মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে তৈরি হওয়া ল্যাকটেজ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হজমে। ল্যাকটেজ ইন্টলারেন্স নামে পরিচিত হজমের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পেটব্যথা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হয়ে থাকে। সে কারণে ল্যাকটেজ ইন্টলারেন্ট ব্যক্তিরা গরুর দুধসহ দুধের তৈরি নানান ধরনের খাবার এড়িয়ে চলেন।
এতে একদিকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকলেও, অন্যদিকে তারা বঞ্চিত হন ক্যালসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টিগুণ থেকে। কিন্তু দুধ ছাড়াও এমন কিছু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে, যেগুলো সামগ্রিকভাবে দুধের পুষ্টির জোগান দিতে পারে।
গরুর দুধের বিকল্প যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার—
মটরশুঁটি
দুধের উৎকৃষ্ট বিকল্প সুষম খাবার হচ্ছে মটরশুঁটি। এই সবুজ বীজে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, ফাইবার, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। আর হিমোগ্লোবিন তৈরিতে, হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা এবং চোখের জ্যোতি বাড়ানোসহ ওজন নিয়ন্ত্রণে করে থাকে।
চিনা বাদাম
দুধের বিকল্প হিসাবে আপনি চিনা বাদাম খান। কারণ এতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। পেস্তা, আখরোট, কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়; বেশ উপাদেয়। এ ছাড়া অন্যান্য খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, তামা এবং সেলেনিয়ামের পাশাপাশি আছে ভিটামিন ই, বি-২ ও ফোলেট।
বাদামে থাকা উপাদান দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে অবদান রাখে। এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের অনুপাতে কাঠ বাদাম সবার থেকে এগিয়ে। এক আউন্স কাঠ বাদামে থাকে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
বাঁধাকপি
দুধের বিকল্প হিসাবে বাঁধাকপি বেশ উপকারী। চর্বি, চিনি ও কোলেস্টেরলমুক্ত এবং স্বল্প পরিমাণে সোডিয়াম ও ক্যালরিযুক্ত বাঁধাকপি দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের সেরা উৎস। দুই কাপ কাঁচা বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়াম থাকে প্রায় ১.৮ গ্রাম। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এ সবজি কোষ প্রাচীরের ক্ষয়কে বিলম্বিত করতে পারে।
এ ছাড়া বাঁধাকপিতেও আছে অক্সালেটের মতো যৌগ, যেগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই এই অক্সালেটের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বাঁধাকপি ভালোভাবে রান্না করে নেওয়া উচিত। রান্না ছাড়া সেদ্ধ করে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সালাদ হিসেবেও রাখা যেতে পারে।
ফুলকপি
একই উদ্ভিদ হওয়ায় বাঁধাকপির মতো ফুলকপিও ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। বিপাকের সময় শরীরে নানা ধরনের ফ্রি র্যাডিকেল নামক জৈব অণু তৈরি হয়।
খুব বেশি পরিমাণে এই ফ্রি র্যাডিকেল এতটাই বিষাক্ত যে, তা কোষের ক্ষতি সাধন করে ক্যানসারের দিকে ধাবিত করতে পারে। আর ফুলকপি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই জৈব অণুগুলোর পরিমাণকে মাত্রা ছাড়াতে দেয় না।
মাছ
মানবদেহের কাঠামোকে সুদৃঢ় করে রাখতে প্রয়োজন ছোট মাছের। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর ছোট মাছ আর দুধ একই পরিমাণে ক্যালসিয়ামের জোগান দেয়। ছোট মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ গ্রাম প্রতি ৮.৬ থেকে ১ হাজার ৯০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
এতে রয়েছে ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিঙ্ক, যেগুলো দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি ও রক্তের সুস্থ পরিচালনে অবদান রাখে। গ্রামে ও শহরে অধিক বিক্রীত ছোট মাছগুলোর মধ্যে পুঁটি, কাচকি, মলা-ঢ্যালা ও দারকিনা অন্যতম।
সরষে শাক
শাকসবজিভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস পরিচালনার শুরুটা হতে পারে সরষে শাক দিয়ে। কারণ এতে রয়েছে থায়ামিন (বি-১) নিয়াসিন (বি-৩) এবং পাইরিডোক্সাইনসহ (বি-৬) বি ভিটামিনের এক বিরাট উৎস এ শাক। এরা মূলত হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় কাজ করে। তবে সরষেতে থাকা ভিটামিন কে অংশ নেয় হাড়ের শক্তিবৃদ্ধি করতে এবং ফ্র্যাকচার থেকে রক্ষা করতে।
কাটাছেঁড়ার সময় ধমনীতে ক্যালসিয়ামের প্রাচীর গড়ে রক্তক্ষরণ রোধ হয়। এই প্রাচীর গড়াতে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়, তার জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে ভিটামিন ‘কে’। এক কাপ রান্না করা সরষে শাকে ১.০৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এর সঙ্গে বাঁধাকপি যুক্ত করে তৈরি খাবার দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।
পালংশাক
পালংশাকের প্রধান উপাদান হচ্ছে— ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ও পটাসিয়াম। প্রতি কাপ শাকে ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি বিদ্যমান। দাঁত ও হাড়ের যত্নে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পালংশাক রাখাই শ্রেয়।
এতে থাকা ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি শরীর যথাযথভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারছে কিনা তা নিশ্চিত করে। কম ক্যালোরি থাকায় এটি ওজন কমানোর জন্যও উপযুক্ত। এ ছাড়া এই শাকে আছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা, যেটি ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।