ব্যস্ততার ভিড়ে, দামি ডাক্তারি পরামর্শের আড়ালে, আমাদেরই ঘরের কোণে লুকিয়ে আছে সুস্থতার সহজ সূত্রগুলো। মনে পড়ে সেই ছোটবেলার কথা? ঠাকুমার হাতের তৈরি তুলসী পাতার ক্বাথ, মায়ের জোরাজুরিতে সকালে উঠে গরম পানিতে মধু-লেবু, বাড়ির উঠানে সদ্য ধোয়া মেঝের গন্ধ – এগুলো শুধু স্মৃতি নয়, এগুলোই তো ছিল আমাদের প্রথম স্বাস্থ্যবিমা। আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে, যখন হাসপাতালের বিল আর ওষুধের দাম মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন ফিরে তাকানো জরুরি সেই সহজ, প্রাকৃতিক, ঘরোয়া পথের দিকেই। ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস শুধু পকেটের জন্য নয়, শরীর-মনের গভীরে পৌঁছায়, দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার ভিত্তি গড়ে। আসুন, জেনে নিই কিভাবে আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই হয়ে উঠতে পারে অসুস্থতা দূরে রাখার বড় হাতিয়ার।
ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস: কেন দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য?
আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস-এর গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রামীণ জনপদ থেকে শহুরে অট্টালিকা – প্রতিটি পরিবারেরই চ্যালেঞ্জ হলো সীমিত সম্পদ ও সময়ের মধ্যে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবারই স্বীকৃতি দিয়েছে যে, Preventive Healthcare বা প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার সিংহভাগই নির্ভর করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বাস্থ্যবিধির ওপর। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা, এমনকি দীর্ঘমেয়াদী অসুখ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও ঘরোয়া যত্নের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গবেষণা বলছে, সঠিক হাত ধোয়ার অভ্যাস alone শিশুমৃত্যুর হার ৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে (UNICEF Bangladesh)। এটি শুধু অর্থ সাশ্রয়ী নয়, সময় সাশ্রয়ীও বটে। একটি গাছের চারা রোপণের মতো, দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস-এর চর্চাই ভবিষ্যতে বিশাল সুস্থতার ছায়া দিতে পারে।
খাদ্য ও পানীয়ের পরিচ্ছন্নতা: সুস্থতার প্রথম সোপান
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভিত্তি শুরু হয় আমাদের প্লেটে ও পানির গ্লাসে। বাংলাদেশে খাদ্য ও পানি বাহিত রোগ (যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ, আমাশয়) এখনও একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।
- পানি বিশুদ্ধকরণ: নলকূপের পানি ভরার আগে প্রথমে কিছুক্ষণ পানি ছেড়ে দিন যাতে স্ট্যান্ডিং পাইপলাইনের ময়লা বেরিয়ে যায়। ফোটানোর সময় পানি ভালো করে উথলে উঠতে দিন কমপক্ষে ৫ মিনিট ধরে। বর্ষাকালে বা বন্যার সময় ফোটানো পানিও ফিল্টার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ছেঁকে নিন পরিষ্কার কাপড়ে। বাজারে পাওয়া যায় সৌরশক্তি চালিত পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র (SODIS পদ্ধতি), যা গ্রামীণ এলাকায় কার্যকর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (dghs.gov.bd) গাইডলাইন মেনে চলুন।
- ফলমূল ও শাকসবজি ধোয়া: শুধু পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই হয় না। বিশেষ করে কাঁচা খাওয়া হয় এমন ফল (আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর, শসা) এবং সবুজ শাকসবজি। এক লিটার পানিতে এক চা চামচ ভিনেগার বা লবণ মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার চলমান পানিতে ভালো করে ঘষে ধুয়ে নিন। পাতা জাতীয় শাকে লুকিয়ে থাকা পোকা দূর করতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে আলতো করে নেড়ে দিন।
- মাছ-মাংসের সতর্কতা: মাছ কাটার পর কাটিং বোর্ড, ছুরি, হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা মাছ-মাংস রান্না করা খাবারের সংস্পর্শে আসতে দেবেন না। রেফ্রিজারেটরে রাখার সময় এয়ারটাইট কন্টেইনার ব্যবহার করুন এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখুন। পোল্ট্রি মাংস ভালো করে সিদ্ধ করুন।
- রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতা: রান্নার পরই রান্নাঘর মুছে ফেলার অভ্যাস গড়ুন। স্পঞ্জ ও কাপড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন, সপ্তাহে একবার গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। মশলার ডিব্বা, তেলের বোতলের মুখ ইত্যাদি জায়গায় তেল বা মশলা জমে যেতে দেবেন না। ময়লা ফেলার ঝুড়ি প্রতিদিন খালি করুন এবং জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক: লেবু ও লবণের রস মিশিয়ে রান্নাঘরের সারফেস মুছতে পারেন। ভিনেগারও কার্যকর।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: দৈনন্দিন অভ্যাসেই সুস্থতা
