত্ররাজনীতির প্রকৃত চেতনা অনেকাংশে ম্লান হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো তখন রাজনৈতিক মেরুকরণে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেখানে ছাত্রদের কণ্ঠস্বর অনেক সময়ই দলীয় স্লোগানে হারিয়ে যায়।
তবে এবার এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে রাজধানী শহর থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন হয়ে উঠেছে এক শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণতান্ত্রিক অনুশীলন। এখানে নেই কোনো দলীয় প্রভাব, নেই সহিংসতা বা অস্থিরতা। বরং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, নিজস্ব মতামতের প্রকাশ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এই নির্বাচনের মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে।
এই নির্বাচন প্রমাণ করছে—ছাত্ররাজনীতি মানেই যে বিশৃঙ্খলা ও দখলদারিত্ব, সে ধারণা সবসময় সত্যি নয়। বরং সঠিক দিকনির্দেশনা, নীতিনিষ্ঠ প্রক্রিয়া এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন অংশগ্রহণ থাকলে একটি নির্বাচন হতে পারে সুন্দর, স্বচ্ছ এবং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক রঙের বাইরে।
দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ১৯টি ভোট কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, চলবে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ উপলক্ষে ৩২ একর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ১১টি পদে লড়ছেন ৬৩ জন প্রার্থী। নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ হাজার ৭৬১ জন। এর আগে, গত ১১ আগস্ট তফসিল ঘোষণা করে গবি প্রশাসন। এরপর ২৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। পরবর্তী আপিল ও শুনানি শেষে ১৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত তালিকা।
এ নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোতায়েন থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৫০ জন সদস্য। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ভোটকেন্দ্রে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা, বড় পর্দায় সরাসরি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে পারবে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ড. ফুয়াদ হোসেন জানান, তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের মোট ১৩টি ধাপের মধ্যে ১১টি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আচ ভোটগ্রহণ এবং ফলাফল প্রকাশের ধাপ বাকি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও এনএসআইয়ের ৩৫০ জন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আছে সেনাবাহিনী। এছাড়া গঠন করা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র সংসদ রয়েছে। এবার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) চালু রয়েছে ছাত্র সংসদ। ২০১৩ সালে প্রথমবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল তৃতীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। তবে প্রশাসনের জটিলতায় নির্বাচিত সংসদ পুরো মেয়াদ কাজ করতে পারেনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর গকসুর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এটি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন।
এস আলমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির নির্দেশ
উল্লেখ্য, গণবিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (আধা সরকারি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সাভারের নলামে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাঁচটি অনুষদে মোট ১৭টি বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, ছাত্র সংসদ, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, মিউজিক কমিউনিটি, অগ্নিসেতু সাংস্কৃতিক পরিষদ, শুভ সংঘ। এ ছাড়াও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পরিচালিত মোট ১৮টি সংগঠন রয়েছে।
সূত্র: আরটিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।