আমাদের হাতই হলো জীবাণু পরিবহনের প্রধান বাহন। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস।
- হাত ধোয়া: শুধু খাওয়ার আগে-পরে নয়, এই সময়গুলোতেও হাত ধোবেন অবশ্যই:
- টয়লেট ব্যবহারের পর
- বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার পর
- কাশি-হাঁচি দেওয়ার পর
- পোষা প্রাণী ধরার পর
- বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর পর
- কাঁচা মাছ-মাংস ধরার পর
- আবর্জনা ধরার পর
সাবান-পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালো করে হাত ঘষে ধুতে হবে (হাতের আঙুলের ফাঁক, নখের নিচ, হাতের পিঠ ভালো করে)। পানি না থাকলে অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার (কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহল) ব্যবহার করুন। icddr,b এর গবেষণা শহুরে স্কুলে নিয়মিত হাত ধোয়ার প্রচার চালানোর পর ডায়রিয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
- মুখ ও দাঁতের যত্ন: দিনে দুইবার (সকালে নাশতার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে) ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। জিভ পরিষ্কার করুন। মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন গোসল করুন, বিশেষ করে গরম বা ঘামাচির সময়। ত্বকের ধরন বুঝে সাবান ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত গরম পানি ত্বক শুষ্ক করে ফেলতে পারে।
- চুল ও নখের যত্ন: নিয়মিত চুল আঁচড়ান। মাথায় খুশকি বা চুলকানি থাকলে নিমপাতা সিদ্ধ পানি বা দই ব্যবহার করুন। নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখুন। নখের ভেতরে ময়লা জমে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে।
- পরিষ্কার পোশাক: প্রতিদিন পরিষ্কার অন্তর্বাস পরুন। ঘেমে যাওয়া পোশাক দ্রুত বদলে ফেলুন। বাইরে থেকে আসার পর পরার পোশাক পাল্টে ফেলার অভ্যাস করুন, বিশেষ করে শয্যায় যাওয়ার আগে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার সপ্তাহে অন্তত একবার পরিবর্তন করুন।
ঘরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর রাখার উপায়
আমাদের আশেপাশের পরিবেশই আমাদের সুস্থতার নীরব সহচর। একটি পরিষ্কার, আলো-বাতাসপূর্ণ ঘর অসুস্থতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
- বাতাস চলাচল ও সূর্যের আলো: প্রতিদিন সকালে ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য। সূর্যের আলো জীবাণু ধ্বংস করে, ঘরের ভেতরের আর্দ্রতা কমায় এবং মন ভালো রাখে। বিছানার তোষক, লেপ-তোয়ালে নিয়মিত রোদে দিন। বদ্ধ ঘরে ফাঙ্গাস ও ধুলোর মাইট (Dust Mites) বেড়ে যায়, যা অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের কারণ।
- ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ঝাড়ু দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। কার্পেট, ম্যাট, পর্দা নিয়মিত ঝেড়ে নিন। বইয়ের আলমারি, ফ্যানের ব্লেড, এসির ফিল্টারে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার করুন। এসির ফিল্টার মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত।
- আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ: বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং রান্নাঘর ও বাথরুমে আর্দ্রতা বাড়ে। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন। দরজা খোলা রাখুন। সিলিকন জেল বা চুনের ডেলা রাখতে পারেন আলমারিতে। ফাঙ্গাস দেখা দিলে ভিনেগার বা ব্লিচিং পাউডার (সতর্কতার সাথে) ব্যবহার করে মুছে ফেলুন।
- কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ: মশারি টানিয়ে ঘুমান। জানালায় নেট লাগান। পানি জমতে না দেওয়া (ফুলের টবের নিচের প্লেট, ফ্রিজের পিছনে জমা পানি ইত্যাদি) মশা নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। পিঁপড়া, তেলাপোকা দমনে বরিক অ্যাসিড পাউডার বা জেল বাইট ব্যবহার করা যেতে পারে (বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন)। নিমের তেল বা নিম পাতা প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে।
- পরিচ্ছন্ন শৌচাগার: টয়লেটের সিট, ফ্লাশের হ্যান্ডেল, কলের নব নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন। ফ্লোর ক্লিনার হিসেবে বেকিং সোডা ও ভিনেগার মিশ্রণ কার্যকর। বাথরুম যাতে শুকনো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
দৈনন্দিন ব্যায়াম ও বিশ্রাম: শরীর-মনের সমন্বয়
শারীরিক সক্রিয়তা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস পূর্ণতা পায় না।
- সকালের হাঁটা: প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। পার্কে, বাসার ছাদে, বা বাড়ির আশেপাশেই করা যায়। হাঁটা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের ঘনত্ব এবং মন-মেজাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- ঘরোয়া ব্যায়াম: যোগব্যায়াম (Yoga), প্রাণায়াম (গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস), স্ট্রেচিং, স্কিপিং, কিংবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা – ঘরেই করা যায় এমন অসংখ্য ব্যায়াম আছে। ইউটিউবে (Bangladeshi Fitness Channels) সহজ টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়ামের লক্ষ্য রাখুন (WHO Guideline)।
- পর্যাপ্ত ঘুম: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম অপরিহার্য। ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভির স্ক্রিন দেখা বন্ধ করুন। শোবার ঘর শান্ত, অন্ধকার ও ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার অভ্যাস তৈরি করুন। গরমে মশারি টানানোর আগে একটু ঠাণ্ডা পানির ছিটা দিলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে।
- পানির অভ্যাস: সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন (সাধারণত ৮-১০ গ্লাস, তবে আবহাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে)। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করলে হজমে সাহায্য করে। পানির বোতল সবসময় কাছে রাখুন।
মানসিক স্বাস্থ্য যত্ন: অবহেলিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
- মাইন্ডফুলনেস ও ধ্যান: দিনে মাত্র ১০-১৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। এই সহজ ধ্যান (Meditation) চাপ কমায়, মনোযোগ বাড়ায়। বাগান করা, রান্না করা, গান শোনা – যা আপনাকে আনন্দ দেয়, তা নিয়মিত করুন।
- সামাজিক সংযোগ: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। কথা বলুন, হাসি-ঠাট্টা করুন। একাকিত্ব মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফোনে হলেও প্রিয়জনদের খোঁজ নিন।
- ডিজিটাল ডিটক্স: দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় (বিশেষ করে খাবার সময় ও ঘুমানোর আগে) মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার উদ্বেগ ও হতাশা বাড়াতে পারে।
- ইতিবাচক চিন্তা: কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস করুন। প্রতিদিন সকালে বা রাতে ৩টি ভালো জিনিস লিখুন যা আপনার জীবনে আছে। নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচকতায় রূপান্তরিত করার চেষ্টা করুন।
প্রাকৃতিক উপাদানে সাধারণ সমস্যার ঘরোয়া সমাধান
সামান্য অসুখ-বিসুখে ওষুধের দোকানে দৌড়ানোর আগে একবার রান্নাঘরের খুঁটিনাটি দেখে নিন। এগুলোই জাদুকরী ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস হতে পারে।
- সর্দি-কাশি-গলা ব্যথা:
- আদা কুচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা ও গোলমরিচ সিদ্ধ করে চা বানিয়ে পান করুন। মধু মিশিয়ে নিন।
- কাঁচা হলুদ কুচি ও আদা কুচি মধুর সাথে চিবিয়ে খান।
- গরম পানির ভাপ নিন (তুলসী পাতা বা ইউক্যালিপটাস তেল মিশিয়ে নিলে আরও ভালো)।
- লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন।
- হজমের সমস্যা (গ্যাস, অম্বল, বদহজম):
- এক চিমটি অজমলা (সেলারি সিড) বা জিরা ভেজে গুঁড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে খান।
- পানিতে কিছুটা পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে পান করুন।
- খাবারের পর সৌঁফ (আনিস সিড) চিবান।
- দই বা ঘোল (বাটার মিল্ক) পান করুন।
- ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া, পোড়া:
- পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- মধুর প্রলেপ দিন – প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল।
- অ্যালোভেরা জেল লাগান – ঠাণ্ডা করবে, নিরাময়ে সাহায্য করবে।
- (সতর্কতা: গভীর কাটা, বড় পোড়া, ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান)।
- ত্বকের সমস্যা (শুষ্কতা, ব্রণ, চুলকানি):
- শুষ্ক ত্বকে নারিকেল তেল বা বাদাম তেল ব্যবহার করুন (স্নানের পর ভেজা ত্বকে)।
- ব্রণের দাগে কাঁচা আলুর রস বা মুলতানি মাটি (Fuller’s Earth) লাগান।
- চুলকানি বা সামান্য র্যাশে ঠাণ্ডা দইয়ের প্রলেপ বা নিমপাতা বাটা দিতে পারেন।
- সানস্ক্রিন ব্যবহার ভুলবেন না, বিশেষ করে বাইরে বের হলে।
জরুরী প্রস্তুতি ও সতর্কতা
সুস্থ থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা জরুরি।
- প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স (First Aid Kit): বাড়িতে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স রাখুন যাতে থাকবে: ব্যান্ড-এইড, গজ, কটন, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম/লোশন (ডেটল/স্যাভলন), প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, অরস্যালাইন, থার্মোমিটার, কাঁচি, টুইজার, টর্চলাইট। এর অবস্থান পরিবারের সবার জানা থাকতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাদ দিন।
- জরুরী নম্বর: হাতের কাছে রাখুন নিকটস্থ হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স (ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯), জরুরী ফার্মেসি, এবং বিশ্বস্ত ডাক্তারের ফোন নম্বর।
- বিষক্রিয়া: বাড়ির বাচ্চারা যেন ক্লিনার, কীটনাশক, ওষুধের বোতল সহজে না পায়। এগুলো তালাবদ্ধ আলমারিতে রাখুন। বিষক্রিয়ার সন্দেহ হলে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যান বা ন্যাশনাল পয়জন কন্ট্রোল সেন্টারে ফোন করুন।
এই সহজ ঘরোয়া স্বাস্থ্য টিপস গুলোকে আপনার দৈনন্দিন রুটিনের অঙ্গ করে তুলুন। মনে রাখবেন, সুস্থতা কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি চলমান পথচলা। প্রতিদিনের ছোট ছোট সচেতন পদক্ষেপই জমা হয় দীর্ঘায়ু ও প্রাণবন্ত জীবনের ভান্ডারে। আপনার শরীর-মনই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ – এর যত্ন নেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং অপরিহার্য দায়িত্ব। আজ থেকেই শুরু করুন, আপনার পরিবারকে অনুপ্রাণিত করুন, এবং নিজের হাতে গড়ে তুলুন একটি সুস্থ, সুখী আগামীর ভিত্তি।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: প্রতিদিন কতবার হাত ধোয়া উচিত?
উত্তর: শুধু খাওয়ার আগে-পরে নয়। টয়লেট ব্যবহারের পর, বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার পর, কাশি-হাঁচি দেওয়ার পর, পোষা প্রাণী ধরার পর, বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর পর, কাঁচা মাছ-মাংস ধরার পর এবং আবর্জনা ধরার পর অবশ্যই হাত ধোবেন। সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালো করে ঘষে ধুতে হবে। সারাদিনে কতবার প্রয়োজন হবে তা আপনার কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে।প্রশ্ন: ঘরবাড়ি জীবাণুমুক্ত রাখার সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি কী?
উত্তর: নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং পর্যাপ্ত বাতাস ও সূর্যের আলো প্রবেশ করানোই মূল চাবিকাঠি। সপ্তাহে কয়েকবার ভ্যাকুয়াম করা বা ঝাড়ু দেওয়া, ধুলা মোছা, রান্নাঘর ও বাথরুম পরিষ্কার রাখা জরুরি। প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে সাদা ভিনেগার, লেবুর রস, বেকিং সোডা খুব ভালো বিকল্প। বিছানার চাদর, তোয়ালে নিয়মিত ধুতে হবে এবং রোদে শুকাতে হবে।প্রশ্ন: মানসিক চাপ কমাতে ঘরোয়া টিপস কী কী?
উত্তর: দিনে মাত্র ১০-১৫ মিনিট ধ্যান (Meditation) বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন (প্রাণায়াম) খুব কার্যকর। নিজের জন্য সময় বের করে যা করতে ভালো লাগে (গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা) তা করা উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো এবং কথা বলা চাপ কমাতে সাহায্য করে। দিনের একটি সময় ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকাও (ডিজিটাল ডিটক্স) উপকারী।প্রশ্ন: হালকা সর্দি-কাশিতে কী ধরনের ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর?
উত্তর: আদা, মধু ও লেবুর রস মিশ্রিত গরম চা বা পানি পান করা খুব উপকারী। গরম পানির ভাপ নিলে নাক বন্ধ ভাব কমে। কাঁচা হলুদ ও আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। লবণ পানিতে গার্গল করলে গলা ব্যথা কমে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং পানি খান। তবে জ্বর থাকলে বা অবস্থা খারাপ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।- প্রশ্ন: বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কী কী রাখা আবশ্যক?
উত্তর: একটি আদর্শ প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে থাকা উচিত: বিভিন্ন সাইজের ব্যান্ড-এইড/প্লাস্টার, স্টেরিলাইজড গজ, তুলা, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন (যেমন ডেটল, স্যাভলন), প্যারাসিটামল (ব্যথা ও জ্বরের জন্য), অ্যান্টাসিড (গ্যাস-অম্বলের জন্য), অরস্যালাইন (ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা রোধে), ডিজিটাল থার্মোমিটার, কাঁচি, টুইজার, পিন, জরুরি ফোন নম্বরের তালিকা এবং নির্দেশিকা পুস্তিকা। বাক্সটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।